রোজার সময় হৃদরোগীদের যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
রোজার সময় হৃদরোগীদের যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে - ছবি : সংগৃহীত
হৃদরোগীরা রোজা পালন করতে পারবেন কিনা রোজার মাস আসলেই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিয়ত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এ ব্যাপারে দেহঘড়ির সাথে কথা বলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. খন্দকার আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, যদি এক কথায় বলতে গেলে হৃদরোগীদের রোজা রাখতে তেমন সমস্যা নেই। রোজা রাখলে বরং শরীরের জন্য আরো ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা পালন করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। সেই সাথে রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত হয়। সে হিসেবে রোজা পালন কিন্তু শরীরের জন্য খারাপ নয় বরং উপকারী।
উচ্চ রক্তচাপ রোজা পালনে কোনো প্রতিবন্ধক নয়। তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রোজা পালনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের মাধ্যমে ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করে নিতে হবে। যেসব ওষুধগুলো দিনে তিনবার খেতে হয় সেগুলো বাদ দিয়ে দিনে একবার খেলেই চলে এমন ওষুধ খেতে পারেন। চিকিৎসককে বললে আপনাকে দিনে একবার খেলেই চলে এমন ওষুধ প্রেসক্রাইব করে দিবেন।
অ্যানজাইনা পেকটোরিস, হার্ট অ্যাটাকের রোগী এমনকি যাদের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে রিং লাগানো আছে তারাও রোজা রাখতে পারবেন। এজন্য আপনাকে ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করে নিতে হবে। আপনাকে যদি অ্যাসপিরিন সেবন করতে হয় তবে তা সেহরির সময় সেবন করবেন। যদি অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ওমিপ্রাজল খেতে পারেন।
এখন দেশের আর্দ্রতা অনেক বেশি। এজন্য আমাদের ঘাম হয় বেশি। অনেক হৃদরোগীকেই ডাইইউরেটিক যেমন প্রুসেমাইড, স্পাইরোনোল্যাকটোন, টোলাজেমাইড ইত্যাদি ওষুধ খেতে হয়। এ ওষুধগুলো দেহে থেকে পানি বের করে দেয়। ঘামের সাথে সাথে এ ওষুধ দেহ থেকে বেশি পরিমাণে পানি বের করে দেয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজার সময় এ ওষুধ সেবন না করাই ভালো। যদি সেবন করতেই হয় তবে ওষুধের ডোজ কমিয়ে দিতে হবে। এ জাতীয় ওষুধগুলো সন্ধ্যার পর সেবন করুন।
রোজা পালন করতে গিয়ে যদি হঠাৎ করে সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৮০ মিলিমিটার পারদ চাপের বেশি ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ১১০ মিলিমিটার পারদ চাপের বেশি হয় তবে রোজা ভেঙে ফেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করতে হবে।
রোজা রাখলে যদি শ্বাসকষ্ট ও বুকে বেশি ব্যথা অনুভূত হয় তবে রোজা না রাখাই ভালো। যদি উচ্চ রক্তচাপের সাথে কিডনির সমস্যা থাকে তবে রোজা রাখতে হলে একজন কিডনি রোগের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। বুকের দুধ পান করাচ্ছেন এমন উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা রোজা পালনে কোনো সমস্যা নেই।
হৃদরোগীরা ইফতারিতে ভাজা পোড়া খাবেন না। অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খান। রোজার ফল খেজুর খেতে পারেন বেশি করে। পানি পান করুন বেশি করে।
একটা কথা না বললেই নয় সেটি হলা, কোনো ওষুধেরই ডোজ নিজে নিজে পরিবর্তন করবেন না। চিকিৎসক যদি মনে করেন রোজা পালনে আপনার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বা অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করার সম্ভাবনা থাকে তবে রোজা না রাখাই শ্রেয়। পরবর্তীতে রোজাগুলো আদায় করতে পারেন বা বদলি রোজাও পালন করতে পারেন।