আফগানিস্তান : এশিয়ার হৃৎপিণ্ডে রক্তাক্ত ভূমি

এম আর রাসেল | May 02, 2021 08:49 pm
আফগানিস্তান : এশিয়ার হৃৎপিণ্ডে রক্তাক্ত ভূমি

আফগানিস্তান : এশিয়ার হৃৎপিণ্ডে রক্তাক্ত ভূমি - ছবি : সংগৃহীত

 

আফগানিস্তান দেশটির নাম শুনলেই যুদ্ধ বিগ্রহের চিত্রই ভেসে উঠে। দেশটিকে এশিয়ার হৃৎপিণ্ড বলা হয়। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান এই শব্দবন্ধের মধ্যেই ফুটে উঠে৷ মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়া, উত্তর এশিয়ার মাঝখানে অবস্থিত ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটারের দেশ আফগানিস্তান। আল্লামা ইকবাল জাভিদনামায় লিখেছেন, 'এশিয়া মানবদেহের মতো- পানি আর কাদায় তৈরী, আর আফগান জাতি হলো ওই দেহের হৃদপিণ্ড।'

এশিয়ার হৃৎপিণ্ডখ্যাত এ দেশটি অনেক দিন ধরেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ব্যাটল ফিল্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একসময়ে দেশটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও রুশ সাম্রাজ্যের প্রভাব বিস্তারের প্রধান ময়দান হয়ে উঠেছিল। জন্ম হয়েছিল বিখ্যাত গ্রেট গেমের। হাল আমলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রধান ক্ষেত্র হয় উঠেছিল দেশটি। সর্বশেষ দেশটি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে নতুন করে আলোচনায় আসে।

সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? আদৌ কি দেশটিতে শান্তি ফিরবে? এমন নানা প্রশ্ন আকাশে বাতাসে ডানা মেলেছে? প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা খুঁজব। তার আগে চলুন দেশটির ইতিহাসের উপর এক নজরে চোখ বুলিয়ে আসি। বর্তমানকে বুঝতে হলে অতীত পানে তরী বাইতেই হবে।

আফগানিস্তানে প্রাচীন অনেক সভ্যতায় বিকাশ লাভ করেছিল। মেসোপটেমিয়া, গ্রিক, পারস্য, সিন্দু সভ্যতার যুগ পেরিয়ে আধুনিক কালে আরব সংস্কৃতির সাথে মিশে গেছে। বুঝতেই পারা যায়, দেশটির ইতিহাসের আকার কত বৃহৎ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল দেশটির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচিত হয়নি। মুজতবা আলী দেশটির ইতিহাসকে 'অরক্ষণীয়া কন্যা'র সাথে তুলনা করেছেন। আবার দেশটির ইতিহাস রচনাকে কঠিন বলেও মন্তব্য করেছেন।

কঠিন বলার কারণটা তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'দেশটির উত্তরভাগের বলখ-বদশখানের ইতিহাস তার সীমান্ত নদী আমুদরিয়ার ওপারের তুর্কিস্তানের সঙ্গে, পশ্চিমভাগ অর্থাৎ হিরাত অঞ্চল হিরাতের সঙ্গে, পূর্বভাগ অর্থাৎ কাবুল, জালালাবাদ ভারতবর্ষ ও কাশ্মীরের সঙ্গে মিশে নানা যুগে নানা রঙ ধারণ করেছে। আফগানিস্তানের ইতিহাস না জেনে ভারতবর্ষের ইতিহাস লেখবার জো নেই, আফগান রাজনীতি না জেনে ভারতের সীমান্ত প্রদেশ ঠাণ্ডা রাখার কোনো মধ্যমনারায়ণ নেই।' লেখকের এই মন্তব্য যে কতটা প্রাসঙ্গিক বর্তমান সময়েও তা বুঝতে পারা যায়।

মুজতবা আলী তার দেশে বিদেশে বইতে লিখেছেন, 'আফগানিস্তানের প্রাচীন ইতিহাস পোঁতা আছে সে দেশের মাটির তলায়, আর ভারববর্ষের পুরাণ মহাভারতে। ইতিহাস গড়ার জন্য মাটি খুঁড়ার ফুসরত আফগানের নেই, মাটি যদি সে নিতান্তই খোঁড়ে তবে সে কাবুলি মন-জো-দড়ো বের করার জন্য নয়- কয়লা খনি পাওয়ার আশায়।'

আসলেই তো ইতিহাস রচনার ফুসরত আফগানিদের নেই। দশকের পর দশক জুড়ে দেশটি যুদ্ধ করেই যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য দেশটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরাশক্তিগুলোর দেশটিকে নিয়ে আগ্রহের কারণ যে এই সম্পদ তা সহজেই অনুমেয়। জানিয়ে রাখি, আফগানিস্তানকে বলা হয়, 'The Saudi Arabia of Lithium'.

বহু যুগ ধরে ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তান নানাভাবে পরস্পর যুক্ত ছিল, পারস্যের সাথেও কোনো সীমান্তভূমি ছিল না। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলগুলোর সাথে আফগানিস্তানের ইতিহাসের গভীর যোগ আছে তা বুঝতে পারা যায়। মৌর্য পূর্ববর্তী যুগ থেকে শুরু করে মোগল সাম্রাজ্যের পুরো সময় জুড়ে ভারতবর্ষের প্রতিটি ঘটনায় আফগানিস্তানের সংযোগ রয়েছে।

সিকান্দার শাহের সিন্দু জয়, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজ্য প্রতিষ্ঠা, বৌদ্ধধর্মের প্রসারের জন্য অশোক কর্তৃক মাধ্যন্তিক নামক শ্রমণকে আফগানিস্তানে প্রেরণ, শক ও ইন্দো-পার্থিয়ান্দের যুদ্ধ, সেন্ট টমাসের দ্বারা হিন্দুদের খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ, কুষান সাম্রাজ্যের উত্থান, গান্ধার শিল্পের বিকাশ, ফা হিয়েনের ভারতবর্ষ ভ্রমণ, হুণ ও আফগানদের সংমিশ্রণে রাজপুত বংশের সূত্রপাত, হিউয়েন সাং এর ভারত ভ্রমণ, ইয়াকুব বিন লায়েরসে কাবুল দখল, আফগানিস্তানের শেষ হিন্দু রাজার কাশ্মীরে আগমন, মাহমুদ, আল বিরুনী, আমীর খসরুসহ সর্বশেষ আমানউল্লা পর্যন্ত নানা ঘটনার মাঝেই রয়েছে আফগানিস্তানের ইতিহাস।

এসব কারণে লেখক মন্তব্য করেছেন, 'আফগানিস্তানের তুলনায় সুইজারল্যান্ডের ইতিহাস লেখা ঢের সোজা- যদিও সেখানে তিনটে ভিন্ন জাত আর চারটে ভাষা।'

আধুনিক আফগানিস্তানের ভিত স্থাপন করেছিল দুররানি সাম্রাজ্য। নাদির শাহের দেহরক্ষী আহমদ খান আবদালী এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। আবদালীকে আফগান গোত্রপতিরা শাহ নির্বাচিত করে। তিনি দুররানি উপাধি গ্রহণ করেন। দুররানি শব্দের অর্থ 'pearl of pearls'. এজন্য তাকে আহমদ শাহ দুররানি বা আহমদ শাহ আবদালি নামেও ডাকা হয়।

আফগানিস্তানে তিনি আহমদ শাহ বাবা কিংবা বাবা-ই-আফগান নামেও পরিচিত। তিনি হলেন আধুনিক আফগানিস্তানের জনক। ১৮ শতকে উসামানিয়া সাম্রাজ্যের পর দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম সাম্রাজ্য ছিল। এর বিস্তৃতি ছিল আমু দরিয়া থেকে আরব সাগর পর্যন্ত। আহমদ শাহ দুররানি সর্বপ্রথম ১৭৪৭ সালে আফগানিস্তানকে একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসেন। অনেক শাসকের হাত ঘুরে দেশটি আজ আশরাফ গানির হাতে এসেছে।
উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কোনো বিদেশী শক্তিই এখানে স্থায়ী হতে পারেনি। এজন্য দেশটিকে সাম্রাজ্যবাদের গোরস্থান বলেও ডাকা হয়। কুশান, ঘুরি, খিলজি, মোগলসহ অনেকেই দেশটির পথ অতিক্রম করে ভারতবর্ষ শাসন করেছেন। কিন্তু কখনো স্থানীয়দের পুরোপুরি বশে আনতে পারেননি।

গ্রিকো-পারসিয়ান যুদ্ধের পর দেশটির পথ ধরেই আলেকজান্ডার ভারতবর্ষে আক্রমণ করতে এগিয়ে গেছেন৷ পরে ফিরেও গেছেন,কিন্তু এখানে থিতু হননি। এক সময়ের উপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশ এই দেশে বেশ নাকানিচুবানি খেয়েছে। ১৮৩৮ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তারা তিনবার আফগানিস্তান আক্রমণ করে। এই তিনবারই তারা পরাজিত হয়। এজন্যই ব্রিটিশ ভাইসরয় বলেছিলেন, 'আফগানিস্তান হচ্ছে বিষাক্ত পানীয়।'

আফগানিস্তানে ব্রিটিশদের আক্রমণ ইতিহাসে অ্যাংলো আফগান যুদ্ধ বা আফগান যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৮৩৮ সালে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল জর্জ ইডেন সিমলা মেনিফেস্টো ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল রুশপন্থী দোস্ত মোহাম্মদ খান ও তার সহযোগীদের সরিয়ে শাহ সুজা দুররানিকে ক্ষমতায় বসানো।

শাহ সুজা ছিলেন দুররানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শাহ দুররানির নাতি। ১৮০৯ সাল থেকে শাহ সুজা কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে নির্বাসিত ছিলেন। শুজা নিমলার যুদ্ধে পরাজিত হন। যুদ্ধে জয় লাভ করে তার ভাই মাহমুদ শাহ। এর আগে শুজা মাহমুদ শাহকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। আর মাহমুদ শাহ জামান শাহকে অন্ধ করে দিয়ে নিজে ক্ষমতা দখল করেছিল। এখানে বলে রাখি, এই শুজার সাথে বিখ্যাত 'কোহ-ই-নূর'-এর ইতিহাসও জড়িয়ে আছে৷
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৩৯ সালে দেশটি দখল করে শাহ সুজাকে ক্ষমতায় বসায়। ওই সময় ক্ষমতায় ছিল রাশিয়ান পন্থী দোস্ত মোহাম্মদ খান। দুই বছর পর ১৮৪১ সালে দোস্ত মোহাম্মদের ছেলে আকবর খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন গোত্রপতিরা পাল্টা আক্রমণ করে ব্রিটিশদের পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য করে। ১৮৪৩ সালে পুনরায় দোস্ত মোহাম্মদ পুনরায় সিংহাসনে বসে। ব্রিটিশরা কাবুল ত্যাগের পর শাহ সুজাকে হত্যা করা হয়।

ইতিহাস বলে ১৮০০০ হাজার ব্রিটিশ ও ভারতীয়দের মধ্যে মাত্র একজন প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছিল। ইতিহাসে এই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করা হয়। হত্যার ঘটনায় আফগানদের বর্বর, উচ্ছৃঙ্খল, নির্দয় উপাধি দেয়া হয়। এই উপাধি শত বছর পেরিয়ে আজকের যুগেও মুছে যায়নি। এখানে আরেকটি বিষয়ের কথা জানিয়ে দেই। প্রথম অ্যাংলো আফগান যুদ্ধের কাহিনী বর্ণনায় ব্রিটিশদের কাবুল দখল ও আফগান বাহিনীর এই হত্যাযজ্ঞের বাইরে আরো কিছু ঘটনা আছে যা কম আলাপ করা হয়।

ব্রিটিশ বাহিনী কাবুল ছাড়াও ইস্তালিফ ও ছারিকার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর মধ্যে ইস্তালিফে বৃহৎ গণহত্যা চালায়। তারা প্রতিটি আফগান যুবককে হত্যা করেছিল। শত শত আফগান যুবতীকে হত্যা করেছিল। আর্নল্ড ফ্লেচার তার বই History of Afghanistan বইতে এ নিয়ে আলাপ করেছেন।

১৮৭৫ সালে লর্ড লিটন ভারতবর্ষে গর্ভনর জেনারেল হয়ে আসেন৷ কয়েক বছর পর ১৮৭৮ সালে রাশিয়া কাবুলে কূটনৈতিক মিশন প্রেরণ করে। ব্রিটিশরা এমন একটি মিশন পাঠাতে চাইলে শের আলি খান তা প্রত্যাখান করেন। এর ফলে ২য় অ্যাংলো আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। থেমে থেমে বেশ কয়েক দফা এই যুদ্ধ চলতে থাকে ১৮৯৩ পর্যন্ত।
১৮৭৯ সালে গান্দামাকের চুক্তির মাধ্যমে আফগান শাসক ইয়াকুব খান ব্রিটিশদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়৷ কিন্তু কিছুদিন পর ব্রিটিশ প্রতিনিধি লুইস কাভাগনারিসহ কয়কজন কর্মকর্তা নিহন হয়। ১৮৯৩ সালে ডুরাল্ড লাইন টেনে ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এ সময় শাসক ছিলেন আব্দুর রহমান খান। তিনি ১৮৮০ থেকে ১৯০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। আব্দুর রহমান গান্দামাক চুক্তি সমর্থন করেছিলেন৷

গান্দামাক চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ‘অন্য দেশের সাথে আফগানিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন ব্রিটিশ সরকারের ইচ্ছা ও পরামর্শ অনুযায়ী হবে।’ পরবর্তী শাসকরা এই চুক্তি মেনেই দেশ পরিচালনা করেন। আমানউল্লাহ খান ক্ষমতায় এই চুক্তির বাইরে পথ চলতে শুরু করেন।

আব্দুর রহমানের পর ক্ষমতায় আসে হাবিবুল্লাহ খান৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশটি জুড়ে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের প্রতি সমর্থনের জোয়ার দেখা দেয়। সেই সময়ের শাসক হাবিবুল্লাহ খান নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেন।

১৯১৯ সালে হাবিবুল্লাহ আততায়ীর হাতে মারা গেলে ক্ষমতায় আসেন তার ছেলে আমানুল্লাহ খান। আমানুল্লাহ আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গান্দামাকের চুক্তি থেকে সরে আসেন। এমনকি ব্রিটিশ শাসিত ভারববর্ষে আক্রমণের সিদ্ধান্তও নিয়েছেলিন বলে জানা যায়। মাসব্যপী বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ১৯১৯ সালের ৮ আগস্ট একটি শান্তি চুক্তি সই হয়। এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা আফগানদের স্বীকৃতি দেয়।

রাওয়লাপিন্ডিতে এই চুক্তি সইয়ের আগে আমানুল্লাহ বলশেভিকদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে। মনে করিয়ে দেই, ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পর বলশেভিকরা ক্ষমতায় ছিল। ১৯২২ সালে USSR গঠিত হয়। আমানউল্লাহ আফগানিস্তানকে পশ্চিমা আদর্শে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনিই আফগানিস্তানে প্রথম সংবিধান চালু করেন। তার সময়ে আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি সাময়িক পত্রিকা বের হয়। এর মধ্যে জাভান্দুন ও আদব ছিল উল্লেখযোগ্য।

১৯২৮ সালে তিনি এক অনুষ্ঠানে তার স্ত্রীকে হিজাবমুক্ত হতে দেন। ধর্মীয় বিধিনিষেধ শিথিল করেন। আধুনিক শিক্ষার প্রসার ও সেনাবাহিনীর সংস্কারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এসব কাজের মধ্য দিয়ে তিনি রক্ষণশীলদের চোখে শত্রু হয়ে যান। ১৯২৮ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ডাকাত বাচ্চা সাকাও কাবুল দখল করে। ১৯২৯ সালে আমানউল্লাহ ক্ষমতা হারায়। বাচ্চা সাকাও হাবিউল্লাহ গাজী নাম ধারণ করে নিজেকে আমির ঘোষণা করে। একই বছরে মোহাম্মদ নাদির খান বাচ্চা সাকাওকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। গোত্রীয় সরদাররা তাকে শাহ নির্বাচিত করেন।

নাদির শাহ ১৯৩১ সালে আমানউল্লাহ প্রবর্তিত সংবিধান সংশোধন করে নতুন সংবিধান প্রকাশ করেন। ১৯৩৩ সালে নাদির শাহকে হত্যা করা হলে তার ১৯ বছরের ছেলে জহির শাহ ক্ষমতায় আসে। জহির শাহের আমলে আফগানিস্তান কৌশলী পন্থা অবলম্বন করে বর্হিবিশ্বের সাথে সম্পর্কের বিস্তার ঘটায়। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নও চলতে থাকে।

বিদেশী অর্থায়ন নিশ্চিতে উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছিলেন। আরিয়ানা নামে প্রথম বিমানসংস্থা তার আমলেই চালু হয়। নিয়মিত কাবুল থেকে ইউরোপে বিমান চলাচল করতো৷ এই চলাচলের পথ মার্কো পোলো রুট নামে পরিচিতি পেয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পশতুনিস্তান আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে আফগানিস্তানের রক্ষণশীল গোত্র প্রধানরা মদদ দেয়। ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শাহ শাহ মাহমুদ এর বিপক্ষে অবস্থান নিলে ধর্মীয় নেতারা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। দাউদ খানকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন।

দাউদ খান পশতুনিস্তানের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। অনেককে অবাক করে দিয়ে দাউদ খান সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেন। পশতুনিস্তান ইস্যুতে পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। ১৯৬৩ সালে দাউদ খান পদ থেকে পদত্যাগ করলে পাকিস্তান সীমান্ত খুলে দেয়।

১৯৬১ সালে লয়া জিরগা নতুন সংবিধান অনুমোদন করে। দেশটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু করে। এর ফলে ১৯৬৫ সালে বাম আদর্শের পিডিপিএ, ১৯৭১ সালে রক্ষণশীল দল হিসেবে ইসলামিক সোসাইটি আত্নপ্রকাশ করে।জাতীয় রাজনীতি ক্রমশই বিভক্ত হয়ে পড়ে৷ ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত রাজা জহির শাহ ৫ জন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। বিভক্ত রাজনীতির ময়দানে গোল দিতে দাউদ খান ক্ষমতা দখল করে দেশটিতে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। ১৯৭৩ সালে আফগানিস্তানক রিপাবলিক রূপে আত্নপ্রকাশ করে।

এরপরের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই সোভিয়েত আগ্রাসন, মুজাহেদীন বাহিনী সৃষ্টি, মুজাহেদীন থেকে তালেবান, আল কায়েদাসহ অন্য সশস্ত্র বিদ্রোহীদের আত্নপ্রকাশ, নাইন ইলেভেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ- প্রভৃতি প্রতিটি ঘটনায় দেশটির সংযোগ। এর বাইরে পাকিস্তান নামক দেশটির রাজনীতির ইতিহাসের সাথেও আফগানিস্তান ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us