করোনার সংক্রমণ : কতটা সতর্ক অবস্থায় আছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত?

অন্য এক দিগন্ত | Apr 26, 2021 05:18 pm
করোনার সংক্রমণ : কতটা সতর্ক অবস্থায় আছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত?

করোনার সংক্রমণ : কতটা সতর্ক অবস্থায় আছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত? - ছবি : বিবিসি

 

ভারত থেকে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে আসা ১০ বাংলাদেশী রোগী যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোববার পালিয়ে গেছেন, কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেছেন, তাদের খোঁজে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়া ১০ ব্যক্তি সাতক্ষীরা, রাজবাড়ি, খুলনা এবং যশোর জেলার বাসিন্দা।

যশোরে কী হয়েছিল
শুক্রবার এবং শনিবার এই দু'দিনে পালিয়ে যাওয়া ওই ১০ জন লোক যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

দেশে প্রবেশের সময় তারা সবাই কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেছেন, যদিও কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের নিয়ম, কিন্তু বলা আছে যে বাংলাদেশের নাগরিক কেউ যদি কোভিড পজিটিভ হয়েও দেশে প্রবেশ করতে চান মানবিক কারণে তাকে অ্যালাও করতে হবে।

সেক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, দেশে প্রবেশ করেই তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেবেন।


সে অনুযায়ী ওই ১০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে কোভিড ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুরের মধ্যে ওই ১০ জন রোগী পালিয়ে যান।

কোভিড ওয়ার্ডে পাহারার ব্যবস্থা ছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. রায় বলেছেন, লোকে কোভিড শুনলে ভয়ে পালিয়ে যায়, কাছে আসতে চায় না।

তিনি বলেন, বাইরের লোক তো ওখানে যায় না। এমন একটা অবস্থায় হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু এর মধ্যে কেউ যদি পালিয়ে যেতে চায়, তখন সে পর্যন্ত নজরদারি করা হয়ত অনেক সময়ই করা যায় না।

তিনি বলেছেন, হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর পাহারা বা নজরদারির জন্য আলাদা পুলিশ মোতায়েন বা এমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেই।

মহামারি শুরুর পর যশোর জেনারেল হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডকে কোভিড ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়।

সেই কোভিড ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৪০।

সীমান্ত দিয়ে আসা মানুষদের মনিটরিংয়ের কী ব্যবস্থা

ভারতে গত কয়েক সপ্তাহ যাবত করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দেশটিতে দিনে গড়ে কয়েক লাখ মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন।

সোমবার এক দিনেই ভারতে সাড়ে তিন লাখের বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয়েছেন। দেশটিতে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরণ শনাক্ত হয়েছে, বলা হচ্ছে এর কারণেই পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটছে।

এমন অবস্থায় বাংলাদেশের সরকার রোববার সিদ্ধান্ত নেয় যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ১৪ দিনের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত বন্ধ থাকবে।

এ সময় স্থলপথে পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের লোক চলাচল বন্ধ থাকবে।

দুই সপ্তাহের এই নির্দেশনার প্রথম দিন আজ। কিন্তু সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করা মানেই সব কিছু পুরোপুরি বন্ধ থাকা নয়।

প্রতিদিনই বিভিন্ন বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন দুই দেশের মানুষ- কেউ ফিরছেন, কেউ যাচ্ছেন। ব্যক্তি এবং যানবাহন উভয় ক্ষেত্রেই মানুষের চলাচল রয়েছে।

বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৪ দিন বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত দিয়ে স্থলপথে পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের লোক চলাচল বন্ধ থাকবে।

সেজন্য দেশের ১২টি বন্দরের মধ্যে কেবল আখাউড়া, বুড়িমারী এবং বেনাপোল- এই তিনটি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন খোলা রাখা হয়েছে, বাকি সবগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কেএম তারিকুল ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত দিয়ে আসা মানুষ এবং যানবাহনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সতর্কতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু যারা ভারত থেকে ফিরে আসছেন তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরণটি ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সীমান্তে আগত মানুষের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।

যারাই আসছেন তারা ভারতে করা কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নিয়ে আসছেন। এবং এতে কারো ফল পজিটিভ হলেও, তাকে মানবিক কারণে দেশে প্রবেশের বিধান রাখা হয়েছে।

যদিও নিয়ম আছে কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে কেউ প্রবেশ করলে তাকে সীমান্ত থেকেই হাসপাতালে নিতে হবে।

কিন্তু সেখানেও নজরদারির ব্যবস্থা নেই, যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে রাগী পালানোর ঘটনাই তার প্রমাণ।

বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ইসলাম বলেছেন, এখনি নমুনা পরীক্ষা চালু করার ব্যবস্থা করা না গেলেও সতর্কতা বাড়ানো হচ্ছে।

সীমান্ত দিয়ে আসা মানুষের প্রতি নজরদারি এবং সীমান্ত নিরাপদ করার বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ মিলে সোমবার একটি বৈঠক করছে, যা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছিল।

তবে ইসলাম বলেছেন, পণ্যবাহী ট্রাকের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় ট্রাকচালক যারাই আসবে, প্রথমেই সীমান্তে গাড়ির বডি স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এরপর ট্রাকচালক ব্যক্তির যেসব কাজ রয়েছে মানে তার কাগজপত্রের কাজকর্ম, মাল আনলোড করা এবং খাওয়া ও বিশ্রাম- এসব কাজ যতটা সম্ভব যেন ওই চালক গাড়িতে বসেই সারতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্রাম এবং প্রাত:কর্ম সারতে হলে ট্রাকচালকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে তাদের সঙ্গে অন্যদের মেলামেশা হবে না।

কিন্তু মানব চলাচলের ক্ষেত্রে সাধারণত কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসার যে ব্যবস্থা, তার বাইরে আলাদা কোনো নজরদারির ব্যবস্থা নেই।

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত পথে ২৫ এপ্রিল অর্থাৎ রোববার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন ৫৮৭ জন মানুষ, এবং ভারতে গেছেন ২১৭ জন মানুষ।

একই দিনে দেশের ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ১৮২৮টি ট্রাক, এবং দুইটি বোট প্রবেশ করেছে।

স্বাভাবিক সময়ে দিনে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করেন সীমান্ত পথে।

বন্দরে সতর্কতা পালন কতটা হয়
ভারত থেকে গত সপ্তাহে বেনাপোল বন্দর হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন যশোরের সুমাইয়া আক্তার।

বাবা আর স্বামীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন তিনি।

তিনি বলেছেন, চেকপোস্ট যেগুলো আছে, সেখানে তেমন কিছু দেখে না। খালি পাসপোর্ট দেখে, মালপত্র দেখে, কিন্তু কোভিডের যে টেস্ট করছি আমরা ওই কাগজ খুলেও দেখে নাই।

বেনাপোল দিয়েই দেশে ফিরেছেন খুলনার বাসিন্দা প্রতিমা হালদার।

তিনি বলছেন, চেকপোস্টে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কোন ধরণের কড়াকড়ি দেখি নাই আমি। আর কোনো মালপত্র স্যানিটাইজ করা বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করতেও দেখিনি।

সূত্র : বিবিসি

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us