খেলা হবে.., খেলা হলো...
খেলা হবে... - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তৃণমূলের মমতা ব্যানার্জির হ্যাটট্রিক জয় প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী একটি বিশ্লেষণ দিয়েছেন। তা এখানে তুলে ধরা হলো-
করোনা মহামারির ভয়াবহ প্রেক্ষাপটে ভারতের যে ক’টি রাজ্যে সম্প্রতি বিধানসভা ভোট সংঘটিত হলো, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই যে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সে ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির জয়-রথ বঙ্গে এসে শেষ অবধি থমকে যায় কি না, সকলেরই নজর ছিল সেই দিকে।
কথায় বলে ফলেই মেলে পরিচয়। বিজেপি ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের সংগঠিত করতে অন্য অনেক রাজ্যে সফল হলেও, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-সুভাষচন্দ্র-সত্যজিতের বাংলায় তা সম্ভব হলো না। সত্যজিৎ রায়ের জন্মের ঠিক শতবর্ষ পরে যে রায় প্রকাশিত, তাতে স্পষ্ট যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়।
পশ্চিমবঙ্গের নারী, ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের অধিকাংশ এবং সংখ্যালঘুরা যে বিজেপিকে রুখতে, এনআরসি/সিএএ-র ধোঁয়াশায় না থেকে (প্রতিবেশী আসামের অভিজ্ঞতার পরে), মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্য বিধানসভার দুই তৃতীয়াংশ আসনে জিতিয়ে তৃতীয়বারের জন্য জয়ী করছেন, তা পরিষ্কার।
এই ফলাফলে এটাও দেখা যাচ্ছে যে সিপিআইএম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সংযুক্ত মোর্চা বাংলার মানুষ কোনোভাবেই গ্রহণ করেনি। সিপিএম ও কংগ্রেস এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় নিশ্চিহ্ন।
বস্তুত, বিজেপিকে রুখতে তৃণমূলই যে একমাত্র সক্ষম, সেটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বুঝে গিয়েছিলেন। আর তাই স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির অন্যান্য এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির তাবড় মুখ্যমন্ত্রী প্রতি সপ্তাহে, কখনও প্রতিদিন তাদের বাংলা সফরে অগণিত সভা করলেও, প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে ‘সোনার বাংলা’ গড়বার স্বপ্ন ফিরি করলেও, সেই সোনার হরিণের পিছনে বাংলা ছোটে নি। ভরসা রেখেছে ‘বাংলার মেয়ে’-র ওপরেই।
বাংলার এই ফলাফলের প্রভাব অদূর ভবিষ্যতে যে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের রাজনীতিতে পড়তে চলেছে, তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এই ফলাফলের পরে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জীর গুরুত্ব বাড়তে চলেছে, তা-ও স্পষ্ট।
‘বাংলার আজকের ভাবনা, ভারতের কালকের ভাবনা’ কী না, সময়ই তার জবাব দেবে। তবে সম্ভবত বাংলার বিধানসভার এই ফল, ভারতীয় রাজনীতিতে আবারও চিত্তাকর্ষক করে তুললো
সূত্র : বিবিসি
ভাঙা পায়ে খেলা দেখালেন মমতা
বলেছিলেন ভাঙা পায়ে খেলা হবে। খেলই দেখাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। সারা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে যখন ঘাসফুলের সুনামি নন্দীগ্রামেও কট্টর টক্কর দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। বড় ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও আপাতত পিছিয়ে শুভেন্দু অধিকারী। এই মুহূর্তে নন্দীগ্রামে ১৫ রাউন্ড গণনার শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে রয়েছেন ১৯০০ ভোটে। ভোটগণনা শেষ হতে বাকি আর মাত্র তিন রাউন্ড।
নন্দীগ্রামে ১২ রাউন্ড গণনার শেষে ৪৬০০ ভোটে এগিয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১১ রাউন্ড থেকেই ক্রমেই ব্যবধান বাড়াচ্ছিলেন তৃণমূলনেত্রী। যদিও বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়েননি তারই এক সময়ের প্রধান সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী।
নন্দীগ্রামকে বাদ দিলে, গোটা রাজ্যেই তৃণমূলের ঝড় দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল বলছে, বাংলা নিজের মেয়েকে চায় এই স্লোগানকে প্রমাণ করা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। এমনকি গত লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে থাকা জেলা মালদহ, ঝাড়গ্রাম, নদিয়া জেলাতেও তৃণমূলের প্রার্থীদের ফল অভাবনীয়। জয় এসেছে মুর্শিদাবাদেও।