একবার করোনা হলে, দ্বিতীয়বার হওয়ার শঙ্কা কতটা
করোনাভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছে করোনাভাইরাস। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সম্ভবত ভারতে। দেশটিতে প্রতি সেকেন্ডে ১ জন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অবস্থাও তথৈবচ, প্রায় সকলকেই আতঙ্কিত। এরই মধ্যে অনেকে দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা চিন্তায় পড়েছেন। সাধারণত চিকেন পক্স, হাম-সহ যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার ফলে দ্বিতীয় বার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। কিন্তু ইদানীং এমন রোগী পাওয়া যাচ্ছে যারা দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হয়েছেন। কেন এমন হচ্ছে?
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত জানালেন যে, কোভিড ১৯ আদতে এক ধরণের ফ্লু ভাইরাস। জ্বর সর্দি যেমন একাধিকবার হয় করোনার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেই রকমই। অত্যন্ত সংক্রামক এই ভাইরাসটির চরিত্রগত পরিবর্তনের ফলে অনেকেই দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘আমরা যেমন ভাইরাসকে আটকে দেয়ার চেষ্টা করছি, তেমনই ডারউইনের সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট তত্ত্ব মেনে ভাইরাসও নিজে বাঁচার তাগিদে নিজেকে বদলে ফেলছে। এই কারণেই কোভিড মুক্ত হবার পরও নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছে।’
কোভিড ১৯ ভাইরাসের চরিত্র নিয়ে এখনো ধাঁধায় আছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তাই এই ভাইরাস নিয়ে অনেক গবেষণা প্রয়োজন। তিনি এ-ও বললেন, ‘আমাদের দেশে ভাইরাস রূপ বদলে কী ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। কেননা এখন পর্যন্ত এই নিয়ে কোনো বিজ্ঞান সম্মত গবেষণা প্রকাশিত হয়নি। ব্রাজিল, ইউকে বা সাউথ আফ্রিকার রূপ-পরিবর্তিত ভাইরাস সম্পর্কে বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমাণ থাকলেও আমাদের দেশের নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিস্তর গবেষণা দরকার। তবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, গতবারের তুলনায় অসুখটা এবারে অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং শিশু ও কম বয়সীরাও গতবারের তুলনায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।’
ভাইরাস যতবার রূপ বদলাবে, তত তার বিরুদ্ধে লড়াইটা দীর্ঘ হবে। মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানালেন, এই জন্যই এত দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে এখন। রোগীদের মধ্যে বেশ কিছু মানুষ দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হয়েছেন। বিশেষ করে যারা ছদ্ম-নিরাপত্তায় রয়েছেন যে, একবার সংক্রমণ হয়েছে বলে তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাদের মধ্যেই দ্বিতীয়বার সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে বলে সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের অভিমত।
সম্প্রতি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ শশী তারুর টিকাকরণ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। তা হলে কি ভাইরাস আটকানোর কোনোই উপায় নেই? সুকুমারবাবু এ বিষয়ে বললেন, ‘যারা টিকা নিয়েছেন তাদের সংক্রমণ আটকানো না গেলেও বিশেষ উপসর্গ থাকছে না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী যারা কোভিশিল্ড টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার ০.০৩ ভাগ। সুতরাং সংক্রমণের মারাত্মক দিক এড়াতে মাস্ক পরা ও টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা