কানে কম শুনছেন, বুঝবেন যেভাবে

কানে কম শুনছেন, বুঝবেন যেভাবে - ছবি : সংগৃহীত
যেমন চোখে কম দেখা স্বাভাবিক, তেমনই কানে কম শোনাও অস্বাভাবিক নয়। তাই হিয়ারিং লসের সমস্যা নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই। বরং সঠিক চিকিৎসা করলে ফের সব ঠিক হয়ে যায়। তবে মুশকিল হলো, শ্রবণ ক্ষমতা যে কমছে, এটাই বহু মানুষ উপলব্ধি করতে পারেন না। ফলে চিকিৎসাও শুরু হতে পারে না।
তাই প্রথমেই কানে কম শোনার উপসর্গ সম্পর্কে জেনে নেয়া দরকার-
বড়দের
ফোনে কথা বলার সময় কম শুনতে পাওয়া।
বাড়ির অন্য সদস্যরা যেই সাউন্ডে টিভি দেখছে, তার থেকে বেশি ভলিউমে টিভি দেখতে হচ্ছে।
বাড়ির লোকেরাও রোগীর এই সমস্যা ধরে ফেলতে পারেন। স্বাভাবিক স্বরে কথা বললে না শুনতে পাওয়া, চার-পাঁচজন একসঙ্গে কথা বললে না বুঝতে পারা- এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। তাই বাড়ির কোনও সদস্যের এমন উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই সতর্ক হোন।
বাচ্চা
বাচ্চা কানে কম শুনছে, বোঝা খুবই কঠিন। কারণ বাচ্চার পক্ষে এটা অনুধাবন সম্ভব নয় যে সে কম শুনছে। আর পরিবারের ছোট সদস্যটি যে কম শুনছে সেটা বাড়ির অন্যরাও খুব সহজে ধরতে পারেন না। তাই এই কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখুন-
ছোটরা আগে শোনে তারপর কথা বলে। তাই জন্মগত কানে কম শুনলে বাচ্চা কথা বলতে পারে না। ফলে প্রাথমিকভাবে বুঝতে না পারা গেলেও বয়স আড়াই থেকে তিন হয়ে গেলেও বাচ্চা কথা বলতে না পারলে, বুঝতে হবে কোনো সমস্যা রয়েছে। সেই মতো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
একটু বড় বয়সে বাচ্চা কম শুনতে পেলে শিক্ষক, বাড়ির লোক কিছু লক্ষণ খুঁজে পেতে পারেন যেমন- বাচ্চা ক্লাসে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না, পড়া বুঝতে পারছে না, টিভির খুব কাছে গিয়ে দেখছে ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয়
এক্ষেত্রে পিওর টোনস অডিওমেট্রি, টিমপ্যানোমেট্রি- এই দু’টি পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষা থেকে জানা যায়- আদেও হিয়ারিং লস আছে কি না? থাকলে কী ধরনের হিয়ারিং লস? কতটা কম শুনছে? কারণ কী?
অবশ্য ছোট বাচ্চাদের কানে কম শোনার সমস্যা রয়েছে কি না বুঝতে এই পরীক্ষা করা যায় না। কারণ এই দু’টি টেস্ট করতে গেলে রোগীর প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন। বাচ্চারা সেই ধরনের প্রতিক্রিয়া দিতে পারে না। তাই এক্ষেত্রে ‘বেরা’ এবং ‘ওএই’ এই দু’টি টেস্ট করে কানে কম শোনার যাবতীয় সমস্যা বুঝে নিতে হয়।
চিকিৎসা
আমাদের কানের তিনটি ভাগ- বর্হিকর্ণ, মধ্যকর্ণ, অন্তকর্ণ। বর্হিকর্ণ এবং মর্ধকর্ণের সমস্যাকে বলে কন্ডাকটিভ হেয়ারিং লস। অপরদিকে অন্তকর্ণের সমস্যাকে বলে সেনসারি নিউরাল হিয়ারিং লস।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে কন্ডাকটিভ হিয়ারিং লস অপারেশন বা ওষুধপত্রের মাধ্যমে সেরে যায়। কিন্তু অন্তকর্ণের সমস্যা হলে কানের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে অপারেশন করে বা ওষুধপত্রের সাহায্যে রোগ ভালো হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। সেক্ষেত্রে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করতে হয়।
হিয়ারিং এইড
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো হিয়ারিং এইড পরুন। লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আর অবশ্যই হিয়ারিং এইড কিনুন কোনও প্রতিষ্ঠিত ইএনটি প্রতিষ্ঠান থেকে যেখানে হিয়ারিং এইড সংক্রান্ত যাবতীয় পরিষেবা দেওয়া হয়। কারণ শুধু যন্ত্র কিনে নিলেই হলো না, সেই যন্ত্রটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা শিখতে হবে, মাঝে মধ্যে সার্ভিসিং করতে হবে, দরকার পড়বে টিউনিং ঠিক করার। এইসব পরিষেবা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব জায়গায় মেলে না।
সূত্র : বর্তমান