হাসপাতালের বিল ১৭ কোটি টাকা!
হাসপাতালের বিল ১৭ কোটি টাকা! - ছবি : সংগৃহীত
ওষুধ নিয়ে পড়াশোনার উদ্দেশে পুয়ের্তো রিকোর অ্যালেক্সিস রওনা দিয়েছিলেন মেক্সিকোয়। সেখানে থেকে পড়াশোনা করে ফের দেশে ফিরে আসবেন পরিবারের কাছে, নিজের পড়াশোনা দিয়ে সেবা করবেন মানুষের—
কিন্তু স্বপ্নপূরণ তো দূর অস্ত্, মেক্সিকো পৌঁছনোর পর থেকেই অ্যালেক্সিস অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৭ মাস হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থেকে, শরীরে ১৯টি অস্ত্রোপচার করিয়ে ক্ষত বিক্ষত শরীরে কোনোক্রমে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
আর তার চেয়েও আশ্চর্যের এর পরের ঘটনাটি। চিকিৎসার জন্য ২০ লাখ ডলার ঋণের চিঠি তার হাতে পৌঁছেছে। যা কী ভাবে শোধ করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না অ্যালেক্সিস।
পুরো নাম অ্যালেক্সিক হার্নান্ডেজ। ২০১৯ সালে তিনি মেক্সিকো রওনা দিয়েছিলেন। গুয়াডালাজারায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে তিনি থাকতে শুরু করেন। কলেজের খুব কাছে ছিল এই হোস্টেলটি। অন্যান্য অনেক ছাত্রও এই হোস্টেলে থাকতেন।
এক দিন কলেজ শুরুর ঠিক আগে গোসল সেরে ক্লাসের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন অ্যালেক্সিস। যে মুহূর্তে তিনি গরম পানির মেশিন চালু করেন, সঙ্গে সঙ্গেই সেটিতে বিস্ফোরণ হয়।
সারা শরীর পুড়ে গিয়েছিল তার। শরীরের ৭০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। শরীরে অসহ্য জ্বালা ভাব। মনে হচ্ছিল যেন শরীর ফেটে যাবে এখনই।
স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় টেক্সাসের সেনা হাসপাতালে। পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা জন্য সুনাম রয়েছে এই হাসপাতালের।
ঘটনার পর প্রথম ২০ দিন কোমাতেই কাটে অ্যালেক্সিসের। তার পরের ২ মাস আইসিইউ-তে। শরীরে ১৯টি অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা সুস্থ হন তিনি।
কিন্তু খাওয়া, হাঁটা, বসা, দাঁড়ানো, কথা বলা- সব যেন কিছুই নতুন করে শিখতে হয় তাঁকে।
প্রতি দিন এত রকম চিকিৎসা করা হত যে, রোজ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতেন আর ঘুমতে যেতেন রাত ২টায়।
এই ভাবে ৭ মাস হাসপাতালেই কেটে যায় তাঁর। ৭ মাস পর পুয়ের্তো রিকোয় নিজের বাড়ি ফিরে আসেন তিনি, ফের নতুন করে বাঁচার আশা নিয়ে।
কিন্তু বাড়ি পৌঁছনোর কয়েক দিনের মধ্যেই তার হাতে এসে পৌঁছয় হাসপাতালের চিঠি। তাতে লেখা, চিকিৎসার খরচ বাবদ হাসপাতাল অ্যালেক্সিসের থেকে ২০ লাখ ডলার পায়। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এই টাকা দ্রুত পরিশোধ করতেও বলা হয় তাকে।
এর পর থেকেই যেন বাঁচার ইচ্ছা ফের হারান তিনি। এত টাকা কী ভাবে জোগাড় করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
আইনজীবী, সরকারি কার্যালয়, বীমা অফিসের দরজায় ঘুরেও এখনো কোনো সুরাহা পাননি তিনি।
তবে ইচ্ছাশক্তির জোরে এত টাকার বোঝা মাথায় নিয়ে এবং শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করেও আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা