ম্যাক্রোঁ-এরদোগান : বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু
ম্যাক্রোঁ-এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এবার মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই হালাল উপায়ে পশু জবেহ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। মুসলমানরা বিশ্বব্যাপী হালাল উপায়ে বা শরিয়তসম্মত পন্থায় পশু জবেহ করে থাকেন। উন্নত একটি দেশে এ ধরনের আজব নিষেধাজ্ঞার ফলে ফরাসি মুসলমানরা প্রতিবাদমুখর হয়েছেন। প্যারিস মসজিদের পরিচালক এডিন হাফিজ, লাইওন মসজিদের খতিব, এভারি মসজিদের খলিল মারুন যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন ফরাসি কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় ২৩ নভেম্বর ২০২০ তারিখে রমজানের কয়েক মাস আগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নেগেটিভ মেসেজ দিয়েছে। নতুন নিয়মানুসারে ২০২১ সালের জুলাই থেকে এই নিয়ম চালু হচ্ছে। এই আজব বিধিনিষেধ মূলত স্বাধীনভাবে ধর্মাচার পালন থেকে নিবৃত্ত করার জন্য বলবৎ করা হচ্ছে মর্মে মুসলমান ও ইহুদি ধর্মীয় নেতারা সোচ্চার হয়েছেন। উল্লেখ্য, ইউরোপের বেলজিয়ামেও হালাল খাবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফরাসি কর্তৃপক্ষ হালাল সুপার মার্কেটগুলোতে জোর করে মদ ও শূকরের মাংস বিক্রিরও নির্দেশ দিয়েছে। অথচ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে হালাল খাবার ও হালাল রেস্টুরেন্ট। এমন কি ভিয়েতনামেও সীমিত হালাল খাবারের দোকান চালু হয়েছে।
ইসলাম ধর্মে নির্যাতন করে পশু হত্যা নিষেধ করা হয়েছে। ইহুদিরা তাড়াতাড়ি কণ্ঠনালী কেটে পশু হত্যা করে। অথচ পশ্চিমারা পশুকে বিভিন্ন কায়দায় অচেতন করে হত্যা করে তারপর মাংস সংগ্রহ করে। অচেতন করার হরেক রকম পন্থা রয়েছে, বিদ্যুতায়িত করা, অচেতনের বড়ি খাওয়ানো, ইনজেকশন পুশ করা, অবশ করার গান শট দেয়া, মাথায় প্রচ- জোরে লাঠি দিয়ে প্রহার করা, গ্রামাঞ্চলে লাঠি বা পাথর খণ্ড ছুড়ে অবশ করে হত্যা করা ইত্যাদি। ইউরোপীয় পশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে মুসলমান ও ইহুদিরা পশু হত্যা করে সেটি খুবই মানবিক ও বিজ্ঞানসম্মত। সমালোচকরা বলছেন, হালাল উপায়ে মুসলমান ও ইহুদিদের পশুর গোশত সংগ্রহে ফরাসি সরকারের হস্তক্ষেপে কোনো যুক্তি নেই।
বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, হালাল গোশত যা ইসলামী উপায়ে সংগৃহীত হয় সেটি ফ্রান্সে চরম জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। স্কুল, হাসপাতাল ও কোম্পানি ক্যান্টিনে হালাল গোশত বিক্রি হচ্ছে। এতে ফরাসিরা উদ্বিগ্ন ও ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত। ইংল্যান্ডের বড় বড় শেফরা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন যে, হালাল পশুর গোশত ও অন্যভাবে হত্যা করা মাংস রান্না করলে দু’ধরনের স্বাদ পাওয়া যায়। এই বিষয় নিয়ে ইংরেজ রাজাদের অনেক কাহিনী ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রসঙ্গত আমার সরকারিভাবে কোরিয়া সফরের সময় আমাদের কয়েকজন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায় গরুর গোশতের ডিশ খাওয়ার জন্য। এক দিন পর কর্তৃপক্ষ আমাদের অনেক দূরে এক পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। সেখানে আমরা গরুর গোশত ও কাবাব খেয়েছি রুটি দিয়ে। হালাল গোশতের চাহিদা কেমন জানতে চেয়েছিলাম, প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান প্রচুর চাহিদা আছে, দোকানের পাঁচজন পাচক রান্না করে কুলিয়ে উঠতে পারে না।
ফ্রান্সের সিনেট ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধই শুরু করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশীলনকে বলছে, ‘ইসলামপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদ’। নিন্দনীয় এই বিলে বিশ্ববিদ্যালয় করিডোরগুলোতে ধর্মীয় অনুশীলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে। যারা সব সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর কথা বলে তারা কিভাবে এমন বর্বর আইন প্রণয়ন করে তা বোধগম্য নয়। মুসলমানদের বিরুদ্ধাচরণের জন্য গত বছর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বিলটি পেশ করেন। ‘ইসলামপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদের’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে তিনি গত বছর এই বিলটি সর্বপ্রথম সামনে নিয়ে আসেন। বিলটিতে মূলত মুসলমানদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ওপর বিধিনিষেধ আরোপসহ অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন ইসলামের বিরোধিতা করে তিনি এরদোগানেরও একহাত নিতে চান, কেননা এরদোগান বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে থাকেন।
লেবাননে কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়া, লিবিয়ার ক্ষমতায় অংশগ্রহণ, আর্মেনিয়ার যুদ্ধে পরিত্যক্ত হওয়া, তুরস্কের এরদোগানের সাথে বিবিধ আন্তর্জাতিক ফোরামে পাত্তা না পাওয়াতে এবং সামনে ফ্রান্সে নির্বাচনের ঢাকঢোল শুরু হওয়ায় ম্যাক্রোঁ যেন দিশেহারা হয়েছেন। তিনি নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য ইসলামফোবিয়াকে বেছে নিয়েছেন। তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন লি পেন। যিনি এর আগে শুধু হেরেছেন। জনগণ তার দিকেও ঝুঁকছে। লি পেনও ইসলামফোবিয়াকে বেছে নিয়েছেন। মনে হয় ফ্রান্সের নেতারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াকে রাজনীতির যোগ্য নেতৃত্বের উপাদান মনে করছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়। ফ্রান্সে মুসলিমবিরোধী আক্রমণ ২০১৯ সালে ৫৪ শতাংশ বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১০০টি আক্রমণ সংঘটিত হয়েছিল, সেটি বেড়ে ২০১৯ সালে ১৫৪ তে দাঁড়ায়। ইসলাম ও সন্ত্রাস বন্ধ করার নাম করে এসব আক্রমণ চালানো হয়। ফ্রান্সের ৬৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ছয় মিলিয়ন মুসলমান। ইমাম ও বোরকা পরিহিতা মহিলাদের বেশি টার্গেট করা হয় নির্যাতনের জন্য। সম্প্রতি মুসলিম বিদ্বেষী কিছু ফরাসি মুসলমানদের কবরস্থান ও মসজিদের ভেতর রক্তাক্ত শূকরের মাথাও ফেলেছে। মাঝে মাঝে মসজিদ অপবিত্রকরণের ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়ে আসছে।
ম্যাক্রোঁ ইউরোপে তুর্কি সমস্যাকে জোরালোভাবে ফোকাস করে থাকেন। তিনি ইউরোপ ও তুরস্কের ব্যাপারে তার নিজের ভাবধারা মিডিয়ায় ছেড়েছেন। তার মতে তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য ও বাণিজ্যিক পার্টনার। অবৈধ উদ্বাস্তুর বিষয়ে তুরস্কের অবস্থান সন্তোষজনক। তবে ৩০ লাখ সিরীয় উদ্বাস্তু এই মহাদেশে আসতে পারে। সেটি ফ্রান্সের জন্য আতঙ্কজনক তিনি বলে মনে করেন। ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সেই সবচেয়ে বেশি মুসলমান। সিরিয়ার উদ্বাস্তুরা ফ্রান্সে ঢুকতে সক্ষম হলে কি হবে তা নিয়ে ঘুম হারাম ম্যাক্রোঁর। এই অবস্থায় তিনি এক রাজনৈতিক ব্যালেস্টিক মিসাইল ছেড়েছেন, এরদোগান ফ্রান্সের নির্বাচন প্রভাবিত করতে চান। ম্যাক্রোঁ এমন সময়ে কথাটি বললেন যখন ইউরোপীয় নেতারা বিশেষ সভায় একত্র হচ্ছেন। এখন ইউরোপ তুরস্কের সাথে কাজ করতে চায়, কিন্তু ম্যাক্রো এর বিরোধিতা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি এখন ইউরোপীয় নেতা ও বাইডেনের কান ভারী করার কাজে রত। জনগণকে দেখাতে চান তিনি কেমন পারেন। অথচ জার্মানির এঞ্জেলা মার্কেল পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও উদ্বাস্তু সমস্যায় তুরস্কের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনি আঙ্কারাকে ‘বিশ্বস্ত সহযোগী’ বলেও বর্ণনা করেছেন।
এরদোগানের সাথে ম্যাক্রোঁ আগেই ‘ফাইট’ দিয়েছিলেন। যেমন ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, এরদোগান পশ্চিমা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন, রাশিয়া ও পুতিন বিরোধী কাজ করেছেন, চীন এবং ইরানকে তিনি পছন্দ করেন না। বিশ্বের রাজনৈতিক বাজারে এসব বড়ি একটিও বিক্রি হয়নি। ফলে ম্যাক্রোঁর ভাবমূর্তি আরো নিচে নেমে গেছে। ফ্রান্সের ইসলামবিরোধীরা এখন ইসলামবিরোধী কাজে ম্যাক্রোঁর পরিবর্তে লি পেনকে চান।
ফ্রান্স এর আগে সিরিয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যার বিষয়ে এরদোগানের সাথে পেরে ওঠেনি। লিবিয়া ও নাগরনো কারাবাখেও একই অবস্থা। ম্যাক্রোঁ এরদোগানফোবিয়ায় আক্রান্ত হলেও একটি বিষয় তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, সেটি হলো ইউরোপীয় কৌশলগত বিষয়ে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের আন্তর্জাতিক অবস্থান অনেক উঁচুতে আসীন হয়েছে। ইউরোপ এখন তুরস্কের সাথে সমান সমতায় কাজ করতে চায়। পশ্চিমাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় এখন তারা এমন একটি ম্যাজিক ফর্মুলা খুঁজছেন যা দিয়ে তুরস্কের সাথে কাজ করা যায়। ন্যাটোর বিশ্বস্ত সাথী যদি রাশিয়ার সাথে জোট বাঁধে, যার কাজ পুরোদমে চলছে তবে মধ্যেপ্রাচ্যে ভূ-রাজনীতি বদলে যাবে এবং পশ্চিমাদের সাজানো ছক কাজ করবে না। তাই তুরস্ককে অবজ্ঞা করার ফুরসত আরে পাচ্ছে না পশ্চিমারা। এখন তাদের প্রায় ক্ষেত্রেই কনফ্রন্টেশন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে এরদোগানবিরোধী ক্যু ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি কঠোর হাতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। গুলেনিস্ট-পিকেকে দমন ও দেশে গণতন্ত্র, ইসলামী জাগরণ ও সামরিক ও সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে চান। এরদোগান চান, ইউরোপীয় ইউনিয়ান তুরস্ককে সব ক্ষেত্রে সমমর্যাদা দিক। নতুবা তুরস্কও ব্যবস্থা নিতে সক্ষম।
এরদোগান ২০১৬ সালে এসে তুরস্ককে ইসলামী ভাবধারায় গড়ে তোলার চেষ্টা চালান। দেশটি ১৯২৩ সাল থেকে আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল আতাতুর্কের হাতে সেক্যুলার এবং কোথাও কোথাও নাস্তিকতায় ছেয়ে গিয়েছিল। আতাতুর্ক বিশ্বাস করতেন, ‘secularism and the Europeanization of Turkey were the most suitable means to ransform their country into a modern industrial nation', এর আলোকে তিনি তুরস্ককে গড়ে তুলেছেন। তার মত ‘কামালিজম’ নামে পরিচিতি পায়। ফলে তুরস্কে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং কামালিজম ও স্বৈরতন্ত্র একীভূত হয়। সামাজিক নিষ্পেষণ শুরু হয় ও মিডিয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হয়। অন্যদিকে শক্তহাতে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করায় ইউরোপ এরদোগানকে ‘ডিকটেটর’ বলে ডাকে। কিন্তু গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ইউরোপ-আমেরিকা যখন ফতুল্লা গুলেনকে নিয়োগ করে তার পেছনে লাখ লাখ ডলার খরচ করে তখন পশ্চিমারা কাউকে দোষারোপ করে না। মাদরাসায় পড়ুয়া এরদোগান দেখলেন, লোকজন আরবি হরফ চেনে না, কোরআন পড়তে পারে না। তখন তিনি ইসলামের জন্য কিছু করার চেষ্টা চালান। যা সমাজের লোকেরা লুফে নেয়। একইভাবে কিছু সেক্যুলার লোকজন বিরোধিতাও করতে থাকে। ফ্রান্স এটাকে কাজে লাগায় এবং প্রচার করে যে, ‘তুরস্ক বিভক্ত’। এরদোগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোরআন পড়ানোর নির্দেশ দেন এবং সাংবাদিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশনের দ্বার খুলে দেন। ২০২০ সালের ওয়ার্ল্ড ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন অনুসারে তুরস্কের অবস্থান ১৮০ দেশের মধ্যে ১৫৪তম। এরদোগান মনে করেন পশ্চিমাদের পেছনে না ঘুরে তুরস্ককে আঞ্চলিক শক্তিধর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি এরদোগান মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের অবরোধে শরিক হতে রাজি হননি এবং নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীন থেকে এইচ কিউ-৯ এন্টি-এয়ারক্রাফট ডিফেন্স মিসাইল কিনেছেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন ইয়েভস লে ড্রিয়ান বলেছেন, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান সরাসরি সহিংসতার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে ফ্রান্স। জিন ইয়েভস লে বলেন, ‘বিদ্বেষ ও সহিংসতার ঘোষণা দিয়েছেন এরদোগান। প্রতিনিয়ত তিনি এসব প্রচার করছেন, যা অগ্রহণযোগ্য। ফ্রান্স সরকার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’ তুরস্কভিত্তিক বেশ কয়েকটি সংগঠন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও রেস্টুরেন্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এ ছাড়া ‘ফ্রেঞ্চ মুসলিম’ নামে এক এনজিওর ওপরও আরোপ হতে পারে নিষেধাজ্ঞা। এর মালিক এখন তুরস্কে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গত ১৬ অক্টোবর প্যারিসের রাস্তায় শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যা করেছিল এক তরুণ। কারণ ওই শিক্ষক ক্লাসে মহানবী সা:-এর কার্টুন দেখিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। শিক্ষকের ওপর হামলাকারী ওই তরুণ ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এই হত্যাকান্ডের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন যে, ‘স্যামুয়েল প্যাটি নামের ওই শিক্ষককে খুন করার কারণ ইসলামপন্থীরা আমাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিতে চায়; কিন্তু ফ্রান্স কার্টুন ছাপানো বন্ধ করবে না। ধর্ম হিসেবে ইসলাম আজ বিশ্বজুড়ে সঙ্কটে রয়েছে।’ অথচ সঙ্কট তো তারাই সৃষ্টি করছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, আঙ্কারা কোনো কঠিন পদক্ষেপ না নিলে উভয় দেশের সম্পর্ক ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। পার্লামেন্টে তিনি বলেন, অনেক অপমানজনক বক্তব্য ম্যাক্রোঁকে বলা হয়েছে। সম্প্রতি এরদোগান ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ম্যাক্রোঁর বিলের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং বিশ্বকে ‘ম্যাক্রোঁনিজম’ থেকে সাবধান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের ফরাসি ভাষার গালাতাশারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফরাসি শিক্ষকের পারমিট ফ্রিজ করে দেয়ার কথাও তুরস্ক বলেছে। ২০১৮ সালে ফরাসি সামরিক কর্মকর্তাদের সিরিয়ায় পিকেকে গরিলাদের সাথে সাক্ষাতের পর এরদোগান ফ্রান্সের ওই কাণ্ডজ্ঞানহীন সফরের সমালোচনা করেন। ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘এটি আমাদের যুদ্ধ, এই যুদ্ধ চলবে। সন্ত্রাসীরা কখনো পার পাবে না, তারা আমাদের বিভক্তও করতে পারবে না।’ এরদোগান বলেন, ‘একটি সভ্য দেশের প্রধান লাখ লাখ নাগরিকের ধর্ম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কেমন করে এসব কথা বলেন!’ জনাব এরদোগান আরো বলেন, ‘আগেও বলেছি, ম্যাক্রোঁর মানসিক রোগের চেকআপ করা প্রয়োজন।’
সম্প্রতি ম্যক্রোঁ এরদোগানকে চিঠি দিয়ে উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে দুদেশের মধ্যে মতবিরোধের ফিরিস্তি এত বড় যে, সেগুলোর সমাধানে অনেক সময় পেরিয়ে যাবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার