২০২৪ সালে খোদ মোদিকে হারাবেন মমতা!
মমতা ও মোদি - ছবি : সংগৃহীত
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে বিজেপিবিরোধী বিশাল সমাবেশ করে তৃণমূল। উনিশে বিজেপিকে দেশ থেকে তাড়াতে হবে, এই প্রচার সামনে রেখে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে ওই দিন নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করে ভারতের বিজেপিবিরোধী নেতানেত্রীদের দেখা গিয়েছিল ব্রিগেডে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে উপযুক্ত মুখ সামনে রাখতে পারেনি বিরোধী জোট। সবচেয়ে বড় কথা বিরোধী জোট নামেই বলা হয়, বাস্তবে সেটি আত্মপ্রকাশ করেনি।
এই পরিস্থিতিতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে বিরোধী জোট গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে জোড়াফুল শিবির। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লাগাতার পশ্চিমবঙ্গে এসে প্রচার করেছেন। রাজ্য বিজেপি নয়, মমতাকে লড়াই করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আর সেখানে তাদের বিপুল হার হয়েছে। তাই একুশের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে এখন মমতা ব্যানার্জি নিঃসন্দেহে বিরোধী জোটের প্রধান মুখ হয়ে উঠলেন।
রোববারের ফলাফলে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সোমবার মমতাকে ফোন করেছেন বিজেপি বিরোধী নেতারা। উদ্ধব ঠাকরে, অখিলেশ সিং যাদব, ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, ভূপিন্দর সিং হুডা, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, নবীন পট্টনায়েক প্রমুখ জাতীয় নেতারা মমতাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সবাইকে একজোট করার কাজ কার্যত শুরু করে দিলো। ফল ঘোষণার পর থেকেই এই বিষয়ে সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।
নির্বাচনে রাজ্যে প্রচারে এসে মোদি-শাহ জুটি নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন মমতাকে। মমতার পাশাপাশি তাদের আক্রমণের নিশানায় ছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। তাই এই পরাজয় রাজ্য বিজেপির নয়, এটা অনেক বেশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরাজয়। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জিতে সামনের লোকসভার আগে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হতে চেয়েছিলেন তারা। কারণ গত কয়েক বছরে একের পর এক রাজ্যে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। যদিও পরে ঘোড়া কেনাবেচা করে বিজেপি ওইসব রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে মানুষ বিজেপিকে পরাজিত করেছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, দিল্লি, ঝাড়খন্ড, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, হরিয়ানা প্রভৃতি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। বিহারে কান ঘেঁষে জয় পেয়েছে বিজেপি তথা এনডিএ। যদিও এখন সেটি নামেই এনডিএ, অধিকাংশ শরিক বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছে।
এই অবস্থায় তৃণমূল মনে করছে, সামনের লোকসভা নির্বাচনে মমতার নেতৃত্বে এখন থেকে বিরোধী জোট গড়ে তুলতে পারলে, বড় সাফল্য পাওয়া যাবে। জোটের মুখ হিসেবে মমতাকে অধিকাংশ মেনে নেবেন। ২৫ বছর এমপি থাকার সুবাদে মমতার সঙ্গে দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। এমনকী বিজেপির বহু নেতা-নেত্রী পর্যন্ত মমতাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করেন। সেই মমতা-ম্যাজিক এবার কাজে লাগাতে তৎপর তৃণমূল। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এখন অনেকটাই কোণঠাসা। দলের হাল ধরার জন্য যোগ্য লোককে পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় মমতা বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিলে সেটি অন্য মাত্রা পাবে বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে। আগামী দিনে ওই ভাবেই এগোতে চাইছে তৃণমূল।
সূত্র : প্রথম কলকাতা