আগেভাগে বাড়িতে অক্সিজেন মজুত করলে ঘটতে পারে যে বিপদ
আগেভাগে বাড়িতে অক্সিজেন মজুত করলে ঘটতে পারে যে বিপদ - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিশেষ করে ভারতে ভয়াবহভাবে আঘাত হেনেছে মহামারীটি। আর আক্রান্তরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন অক্সিজেন নিয়ে। ফুসফুস আক্রান্ত হলে অক্সিজেন খুবই প্রয়োজন। কিন্তু সেটাই দুর্লভ হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করার চিন্তা করছেন। তারা আগে ভাগেই অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে নিশ্চিত হতে চাইছেন। কিন্তু তাতে কি বিপদ আরো বাড়বে না? এ প্রশ্নের জবাবই এখানে দেয়া হচ্ছে।
* অক্সিজেন লিক করে বিপদ : অক্সিজেন নিজে জ্বলে না ঠিকই। তবে আগুনকে দাউদাউ করে জ্বলতে সাহায্য করে। কীভাবে? বাতাসে থাকে ২১ শতাংশ অক্সিজেন। আর আগুন জ্বলার জন্য দরকার পড়ে ১৬ শতাংশ অক্সিজেন। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার আগাম মজুত করে রাখছেন। শুধু তাই নয়, বহু লোক অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়িতে চিৎ করে রাখছেন। এভাবে সিলিন্ডার রাখলে অক্সিজেন লিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। ছোট ঘরে এভাবে অক্সিজেন রাখলে ও সিলিন্ডার লিক হলে তার থেকে ঘটতে পারে মহা বিপদ।
সিলিন্ডার সবসময় রাখা উচিত জানলার কাছে, যাতে লিক হলে সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন বেরিয়ে যায়। ছোট ঘরের বাতাসে লিকেজের কারণে বাতাসের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এদিকে অনেকেরই ধূমপানের বদভ্যাস আছে। বারবার লাইটার ও সিগারেট জ্বালানোর কারণে কোনোভাবে বাড়িতে ছোটখাট অগ্নিকাণ্ড ঘটলে অক্সিজেন আক্ষরিক অর্থেই ওই আগুনে ইন্ধন দেবে। সুতরাং কারণ ছাড়াই ঘরে আগে থেকে অক্সিজেন মজুত রাখতে যাবেন না।
* কীভাবে দিতে হবে, জানা চাই : কত মাত্রায় কতক্ষণ দিলে ভালো হয়, তা বুঝে নেয়া প্রয়োজন। বেশি মাত্রায় অক্সিজেন দিলে শরীরে অক্সিডেটিভ ইনজুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে ফুসফুস, চোখ, নার্ভ, ব্রেনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের এই ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
* নষ্ট হতে পারে : অনেকেই আজকাল আঙুলে অক্সিমিটার লাগিয়ে সারারাত জেগে বসে থাকছেন। অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫-এর কাছাকাছি গেলেই অক্সিজেন নিতে শুরু করছেন। একটানা নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রাখছেন। এদের মধ্যে কেউ মৃদু মাত্রার করোনা রোগী, আবার কেউ প্রবল আতঙ্কগ্রস্ত। সমস্যা হলো, ঠিক কোন মাত্রায় অক্সিজেন নেয়া দরকার, তাও অনেকে জানেন না। এই ধরনের মানুষ চাইবেন বাড়িতে বেশি বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রাখতে। এর ফলে অক্সিজেন নষ্ট হবে এবং বাজারে ঘাটতি তৈরি হবে।
* প্রশিক্ষিত মনিটরিং প্রয়োজন : কিছু রোগীর সবসময় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না। স্যাচুরেশন কমে ৯৫-এর নিচে গেলে দিতে হয়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়লে তখন ফ্লো বন্ধ করে দেখতে হয় স্যাচুরেশন বাড়ছে কি না ও তা স্থায়ী হচ্ছে কি না। স্যাচুরেশন স্থায়ী হলে তখন নজর রাখতে হয় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি না। কমে গেলে ফের অক্সিজেন দিতে হয়।
* শুধু অক্সিজেনে কাজ হয় না অনেকসময়ই : কোনোভাবে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাইরে থেকে সে আর অক্সিজেন ধরে রাখতে পারে না। তখন বাইরে থেকে ফুসফুসকে অক্সিজেনের জোগান দিলে সে একটু স্বস্তি পায়। এই স্বস্তির মধ্যেই ওষুধ দিয়ে ফুসফুসের ক্ষতি মেরামত করা দরকার। না হলে শুধু অক্সিজেন দেয়ার পুরো পদ্ধতিটিই বেকার যাবে।
সূত্র : বর্তমান