শুভেন্দুকে হারিয়েই হুইলচেয়ার ছাড়লেন মমতা
মমতা - ছবি : সংগৃহীত
নন্দীগ্রামের মাটিই একসুতোয় বেঁধে দিয়েছিল তাদের। আর সেই মাটিতেই একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। তবে জমি আন্দোলনের ভূমিতে শেষমেশ মমতা ব্যানার্জির মুখেই হাসি ফুটল। তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপি-তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে পরাজিত করলেন তিনি। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে, ১২০১ ভোটে নন্দীগ্রামে জিতেছেন মমতা।
গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বিজেপি-তে যোগ দেন শুভেন্দু। তার পর লাগাতার মমতা ও তার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যান তিনি। সেই তুলনায় তৃণমূল অনেকটাই স্তিমিত ছিল। তবে অধিকারীদের সঙ্গে সম্পর্কের শেষ পেরেক পোঁতেন মমতাই। নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, সেখান থেকেই ভোটে লড়বেন তিনি।
তার পরই নীলবাড়ির লড়াইয়ে বাংলার রাজনীতির যাবতীয় সমীকরণ উল্টে যায়। ১০ মার্চ আনুষ্ঠাানিক ভাবে নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন মমতা। ওই দিনই নন্দীগ্রামে আক্রান্ত হন মমতা। পায়ে আঘাত পান। তা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি-র মধ্যে তরজা চরমে ওঠে।
এর দু’দিন পর, ১২ মার্চ নন্দীগ্রাম থেকে বিজেপি-র হয়ে মনোনয়ন জমা দেন শুভেন্দু। তার পর থেকে বিজেপি-র হেভিওয়েট নেতারা শুভেন্দুর হয়ে সেখানে সভা করে এসেছেন। সেই তুলনায় নন্দীগ্রামে তৃণমূলের সভা ছিল মমতা-সর্বস্বই। তবে সেখানে জেতা নিয়ে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মমতা।
এমনকি ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে যে দিন ভোটগ্রহণ, সে দিন সেখানে থাকলেও, শুভেন্দুর মতো সকাল থেকে বুথে বুথে ঘুরতে দেখা যায়নি তাকে। বরং দুপুরে বয়ালে ঝামেলার খবর পেয়ে প্রথম বাইরে বেরোন মমতা। বয়ালে তাকে দেখে আবেগের বাঁধ ভাঙে স্থানীয়দের। বিজেপি ভোট লুঠ করছে বলে তাঁকে জানান গ্রামবাসীরা।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দু’ঘণ্টা ঠায় বুথের ভিতর বসেছিলেন মমতা। সেই সময় তাঁকে তাচ্ছিল্য করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘খেলা তো হয়ে গিয়েছে। ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। এখন আর কী করবেন।’’ কিন্তু নন্দীগ্রামে ভোটের খেলায় মমতার কাছেই শেষমেশ গোল খেতে হল তাকে। ভোটের ফলাফল বেরনোর পর রোববার হুইলচেয়ার ছেড়ে পায়ে হেঁটেই দলীয় কার্যলয়ে ঢোকেন মমতা।
১২০১ ভোটে জয়
টানটান উত্তেজনা। সুপার ওভার ঘিরে উত্তেজনা চরমে উঠেছিল নন্দীগ্রামে। শেষ মুহূর্তের কাউন্টিংয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষে জয়ী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১২০১ ভোটে হারালেন প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু অধিকারীকে। হাইভোল্টেজ কেন্দ্রে টানটান লড়াইয়ের সাক্ষী রইল পশ্চিমবঙ্গ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বার্তায় মোদিকে কটাক্ষ
এখনও চূড়ান্ত ফল ঘোষণার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু বাংলার ক্ষমতায় যে তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরছেন তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। এমন ইঙ্গিত মেলার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মমতা শুভেচ্ছা জানানো শুরু হয়ে যায়। বিজেপির ‘ঘৃণার রাজনীতি’কে পরাস্ত করার জন্য তৃণমূল নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র ঘৃণার রাজনীতিকে হারানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের হার্দিক অভিনন্দন। এক মহিলাকে বিজেপি-র 'দিদি ও-দিদি' বলে অপমান করার জোরাল জবাব দিয়েছেন জনতা’।
ভোট গণনা শুরুর পরেই ইঙ্গিত দেখে শিবসেনার মুখপাত্র ও সাংসদ সঞ্জয় রাউত আশাপ্রকাশ করে লেখেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলই সরকার বানাবে। পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমোর লড়াকু মানসিকতার প্রশংসা করে টুইটে লেখেন, ‘বাংলার বাঘিনীকে অভিনন্দন। ও দিদি, দিদি, ও দিদি’।
অভিনন্দন জানিয়ে করোনা অতিমারির বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়াই আহ্বান জানিয়ে টুইট করেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। লিখেছেন, ‘এই দুরন্ত জয়ের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন। আমরা একসঙ্গে মানুষের জন্য আমাদের কাজ এবং অতিমারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে যাব’।
সূত্র : সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ও এই সময়