তৃণমূলীদের দলে নিয়েই এমন পরাজয় বিজেপির?
অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত
বিজেপি এবার ধরেই নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের এবারের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে। তবে অনেক হিসেব–নিকেশ, অনেক পরিকল্পনা করেও কাঙ্ক্ষিত জয়ের কাছাকাছিও যেতে পারেনি গেরুয়া শিবির। তাই ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পরে কেন এমন হলো? তা নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছিলেন দলের অন্যতম নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এবার সেই রিপোর্ট নিয়ে দলের অন্দরে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫টি কারণ দেখছেন রাজ্য নেতারা। মমতা ব্যানার্জির প্রতি রাজ্যবাসীর আস্থায় কুঠারাঘাত হানতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে জেপি নড্ডা, পশ্চিমবঙ্গে পড়ে থেকেও মানুষের মন জয় করতে পারেননি। কেন?
এক, মুখ্যমন্ত্রী মুখের অভাব বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রচারে গিয়ে মুখ তুলে ধরতে পারেননি। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা বারবার পশ্চিমবঙ্গের ‘ভূমিপুত্র’–ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বললেও নির্দিষ্ট কারো নাম বলতে পারেননি। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার মতো সম–যোগ্যের কোনো প্রার্থীকে সামনে আনতে পারেননি তারা। শাসকদলের নেতাদের নিজেদের দলে টানা থেকে তোলাবাজি, টেট দুর্নীতি, আমফান দুর্নীতিকে তুলে ধরলেও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
দুই, ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হেঁটে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ভোটারদের টার্গেট করেছিল বিজেপি। তা দিয়েই জয়ের অঙ্ক কষেছিল তারা। কিন্তু ওই কৌশল কাজে আসেনি। আর বিজেপিকে রুখতে একযোগে তৃণমূল কংগ্রেসকে জেতানোর চেষ্টা করেছে সব ধর্মের মানুষ। আবার বড় বেশি নির্ভরতা ছিল কেন্দ্রীয় নেতাদের উপরে। যা স্থানীয় স্তরের ইস্যুগুলোকে কাজে লাগাতে পারেনি।
তিন, ক্ষমতায় আসার যে লক্ষ্য বিজেপি স্থির করেছিল সেটা ছিল লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপরে। তাছাড়া লক্ষ্যটা ছিল দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেকটাই বেশি। তারপর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে বারবার সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ওই ‘বহিরাগত’ কটাক্ষের পালটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। বাইরের রাজ্যের মন্ত্রীরা পশ্চিমবঙ্গের আবেগ, ভাষা, সংস্কৃতি বোঝেন না। যেটা কাজ করেছে একুশের নির্বাচনে।
চার, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে মুসলিম ভোট এককাট্টা হলেও হিন্দু ভোটের সিংহভাগ ঝুলিতে টানা যায়নি। দুর্নীতিতে বিদ্ধ তৃণমূলীদের দলে টানাও বুমেরাং হয়েছে। তারকাদের নিয়ে দল ভারী করেও বিশেষ লাভ হয়নি। মানুষের কাছে ক্রমাগত বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব তৈরি হয়েছে।
পাঁচ, বিজেপিতে ‘আদি ও নব্য’ বিবাদ চরম আকার নেয়। দলের পুরনো নেতা–কর্মী, সমর্থকরা প্রাধান্য পায়নি। তাই তারা মাঠে নেমে কাজ করেননি। আবার ভোটটাররা ভালো চোখে দেখেনি বিষয়টিকে। একই রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, রাজ্যের সর্বত্রই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক ভুল ছিল। আর নির্বাচন কমিশন থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী, সিবিআই, ইডি- সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। নিজেদের মতো করে তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এই দাবিও সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করেছে।
ছয়, নির্বাচনের আগে টানা পেট্রোল–ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের দামবৃদ্ধি, দিল্লিতে কৃষক বিক্ষোভের মধ্যে বাংলার কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলাও বিজেপির বিরুদ্ধেই গেছে। তাছাড়া বারবার এত আসনে জিতে গিয়েছি বলে যে দাবি করা হচ্ছিল ওই মাইন্ডগেমও কাজ করেনি।
হিন্দুস্তান টাইমস