তদন্তে নতুন মোড়
মোসারাত জাহান মুনিয়া - ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর গুলশানে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সরকারদলীয় হুইপ ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল চৌধুরী শারুনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে এ আবেদন করেন। এ ঘটনার পর মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। এতদিন কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চালানো হচ্ছিল। কিন্তু নতুন অভিযোগের পর তদন্তে নতুন মোড় নিচ্ছে। মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে কলেজছাত্রী মুনিয়ার সাথে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি, হুইপপুত্রসহ বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথে পরিচয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ। মুনিয়া কিভাবে ঢাকায় আসলেন, দেশের উচ্চপর্যায়ের শিল্পপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও তাদের সন্তানদের পরিচিত হলেন সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের ধারণা এসব বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উঠে এলে মুনিয়ার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন আরো সহজ হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, নিহত মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান গতকাল দুপুরে তার বোনকে হত্যার দায়ে শারুনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদির জবানবন্দী রেকর্ড করে নথি পর্যালোচনা করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শারুনের সাথে মুনিয়ার কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। এর সূত্র ধরে শারুনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে মুনিয়ার আত্মহত্যার ঘটনায় সরকারদলীয় হুইপ ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরীকে অভিযুক্ত করে আদালতে হত্যার অভিযোগ এনে মামলার আবেদন করলেন মুনিয়ার বড় ভাই। তার ধারণা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তার বোন মুনিয়াকে হত্যা করা হতে পারে।
এ দিকে নতুন করে শারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় তদন্তে মোড় নিতে হচ্ছে পুলিশকে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৃত্যুতে তার বোন নুসরাত জাহান গুলশান থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলা করেন। ওই মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে একমাত্র আসামি করা হয়। পুলিশ সেই সূত্র ধরে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু গতকাল আবার মুনিয়ার ভাই একই মৃত্যুর ঘটনায় হত্যার অভিযোগ এনে হুইপপুত্র শারুনকে আসামি করার আবেদন করেছেন। যার কারণে তদন্তের মোড় কিছুটা ঘুরিয়ে দিতে হচ্ছে। যার সূত্র ধরে মুনিয়ার ঢাকায় আসা, বসুন্ধরার এমডির সাথে পরিচয় ও সম্পর্ক, শারুনের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই মৃত্যুর সাথে আরো কেউ জড়িত রয়েছে কি না, থাকলে সেটা কি ধরনের সম্পর্ক সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ আরো জানায়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুনিয়ার সাথে আরো কয়েকজনের সম্পর্কের কথা উঠে আসছে। যেসব বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসলে ওই ব্যক্তিদের সাথে কি ধরনের বা কতটুকু সম্পর্ক ছিল। নাকি সবই গুজব তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন রাতেই মুনিয়ার বড় বোন বাদি হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। একই ঘটনায় গত ২ মে নিহত মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান শারুনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে মামলার আবেদন করেন।