জবাব অবশ্যই দিতে হবে- ইসরাইলকে এবং সেই সাথে এর পৃষ্ঠপোষকদেরেকেও
জবাব অবশ্যই দিতে হবে- ইসরাইলকে এবং সেই সাথে এর পৃষ্ঠপোষকদেরেকেও - ছবি : সংগৃহীত
গাজাকে দুর্বল করে দেয়ার লক্ষ্যে অর্ধশতাধিক বছর ধরে দখল করে রাখা ও এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অবরোধ তথা ব্লকেড কার্যকর করে রেখেছে ইসরাইল। ২১ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনের বসবাস এই গাজা উপত্যকায়। এটি বিশ্বের একটি অন্যতম ঘনবসতি এলাকা। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস ৫০০০ লোকের। এটি ওসলো শহরের চেয়েও ছোট একটি এলাকা, কিন্তু সেখানে বসবাস করে ওসলোর চেয়ে ৩ গুণ বেশি লোক।
২০১২ সালে জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালে গাজা মানুষের বসবাসযোগ্যতা হারাবে। কার্যত এখন সেখাসে সে অবস্থাই বিরাজ করছে। এই চরম অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য এরা জীবন বাজি রেখে প্রতিবাদ বিক্ষোভ জারি রেখেছে। সেখানকার কিশোরেরা আজ ভয়ভীতি মাথায় নিয়ে প্রতিদিনের জীবন যাপন করছে। এদের নেই প্রয়োজনীয় খাবার, স্বাধীনভাবে চলার অধিকার। সেখানকার প্রতি ১০ জনে ৭ জন শরণার্থী: অর্ধেক মানুষ যুদ্ধে আঘাত প্রাপ্ত, ৭০ শতাংশ স্কুলে চালাতে হয় ডাবল শিফট: বেকারত্বের হার ৪২ শতাংশ, ৮৪ শতাংশ ফিলিস্তিনির প্রয়োজন মানবিক সহায়তা, ৪১ শতাংশ বেঁচে আছে কম খেয়ে, ভূগর্ভের ৯৮ শতাংশ পানি খাওয়ার অনুপযোগী, দিনে বিদ্যুৎ থাকে ২-৪ ঘণ্টা। এমনি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেও নেই স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার। এমনি প্রেক্ষাপটে আজকাল অনেকেই গাজা উপত্যকাকে যথার্থ কারণেই অভিহিত করে থাকেন বিশ্বের বিশ্বের বৃহত্তম ‘ওপেন-এয়ার প্রিজন’ তথা ‘খোলা আকাশের নিচে এক কারাগার’ অভিধায়।
এমন আরেকটি ‘ওপেন-এয়ার-প্রিজন রয়েছে ফিলিস্তিনে। অনেকের কাছে সেটা জানা নেই। কারণ, সেখানে চলছে ভিন্ন ধরনের এক অবরোধ। সেখানে বসবাসকারী প্রত্যেক ফিলিস্তিনির রয়েছে ফিলিস্তিনি পরিচয়সত্তার কাগজপত্র। ফিলিস্তিনিরা সেখানে নিজ বাড়িতে কারাগারসম বন্দী। ইসরাইল নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাদের ওপর। নেই তাদের স্বাধীনভাবে চলার অধিকার। বিশ্বের প্রতিটা দেশ ও রাষ্ট্রনায়কেরা এই পরিস্থিতির কথা ভালো করেই জানেন। অনেক দেশই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখায় ইসরাইলকে সক্রিয় আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। সাথে থাকে যতসব কুপরামর্শ। তবে প্রবল সমালোচনার মুখে বিশ্বনেতারা ফিলিস্তিনের পক্ষে লিপ-সার্ভিস দেয়ার কাজটি করে থাকেন। তা করেন নিতান্তই মুখ রক্ষার কারণে। বাকি দুনিয়া ফিলিস্তিনকে এড়িয়ে চলে। যার ফলে দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনকে দখলে রেখে ইচ্ছেমতো শাসন-শোষণ নির্যাতন-নিপীড়ন ও ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনি নিধন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা ইসরাইলের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত হয় ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর খেয়াল-খুশির ওপর। নিরাপত্তা বাহিনী এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে শত শত চেকপয়েন্ট, গেট, কৃত্রিম বাধা, নিষিদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন সড়ক। আছে ৭০০ কিলোমিটার লম্বা ইসরাইলিদের কথিত ‘সেপারেশন ওয়াল’, দুনিয়াবাসীদের কাছে যা পরিচিত ‘অ্যাপারথেড ওয়াল’ নামে। অতএব সহজেই অনুমেয় পশ্চিম তীরের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে ইচ্ছুক একজন ফিলিস্তিনির কাছে বিষয়টি কতটুকু দুঃসহ। ইসরাইল কর্র্তৃপক্ষের দেয়া কাটা তারের বেড়া প্রসঙ্গে একজন ফিলিস্তিনি মেষপালকের অভিযোগ : ফিলিস্তিনি শহর হিজমার কাছের একটি পাহাড়ে তিনি তার মেষগুলোকে ঘাস খাওয়ান। ইসরাইলি কর্র্তৃপক্ষ পাহাড়ের মাঝখান বরাবর কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছে। এই কাঁটা তারের কারণে তার মেষ প্রায়ই আঘাত পায়। এখানে তার কিই বা করার আছে? এ ছাড়া মেষ চড়ানোর মতো আর কোনো জায়গাও নেই।
ইসরাইলি মানবাধিকার গোষ্ঠী বি’সেলেম-এর দেয়া তথ্য মতে- ২০১৭ সালের জানুয়ারির দিকে পশ্চিম তীরে স্থায়ী চেকপয়েন্টের সংখ্যা ছিল ৫৯টি এবং এর আশপাশে ছিল আরো ৩৯টি। এগুলোর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের গাজার বাইরে যাওয়া-আসা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়াও ছিল আরো অনেক ‘ফ্লাইং চেকপয়েন্ট’। এগুলো ইসরাইলি সামরিক বাহিনী যখন তখন সড়কপথে স্থাপন করে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার-বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ইউএসওসিএইচএ)-এর দেয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালে জানুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিম তীরের সড়কগুলোতে বহাল ছিল ৪,৯২৪টি চেকপয়েন্ট। এগুলো ছাড়াও অন্যসব প্রতিবন্ধকতা যেমন : ময়লার স্তূপ, কংক্রিট ব্লক ও গেট স্থাপন করা হয়েছে পশ্চিম তীরের প্রায় সবগুলো গ্রামের প্রবেশপথে।
এগুলোর বাইরে তথাকথিত এরিয়া সি-তে ফিলিস্তিনিদের বাধা দেয়া হয় তাদের জমিতে প্রবেশ করতে, যদিও এ জমির মালিক এরাই। এই ভূখণ্ডটি চিহ্নিত করা আছে ওসলো চুক্তিতে। এখানেই বেশির ভাগ ইসরাইলিরা অবৈধ ইহুদি বসতি গড়ে তুলেছে এবং এখনো তুলছে। এটি পশ্চিম তীরে ৬১ শতাংশ স্থানজুড়ে বিস্তৃত। উদাহরণত, বেথেলহেমের কাছের ২৯১ হেক্টরর জমি ছিল ফিলিস্তিনিদের ওয়াদিফুকিন গ্রামের মানুষের। এর মধ্যে ২৭০ হেক্টর চিহ্নিত করা হয়েছে ‘এরিয়া সি’ হিসেবে। এই ফিলিস্তিনিরা জীবন যাপন করত মূলত কৃষিকাজ করে। তারা এখন সেই স্থানে প্রতিদিনের প্রবেশাধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। প্রকৃতপক্ষে এখন তাদের জমিতে কাজ করতে যেতে হলে ইসরাইলি পারমিটের প্রয়োজন হয়।
পশ্চিম তীর ছেড়ে অন্য স্থানে যেতে হলে ফিলিস্তিনিদের পারমিট নিতে হয়। এসব পারমিট প্রধানত দেয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানধারীদের (বড় বড় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের) যাদের ভালো আর্থিক অবস্থানের রেকর্ড আছে অথবা আছে রাজনৈতিক পরিচিতি। আবার এ পারমিট পায় অধিকতর গরিব ফিলিস্তিনিরা, যারা ইসরাইলিদের জোগান দেয় অতি প্রয়োজনীয় সস্তা শ্রম, বিশেষ করে নির্মাণ কাজে। অবশিষ্ট ফিলিস্তিনি জনগণ পশ্চিম তীর ছেড়ে যেতে পারে শুধু মেডিক্যাল পারমিট নিয়ে কিংবা পারিবারিক প্রয়োজনের সময়। তবে এ ধরনের পারমিট পাওয়া যায় খুবই কম। সহজেই এসব পারমিটের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। ২০১৭ সালে ৭ লাখ ফিলিস্তিনি (ইসরাইলের ফিলিস্তিনি শ্রমিকসহ) আবেদন করা হয় পশ্চিম তীর ছেড়ে যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে ৫ লাখ ৬০ হাজারকে পারমিট দেয়া হয়। বাকি আবেদনগুলো প্রত্যাখাত হয়।
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে সহজেই অনুমেয়, ফিলিস্তিনিদেরওপর আরোপিত এসব বিধিনিষেধ তাদের অর্থনীতির ওপর কী ধরনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাংকের দলিলে দেয়া প্রাক্কলিত এক হিসাব মতে, টাউন থেকে এক মিনিটের রাস্তা দূরের একটি চেকপয়েন্ট একজন ফিলিস্তিনির এমপ্লয়েবিলিটি কমিয়ে দেয় ০.৫ শতাংশ এবং তার ঘণ্টায় মজুরি কমে ৫.২ শতাংশ। ২০০৭ সালে সম্মিলিতভাবে পশ্চিম তীরের চেকপয়েন্টগুলোর প্রভাবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা সে বছরের জিডিপির ৬ শতাংশ। আরেকটি বিশ্বব্যাংক সমীক্ষায় দেখা গেছে-২০১১ সালে এসব বিধিনিষেধ স্থনীয় অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ ৩৪০ কোটি ডলার বা সে বছরের জিডিপির ৩৫ শতাংশ। এবং যে কেউ অবাক হবেন- ইসরাইলি দখলদারিত্বের সম্মিলিত ধ্বংসাত্মক প্রভাবে ২০১৪ সালে ফিলিস্তিনিদের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৯৪৬ কোটি ডলার বা সে বছরের জিডিপির ৭৪ শতাংশ। এসব গেল শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব। মানবিক ক্ষতির হিসাব তো রয়ে গেছে এর বাইরে। সে হিসাব তো সীমাহীন।
পশ্চিম তীরে নিয়মিত এমন সব লোকের দেখা পাওয়া যায়, যারা জীবনে একবারও জেরুসালেম যেতে পারেনি, যদিও বসবাস করে জেরুসালেম থেকে এক ঘণ্টার রাস্তা দূরে। এ ছাড়া আরো অনেক এমন ফিলিস্তিনির দেখা মিলবে যাদের রয়েছে আমেরিকান অথবা ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট। এরা কোনো ভিসা ছাড়াই বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। কিন্তু তার বসবাসের এলাকা থেকে মাত্র বিশ কিলোমিটার দূরের জাফা যাওয়ার ভিসা তিনি পাবেন না।
একজন ফিলিস্তিন জানান- তার তিনজন বন্ধু রয়েছে, যারা বিদেশী পাসপোর্টধারী (ফ্রান্স, আমেরিকা ও রাশিয়ার)। কিন্তু আমি কখনোই তাদের জেরুসালেমের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে আনতে পারিনি। এরা তিনজনের কারোরই ইসরাইল বা ফিলিস্তিনে প্রবেশের জন্য কোনো কাগুজে ভিসার প্রয়োজন হয় না, ঠিক যেমনটি প্রয়োজন হয় না আরো শত শত হাজার-হাজার ফরাসি, আমেরিকান ও রুশ নাগরিকের, যারা প্রতি বছর এই স্থান সফর করেন। কিন্তু ইরাইলিরা যদি জানে তাদের ফিলিস্তিনি আইডি রয়েছে, তখন ইসরাইলিরা তাদের ব্লক করে দেয়।
পশ্চিম তীরের বাইরে না যেতে পারার পাশাপাশি এর ভেতরে বেড়ানোটাও ফিলিস্তিনিদের জন্য একটা দিবাস্বপ্নের মতো। তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে-সেখানে যখন-তখন চেকপয়েন্ট বসানো হয়। এজন্য সরকার কখনোই কোনো কারণ উল্লেখ করে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা করা হয় বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের এলাকায় চলাচলকে সুবিধাজনক করে তোলার জন্য। আর তা করা হয় ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ সৃষ্টির বিনিময়ে। কিংবা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর ওপর ধ্বংসাত্মক ধরনের সম্মিলিত শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে। এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুটি উদাহরণ হচ্ছে রামাল্লাহর উত্তরাঞ্চলে প্রবেশের ‘বিট এল’ চেকপয়েন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশের জাবা চেক পয়েন্ট। জনৈক মানার বসবাস করেন রামাল্লাহ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের ডির দিবওয়ান গ্রামে। তাকে গড়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে চাকরির স্থলে যেতে হয়। কিন্তু তাকে আরো অনেক বেশি সময় খরচ করতে হয়, যখন বিট এল চেকপয়েন্ট নন-ভিআইপি কার্ডধারীদের জন্য বন্ধ থাকে। আর এমনটি প্রায়শই ঘটে। তবে তিনি বিকল্প রুটে ঘুরে আসলে ১০ মিনিট সময় বাঁচাতে পারেন। তবে সেসব রাস্তা শুধু ইসরাইলদের জন্য নির্ধারিত।
রামাল্লাহর উত্তর-পশ্চিমে ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে খ্রিষ্টানদের শহর আবুদ। সেখানে প্রতিদিন যাতায়াত করেন জনৈক ড্যাভিড। তিনি কাজে যেতে প্রায়ই দেরি করেন গেট বন্ধ থাকার কারণে। ডির ইবজি শহরের ঠিক বাইরের এই গেটে কোনো লোক থাকে না। যখন-তখন বন্ধ করে দেয়া হয় এই গেট। এ ছাড়াও রয়েছে আরো বড় বড় চেকপয়েন্ট। যেমন : কন্টেইনার এবং জাতারা, যা পুরোপুরি অচল করে দিতে পারে পশ্চিম তীরকে। যখন কন্টেইনার বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন বেথেলহেম ও হেব্রনের মতো বড় বড় শহরসহ পশ্চিম তীরের দক্ষিণাংশের এক-তৃতীয়াংশের জনগণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রামাল্লাহ ও উত্তরাংশ থেকে। একইভাবে, জা’তারা চেকপয়েন্ট দিয়ে পুরোপুরি ব্লক করে দেয়া যায় পশ্চিম তীরের পুরো উত্তরাঞ্চল থেকে আসা-যাওয়া। বন্ধ হয়ে যায় নাবলুস, তুলকারেম ও জেনিনের মতো বড় বড় শহরে আসা-যাওয়া।
জেনিনের কাছেই রয়েছে একটি গ্রিক অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের শহর আল-জাবাববিডা। সে শহরের খ্রিষ্টান পরিবারগুলোকে বড়দিনের উৎসবে যোগদানের জন্য ৮৫ কিলোমিটার দূরের বেথেলহেমে যেতে সমস্যায় পড়তে হয় এই কন্টেইনার ও জাতারা চেকপয়েন্টের কারণে। অপর দিকে, বিদেশী তীর্থযাত্রীরা বেথেলহেমে পৌঁছুতে পারে আলাদা ৮টি সড়কপথে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জেরুসালেম হয়ে। আবার নির্দিষ্ট দিনে বিদেশ থেকে বেথেলহেমে তারা আসতে পারে বিমানে করে। তারা আসে ফিলিস্তিনি বড়দিনের উৎসব পালন করতে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের জন্য চেকপয়েন্টগুলো ও অন্যান্য নানা বাধাগুলো ইসরাইলিদের কাছে যথেষ্ট নয়। সে জন্য ইসরাইলিরা বিকল্প সড়ক তৈরি করেছে ফিলিস্তিনিদের জন্য। অবশ্য আরো রয়েছে আল-মুয়া’রাজাত ও ওয়াদি আল-নার মহাসড়ক, যা যথাক্রমে সংযোগ গড়ে তুলেছে উত্তরাঞ্চল ও জর্দান উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরের উত্তরাংশের সাথে। আছে বছর দুয়েক আগে খুলে দেয়া ‘রুট ৪৩৭০’। সাধারণত এটি পরিচিত ‘অ্যাপারথেড রোড’ নামে, যা সংযুক্ত করেছে আনাতা ও আজ্জাইম গ্রমের মধ্যে। এই রোড়ে রয়েছে কংক্রিটের তৈরি সেপারেটিং ওয়াল, ইহুদি গাড়িচালকদের আলাদা করে রাখে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে। উল্লিখিত সব উপসড়ক করা হয়েছে ইসরাইলিদের সড়কগুলোকে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে দূরে রাখতে।
এই রাস্তা বন্ধ করা, আলাদা করা, বিচ্ছিন্ন করা, বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রক্রিয়া বরাবর অপরিবর্তনীয়। এর মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের এক ধরনের দম বন্ধকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়। অনেকেই উপায়ান্তর না দেখে বলে থাকেন- যেহেতু অনেক ফিলিস্তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে পারছে না, তাদেরকে নিজভূমের অন্য কোথায়ও নিয়ে গিয়ে স্বস্তিতে শ্বাস ফেলার সুযোগটুকু করে দেয়া হোক। কিন্তু বিশ্বের বিবেকবান মানুষের প্রশ্ন : কেনো ফিলিস্তিনিরা দশকের পর দশক ধরে ইসরাইলি দখলদারের অধীনে থাকবে, কোন যুক্তিতে? কেনো জাতিসঙ্ঘ ও বিশ্ব মোড়লেরা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সহায়তার বদলে নানা কৌশলী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে; গোপনে ও প্রকাশ্যে? কেনো বিশ্বমোড়লদের চোখের সামনে একের পর এক তৈরি হচ্ছে অ্যাপারথেড ওয়াল? কেনো ফিলিস্তিনিদের গ্রাম দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইসরাইলি ইহুদিদের জন্য অবৈধ বসতি, কেনো ফিলিস্তিনিদের বাধ্য করা হচ্ছে জনবিচ্ছিন্ন স্থানে বসবাস করতে, তাদের ওপর চালানো হচ্ছে অমানবিক বর্ণবাদী নির্যাতন-নিপীড়ন? কেনো দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের? কেনো এখনো ফিলিস্তিন পাবে না একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা? কেনো বিশ্ব মোড়লেরা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ইসরাইলদের সহযোগিতা করে চলেছে ফিলিস্তিনি জাতি নিধনে? কেনো ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনকে বানিয়ে রেখেছে খোলা আকাশের নিচে এক কারাগার? একদিন এসব প্রশ্নের জবাব অবশ্যই দিতে হবে; ইসরাইলকে এবং সেই সাথে এর পৃষ্ঠপোষকদেরেকেও।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট