করোনা-প্রতিরোধে ঘরে বাতাস চলাচল জরুরি কেন?

ডা. অনির্বাণ মৈত্র | Apr 29, 2021 09:28 am
করোনা-প্রতিরোধে ঘরে বাতাস চলাচল জরুরি কেন?

করোনা-প্রতিরোধে ঘরে বাতাস চলাচল জরুরি কেন? - ছবি : সংগৃহীত

 

* ল্যান্সেটের রিপোর্ট

বিশ্ববিখ্যাত ল্যান্সেট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকজন বিজ্ঞানীর যৌথ রচনা। একাধিক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তারা বুঝিয়েছেন, করোনাভাইরাস বাতাসে ছড়ায়। অর্থাৎ বায়ুবাহিত। অবশ্য, গত বছর থেকেই অনেক বিজ্ঞানী এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন। ল্যান্সেট-এর রচনাকারদের কৃতিত্ব যে তারা সব প্রমাণ একত্রিত করে বৈজ্ঞানিক যুক্তিসম্মত জোরালোভাবে তুলে ধরলেন। তার মানে কি এক বছর ধরে যা করা হল সব ভুল? না। আগের মতোই মাস্ক পরতে হবে (বরং ডবল মাস্ক পরলে বেশি ভালো) এবং শারীরিক দূরত্ব আরো বাড়াতে হবে। কিন্তু, বায়ুবাহিত ভাইরাসের অস্তিত্ব যখন এবার প্রমাণিত হয়েছে, তখন মাস্ক ও দূরত্ব ছাড়া আরো কিছু সুরক্ষাবিধির কথা বলা হচ্ছে। প্রয়োজন ইন্ডোর পরিবেশে ভালো করে হাওয়া-বাতাস চলাচল ভেন্টিলেশন।

* হাওয়া-বাতাস চলাচল জরুরি কেন?
বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, করোনা ভাইরাস মূলত নাক-মুখ নিঃসৃত পানির বড় ফোঁটার (ড্রপলেট) মাধ্যমে ছড়ায়। তবে ড্রপলেট আয়তনে বড় হাওয়ায় বেশি দূর যাওয়ার আগেই মাধ্যাকর্ষণের জন্যে মাটিতে পড়ে যায়। ওই জন্যেই দু’গজের দূরত্ব, মাস্ক পরা এবং মেঝে, টেবিল, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নানা পৃষ্ঠ সানিটাইজ করায় জোর দেয়া হয়েছিল। কিন্তু, গত এক বছরের গবেষণা থেকে বিশেষজ্ঞ মহল এখন নিশ্চিত, ড্রপলেটরা সাইজে বড় হলেও আসলে ‘ছোটখাট অপরাধী’। একজন সংক্রমিত ব্যক্তি আশেপাশের অন্যদের কাছে এই ভাইরাস মূলত পৌঁছে দেন পানির ক্ষুদ্র কণার (বৈজ্ঞানিক নাম ‘এয়ারোসল’ বা ‘ড্রপলেট নিউক্লি) মাধ্যমে।

প্রথমত, আয়তনে ছোট্ট বলে ভাইরাস-ভরা এয়ারোসল মাটিতে চট করে না পড়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। তখন যে কারো পক্ষে ভাইরাস-ভরা এয়ারোসল নিঃশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, করোনা রোগী কাশলে যত না ড্রপলেট বের হয়, তার থেকে অনেক বেশি বের হয় এয়ারোসল। তৃতীয়, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ৫৯ শতাংশই উপসর্গহীন। তাদের হাঁচি কাশি না হলেও, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ও কথাবার্তার সঙ্গে এয়ারোসল বেরতেই থাকে। হেঁকে কথা বললে (বা অতিমারির সময় আয়োজিত দফা দফায় ভোটের মিছিল মিটিং-এ স্লোগান দেয়ার সময়) আরো বেশি ভাইরাস-ভরা এয়ারোসল বেরিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই জন্যেই উপসর্গহীনরাই এই অতিমারির প্রধান বাহক।

* বেশিরভাগ সংক্রমণ কোথায়?
বাড়ি, অফিস, দোকান, রেস্তরাঁ, ভিড় যানবাহন বা হাসপাতাল থেকেই ৯০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ হয়েছে। কারণ, যেকোনো ইনডোর পরিবেশে হাওয়া চলাচল বাইরের তুলনায় কম হয়। ভিড় হলে, জানলা-দরজা বন্ধ থাকলে আরো কম। এই অবস্থায় একজন করোনা-আক্রান্ত ভাইরাস-ভরা এয়ারোসল নিঃসৃত করতে থাকলে, তখন সেই এয়ারোসল ঘরের মধ্যেই কয়েক ঘণ্টা ধরে ঘুরপাক খেতে থাকে এবং ঘরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আধ ঘণ্টা বাদে কেউ ঢুকলেও, তাঁর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরোমাত্রায় থাকছে। অন্যদিকে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় বা জানলা-খোলা ফাঁকা গাড়িতে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম। কারণ, আউটডোর পরিবেশে বাতাসের পরিমাণ ও চলাচল ঘরের তুলনায় সবসময়ই বেশি। প্রচণ্ড ভিড়ে, অনেকক্ষণ ধরে কাছাকাছি না থাকলে আক্রান্তের থেকে যথেষ্ট সংখ্যায় এয়ারোসল অন্যের কাছে পৌঁছবে না।

* এসি নয়, ভরসা রাখুন সিলিং ফ্যানে
করোনাকে পরাস্ত করতে জানলা খুলে রাখুন। কামরার ভেন্টিলেশন বাড়িয়ে দিন। বিশেষ করে জায়গায় বহু মানুষ যাওয়া-আসা করেন- যেমন অফিস, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, দোকান, মল, রেস্তরাঁ, টিকাকেন্দ্র, টিউশন ক্লাস, মেট্রো রেল ইত্যাদি। সেখানে ভালো করে হাওয়া-বাতাস চলাচল করুক। গ্রীষ্মকালে এসি প্রয়োজনীয়। কিন্তু, এসি যন্ত্র ঘরের মধ্যে একই বাতাসকে বারবার ঠাণ্ডা ও শুষ্ক করে পুনঃসংবাহিত করতে থাকে এমন বাতাসেই ভাইরাসের স্থায়িত্ব বেশি। তাই, এই বছর এসি বন্ধ করে সিলিংফ্যান আর এক্সহস্ট পাখা চালানো উচিত। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেল মাস্ক ও দূরত্ববিধিই যথেষ্ট নয়। তাই, উন্নত মানের হেপা ফিল্টার বা এমইআরভি ফিল্টার (যা দিয়ে প্লেনের বাতাস পরিশোধিত করা হয়) ব্যবহার করার সময় এসেছে।

টিকাকেন্দ্রে ভিড় : একাধিক টিকাকেন্দ্রের ভিড় থেকেই করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা। এই সব কেন্দ্রে আউটডোর ব্যবস্থা করতেই হবে।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us