ভারতে করোনার ভয়াবহ প্রজাতির সন্ধান
ভারতে করোনার ভয়াবহ প্রজাতির সন্ধান - ছবি : সংগৃহীত
ভারতজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক বাড়ছে। দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুহারের আশঙ্কায় ধীরে ধীরে লকডাউনের পথে হাঁটছে বিভিন্ন রাজ্যে। ভয়াল এই পরিস্থিতির মধ্যেই কার্যত দুঃসংবাদ নিয়ে এলো সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বা সিসিএমবি (CCMB)। ভারতের দাক্ষিণাত্যের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান সন্ধান পেয়েছে মারণ কোভিড ভাইরাসের এক নতুন প্রজাতির।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, এই নতুন প্রজাতির ভাইরাস, পূর্বেকার ভাইরাসের চেয়ে অন্তত ১৫ গুণ বেশি শক্তিশালী। মানব শরীরের ক্ষতি করার প্রবণতার দিক থেকেও এগিয়ে এই নয়া ভাইরাস। নতুন এই প্রজাতির নাম N440K, যা পূর্ববর্তী SARS-COV-2-এর B.1617-এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে।
তবে আশার কথা এই যে এই নতুন প্রজাতির ভাইরাস এখনো সারা ভারতে জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। বরঞ্চ নিজেকে অঞ্চল বিশেষে সীমিত করে রেখেছে। নতুন এই প্রজাতির নমুনা পাওয়া গেছে দাক্ষিণাত্যের অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কর্ণাটকে। তেলঙ্গানার সীমান্তবর্তী মহারাষ্ট্রেও এই ভাইরাসের কিছু নিদর্শন মিলেছে। এছাড়া পাওয়া গিয়েছে ছত্তিসগঢ় রাজ্যেও। অন্ধ্রপ্রদেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ সব চেয়ে বেশি।
বিজ্ঞানীমহলের দাবি, এই ভাইরাস পূর্বেকার প্রজাতির ভাইরাসের চেয়ে অন্তত দশগুণ বেশি শক্তিশালী। অন্ধ্রপ্রদেশের জেলার কোভিড স্পেশালিস্ট অফিসার ও অন্ধ্র মেডিকেল কলেজের (Andhra Medical College) প্রিন্সিপাল পি. সুধাকর P. Sudhakar), দ্য হিন্দুকে (The Hindu) দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমরা দেখছি এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসের ইনকিউবেশনের সময় খুব কম। আর এই ভাইরাস কর্তৃক রোগ ছড়ানোর প্রবণতা অনেক বেশি দ্রুতগামী। কোভিড আক্রান্ত রুগীদের সর্বোচ্চ দুটি স্তর হয়। হাইপোক্সিয়া ও ডিসপেনিয়া। পূর্ববর্তী প্রজাতি দ্বারা কোনো রোগী আক্রান্ত হলে এই সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে বেশ সময় লাগত। কিন্তু এই নতুন প্রজাতির ভাইরাস অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করে। ফলত একজন রোগী আক্রান্ত হওয়ার তিন থেকে চার দিনের ভিতরেই সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এর জন্য শয্যা এবং আইসিইউতে সঙ্কট তৈরি হচ্ছে।'
CCMB-এর দিব্যা তেজ সোওপতি (Divya Tej Sowpati) ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন 'সময়ের সঙ্গে B.1617 ভাইরাসের দ্রুত উত্থান কোভিড মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই ভাইরাসের উত্থান লক্ষ্য করা গিয়েছে।' তবে দাক্ষিণাত্যের কেরল রাজ্যে এই নতুন ভাইরাসের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'আমাদের কাছে এখনো সম্পূর্ণ তথ্য নেই, তবে কেরলে B.1617 ভাইরাসের প্রকোপ বেশি। নতুন N440K ভাইরাস কেবলমাত্র ২০ শতাংশের শরীরে পাওয়া গিয়েছে।'
উজালা সিগনাস হাসপাতাল গোষ্ঠীর (Ujala Cygnus Group of Hospital) তরফ থেকে শুচিন বাজাজ (Shuchin Bajaj) বলেছেন, 'আমরা নতুন ধরনের কোভিড সিম্পটম লক্ষ্য করছি। রোগীদের অনেক ক্ষেত্রেই জ্বর গায়ে ব্যথা, শুষ্ক কাশির সঙ্গে চোখে কনজাংটিভাইটিস গলা শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ধরার মতো রোগ হচ্ছে।'
তবে এত খারাপের মধ্যেও ভালো খবরও আছে। বিজ্ঞানীদের দাবি নয়া এই N440K অচিরেই সরে যাবে। তার জায়গায় B.167 ও B.117 ভাইরাস দেখা যাবে। যা N440K-এর চেয়ে কম ক্ষতিকর।
সূত্র : নিউজ ১৮