কী হচ্ছে ফেরিঘাটে?

অন্য এক দিগন্ত | May 08, 2021 12:44 pm
মাওয়া পয়েন্টে শনিবার জনতার ঢল

মাওয়া পয়েন্টে শনিবার জনতার ঢল - ছবি : সংগৃহীত

 

ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাওয়ার দুটি ফেরিঘাটে দিবাকালীন ফেরি চলাচল শনিবার সকাল থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হলেও মাওয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে জনতার ঢল এতটুকুও কমেনি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় সংবাদদাতারা। মানুষের চাপ ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতে দুটি ঘাটে শনিবার আপাতত কয়েকটি ফেরি ছাড়া হচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন সংবাদদাতারা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদযাত্রাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রেখেছিল কতৃপক্ষ। তারপরও শুক্রবার ঢাকা ছাড়তে মরিয়া মানুষের ঢল নামে। মাওয়া পয়েন্টে জরুরি ও পন্যবাহী পরিবহন চলাচলের জন্য যে ফেরিগুলো চালু ছিল, শুক্রবার তার কোন কোনটিতে মানুষের চাপে গাড়ি তোলা সম্ভব হয়নি বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে খবর বেরিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতেই ঘোষণা করা হয় মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীতে দিনের বেলা একেবারেই কোন ফেরি চলবে না। শুধু পন্য পরিবহন ও অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য জরুরি যানবাহনের জন্য রাতের বেলায় কিছু ফেরি চালু থাকবে।

মাওয়া পয়েন্ট থেকে স্থানীয় সাংবাদিক মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল বিবিসিকে জানান, মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট থেকে শনিবার ভোর তিনটা থেকে কোনো ফেরি ছেড়ে যায়নি।

এই পথে মূলত বরিশাল বিভাগের সবগুলো জেলা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, খুলনা, মংলা বন্দর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ. সাতক্ষীরা ও নড়াইলের কিছু অংশের সাথে সড়কপথে যাতায়াত করে মানুষ।

উজ্জ্বল বলছেন , নদীর ওপারে বাংলাবাজার ঘাট থেকে ভোররাতে ছেড়ে আসা সাতটি অ্যাম্বুলেন্স-সমেত একটি ফেরি সকাল সাড়ে আটটার দিকে শিমুলিয়াতে এলে ওই ফেরিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন কয়েকশ মানুষ। অবস্থা এমন হয় যে ফেরি থেকে অ্যাম্বুলেন্সগুলো নামানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

প্রায় ৬ শ'র মতো মানুষ উঠে পড়ে। পরে কোনোমতে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে নামানোর পর ফেরিটিকে কিছুটা দূরে গিয়ে নোঙর করে রাখা হয়।

নাসিরউদ্দীন উজ্জ্বল জানাচ্ছেন, ঘাটে ১০ হাজারের মানুষ এখন ভিড় করে আছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে দুটি বড় ফেরিতে করে এদের নদীর পার করিয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে ঘাট কতৃপক্ষ।

মাওয়া পয়েন্টের শিমুলিয়া ঘাট থেকে শুক্রবার অনেক ফেরি ছেড়ে গেছে শুধু যাত্রী নিয়ে, কোনো যানবাহন ওঠানোর জায়গা ছিলো না ফেরিগুলোতে।

ঠিক কেন, কোন যুক্তিতে এদের পার করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে বিআইডাব্লিউটিএ-র কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সাংবাদিক উজ্জ্বল বলছেন, পরিস্থিতি দেখে তার মনে হয়েছে, এদেরকে নদী পার হওয়ার ব্যবস্থা না করে দিলে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

এদিকে, নৌপথ ছাড়াও সড়কে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিভিন্ন যানবাহনে করে মানুষ ছুটছে নিজ জেলার উদ্দেশ্যে। এজন্য তারা চড়া মূল্যে ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাসেও চলাচল করছে বলে সংবাদদাতার জানাচ্ছেন।

এদিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটেও অনেকটা একইরকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে সকাল থেকে।

এই ঘাট দিয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে ফরিদপুরের একাংশ, মাগুরা, নড়াইল, যশোর, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোলসহ কিছু গন্তব্যের লোকজন

শনিবার সকাল ৬টা থেকে এই ঘাট একেবারেই বন্ধ করে রাখে কর্তৃপক্ষ।

তবে ভোররাতে দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে আসা তিনটি ফেরি পাটুরিয়া এসে পৌঁছালে হাজার হাজার মানুষ ফেরিগুলোতে উঠে পড়ে।

এর মধ্যে একটি ফেরি 'মানবিক কারণে' ঘাট কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দেয় বলে খবর দিচ্ছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। অন্য দু'টি ফেরিতে অন্তত চার হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফেরিগুলো নোঙর করা অবস্থাতেই ছিল।

এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি এবং সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার দাবি জানান।

তিনি বলেন, এই এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা লকডাউনে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন পরিবহণ শ্রমিকরা।

"দূরপাল্লার যাত্রীরা বেশি টাকা খরচ করে হয়রানি হয়ে শরীরের উপর চাপ নিয়ে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে এবং যাবে। এটাই স্বাভাবিক", বলছেন মি. খান।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার লকডাউনের মধ্যে যে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল, তার অংশ হিসেবে ফেরিঘাটগুলোও বন্ধ থাকার কথা শুধু জরুরি পরিবহনের জন্য কিছু ফেরি চলাচল করার কথা।

এছাড়া মানুষের গ্রামে ফেরা ঠেকাতে গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে ছুটি কমিয়ে দেয়া এবং চাকরিজীবীদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার মত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু এসব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই বেসরকারি উদ্যোগের অনেক লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল করছিল, যারা অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে অতিরিক্ত যাত্রী তুলছিল।

এরই এক পর্যায়ে গত ৩ মে একটি অতিরিক্ত যাত্রীতে পূর্ণ একটি স্পিডবোট দুর্ঘটনার শিকার হলে ছাব্বিশ জন যাত্রী প্রান হারায়।

বৃহস্পতিবার থেকে জেলা শহরের মধ্যে বাস চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর থেকে দেখা যাচ্ছে অনেকেই দুটি জেলার সীমান্তে গিয়ে যানবাহন পরিবর্তন গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us