সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা : যেকোনো সময় হালদায় ছাড়বে ডিম
যেকোনো সময় হালদায় ছাড়বে ডিম - ছবি : সংগৃহীত
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে যেকোনো সময় মাছ ডিম ছাড়তে পারে। গতকাল মধ্যরাতে বজ্রবৃষ্টির পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা মাছের ডিম ছাড়ার ক্ষেত্র পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
অন্যান্য বছর মার্চ-এপ্রিলে কিছু কিছু বৃষ্টি হলেও এবার হয়নি। বৃষ্টি নামলে হালদায় মা মাছের আনাগোনা বাড়ে এবং মাছের পেটে ডিমও পরিপক্ক হয়। অনুকূল পরিবেশ পেলে দ্রুত ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এবার এপ্রিলে ডিম দেয়নি মা মাছ।
হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা এ সময়ের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। গতকালের বজ্রবৃষ্টির পর তারা এখন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যে মাটির কূয়া তৈরি, নৌকা সংগ্রহ, ডিম সংগ্রহকারী শ্রমিক জোগাড় এবং ডিম ধরার অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছেন আহরণকারীরা। একই সাথে সংস্কারের প্রস্তুতি চলছে সরকারি হ্যাচারিগুলোতে।
গতকালের বৃষ্টির পর ডিম সংগ্রহকারী হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন সওদাগর ও মোহাম্মদ হাসান শিকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘হালদার ক্ষেত্র এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নদীতে মা মাছের আনাগোনা যথেষ্ট বেড়েছে। ডিম সংগ্রহের জন্য আমরাও পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তৈরি করা হয়েছে মাটির কূয়া। নৌকা, জাল, বড় পাতিলসহ ডিম ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়তে পারে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছ। ডিম ধরার উৎসবে মেতে উঠতে নদীর দুই পাড় রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার সহস্রাধিক ডিম সংগ্রহকারী মাটি ও পাকা কূয়া, নৌকা, ডিম ধরার মশারি জাল, বালতিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে অপেক্ষা করছেন। অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমায় মেঘের গর্জন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল নামলেই ডিম দিতে পারে মা মাছ।’
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার ফারহানা লাভলী বাসস’কে বলেছেন, ‘ডিম থেকে রেণু ফোটাতে রাউজান ও হাটহাজারীর ৪টি সরকারি হ্যাচারিকে প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সাথে ডিম সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমীন বলেন, ‘ডিম দেয়ার মওসুমকে সামনে রেখে আমরা বেশ কিছুদিন ধরে হালদার ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রেখেছি। অবৈধ মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে আগের তুলনায় দ্বিগুণ অভিযান চালানো হয়েছে। আমি নিজে প্রতিদিন একবার হলেও হালদায় যাচ্ছি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে হাটহাজারীর তিনটি সরকারি হ্যাচারি সংস্কারের জন্য আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।’
হালদা নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় সংবাদ সংগ্রহকারী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী আজ বাসস’কে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে এ প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রের উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু কাজ করেছে। ফলে হালদার পরিবেশ আগের চেয়ে এখন অনেক ভাল। দূষণের পরিমাণ অনেক কম, অবৈধ মাছ শিকারী কমে গেছে। মোট কথা, মাছের ডিম ছাড়ার জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী করে তোলা হয়েছে পরিবেশ। গতকালের বৃষ্টির পর মা মাছের ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় আছি আমরা। এলাকার মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। আশা করছি যেকোনো সময় হালদায় ডিম ছাড়বে মা মাছ।’
প্রসঙ্গত, রাউজান-হাটহাজারী উপজেলার সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে প্রতি বছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ডিম ছাড়ে মা মাছ। হ্যাচারি পোনার চেয়ে হালদার পোনা দ্রুত বর্ধনশীল বলে এ পোনার কদর সারাদেশে। ডিম সংগ্রহকারীরা স্থানীয়ভাবে মাটির কূয়া তৈরি করে অপেক্ষায় থাকে মা মাছ কখন ডিম ছাড়বে সে আশায়। নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে তা থেকে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করে তারা।
সূত্র : বাসস