আত্মবিশ্বাস আর কঠিন পরিশ্রম : বিয়ন বোর্গের কাহিনী

রহমান মৃধা | Apr 26, 2021 12:55 pm
 বিয়ন বোর্গ

বিয়ন বোর্গ - ছবি : সংগৃহীত

 

পরাজয় মানে ব্যর্থতা। আবার পরাজয় মানে হতে পারে সফলতা, যদি পরাজয়কে জয় করার প্রবণতা মনের মধ্যে গড়ে উঠে। যদি বলি সেকেন্ড প্লেস ইজ ফর লুজার তাহলে কি ভুল হবে? না। পৃথিবীর যেকোনো প্রতিযোগিতায় একটি মাত্র বিজয়ের স্থান রয়েছে সেটা হলো প্রথম স্থান। বাকি স্থানগুলোর কি তাহলে কোনো মূল্যই নেই? আছে। মনে কি পড়ে সেই কথাটি--- আলো বলে, অন্ধকার তুই বড় কালো, অন্ধকার বলে, ভাই, তাই তুমি আলো?

আলো হলো উজ্জ্বল দীপ্তিময়, অন্ধকার হলো আলোহীন তমসা। আলোর বিপরীত রূপ হলো অন্ধকার। আলোর প্রতি আকর্ষণ যতখানি, অন্ধকারের প্রতি ততখানিই অনাগ্রহ। তবু মেনে নিতে হবে, অন্ধকার আছে বলেই আলো অত দীপ্তিময়, আলোর গৌরব বৃদ্ধি। আলো ও অন্ধকারের মতো মানব সমাজের বিপরীতধর্মী কত কিছুই আছে- ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্য, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা, উত্থান-পতন, বলে শেষ করা যায় না। ঐ বিপরীত ধর্মিতা সৃষ্টিকে করেছে বৈচিত্র্যময়, সুন্দর ও মধুময়।

দুঃখ নেই শুধু সুখ, সে তো 'হ্যাপি প্রিন্স' -এর মতো বিড়ম্বিত জীবন। পতনের হতাশাময় জীবনের মাঝে উত্থানের আনন্দঘন মুহূর্তের তুলনা হয় না। কাজেই আমাদের কাছে অন্ধকারের মতো মন্দ, পাপ, দুঃখ, বেদনা, নিরাশা, পতন ইত্যাদি যতই অনভিপ্রেত হোক, ওগুলির প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। এ কথা তো ঠিক যে, ব্যর্থতা ও অসাফল্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকে সাফল্যের চাবিকাঠি। সেজন্য সৃষ্টিতে বিপরীতধর্মীর সহাবস্থান অপরিহার্য।

খোলা আকাশ কি এতো ভালো লাগতো যদি কিছু কিছু মেঘ নাহি থাকতো। বলি জীবন কি সুন্দর হতো এমন যদি একটুও ব্যথা নাহি থাকতো। এসব কথার মধ্যে যে সত্যতা লুকিয়ে রয়েছে তা অস্বীকার করা কঠিন।

তবে একদিকে দরিদ্রতা যেমন সহজেই নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাতে সাহায্য করে অন্যদিকে বিলাসিতা অলসতায় পরিপূর্ণ করে,আর গ্রাস করে জীবনের সুযোগগুলোকে। যারা ভাগ্যের উপর সবকিছু ছেড়ে দিয়ে পরাজয়কে বরণ করে তারা হয় ব্যর্থ আর যারা সব বাঁধা সত্ত্বেও চেষ্টা চালিয়ে যায় তাঁরাই হয় সফল।

তার মানে জীবন গোলাপ শয্যা নয়। আমার ছেলে মেয়ে টেনিস খেলে। খেলাধুলায় হার-জিত দেখতে দেখতে আমি অভ্যস্ত। সুইডেন খেলাধুলায় বিশ্বের সেরা দেশের সারিতে। টেনিসে সুইডেন অতীতে ডোমিনেট করেছে। বিয়ন বোর্গের নাম নিশ্চিত সবারই জানা। বিয়নের ছোট ছেলে আমার মেয়ের সঙ্গে একই ক্লাবে যখন টেনিস প্রাক্টিস করেছে, আমি মাঝে মধ্যে অবসরে বিয়নের সঙ্গে তার ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছি। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম টেনিসে ‘ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান’ পদবি ধরে রাখা, একদিন নয় একটানা (Åren 1979 till 1981 rankades svensken som världsetta under sammanlagt 109 veckor) ৭৬৩ দিন কীভাবে সম্ভব হয়েছিল?

বিয়ন তার উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমার আত্মবিশ্বাস এবং প্রতিযোগীদের আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল অত দিন প্রথম স্থানটি ধরে রাখতে পারার সিক্রেট।’ বললাম, বিষয়টি ঠিক বুঝলাম না একটু খুলে বলুন প্লিজ। তিনি বলেছিলেন দেখো, বিশ্বের সেরা হওয়াটা সবসময়ই অসাধারণ একটা তৃপ্তির ব্যাপার। কিন্তু একইসাথে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। প্রত্যাশা থাকে ভয়ানক। অনেকে আমার সঙ্গে খেলবে জেনেই মেন্টালি পরাজিত হয়েছে, কারণ তারা প্রথম থেকেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে যে তারা আমাকে পরাজিত করতে পারবে না। তবে প্রত্যেকেই চাইতো আমাকে হারাতে। আর আমি আরও বেশি চাপের মুখে থাকতাম। কারণ, আমি প্রতিটা ম্যাচে জয় চাইতাম। এটা একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার ছিলো। উইম্বলডন জেতো, ইউএস ওপেন জেতো, সবাইকে হারাও। এসব ব্যাপার মানসিকভাবে আমাকে খুব চাপে ফেলতো। পরে কোনো এক সময় যখন জন ম্যাকেনরো প্রতিযোগিতায় জিতলো অন্যেরাও বিশ্বাস করতে শুরু করলো ম্যাকেনরো যখন জিততে পারে আমরা কেন পারব না! শেষে সেই কথাই সত্যি হয়েছিল, আমার মতো ম্যাকেনরোও সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়দের একজন হয়েছিল।

টেনিস, ফুটবল, ক্রিকেট, লেখাপড়া, চাকরি যে বিষয়ই দেখি না কেন আত্মবিশ্বাস এবং কঠিন পরিশ্রম সাফলতার চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে। বার বার ব্যর্থতা সত্ত্বেও চেষ্টা করতে করতে শেষে যে বিজয় জীবনে আসে সে এক মহাআনন্দ। এখন জীবনে বাধা এলো আর ভেঙ্গে পড়লাম তাহলে তো হবে না পরাজয়কে জয় করা?
আমার জীবনে আপ এন্ড ডাউন দেখেছি তবে হতাশ হইনি কখনও। আমি এখনও যেমন বিশ্বাস করি বাংলাদেশ একদিন সকল দেশের মধ্যে সেরা দেশ হবে কোনো না কোনো বিষয়ে। বিশ্বাসে মিলায় ভাগ্য তর্কে বহু দূর, সেক্ষেত্রে ভাবা যেতে পারে এমনটি করে—

Charge your conception of yourself and you will automatically change the world in which you live. Do not try to change others. They are only messengers telling you who you are. Revalue yourself and they will confirm the change. So it’s never too late, we’ve still got time, It’s never too late to change our mind to fight for our rights and be the best useful human being for mankind.

লেখক : সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) ফাইজার
rahman.mridha@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us