বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিদায় ভারতের প্রধান বিচারপতির!
বোবডে - ছবি : সংগৃহীত
শুক্রবার ছিল তার ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে কর্মজীবনের শেষ দিন। তার ঠিক আগে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভারতের আধডজন হাই কোর্টে যখন কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রের অব্যবস্থা নিয়ে মামলা চলছে, তখন সুপ্রিম কোর্ট মামলা শুরু করায় প্রশ্ন ওঠে, এতে কি আদতে মোদি সরকারেরই সুবিধা হয়ে যাবে? প্রবীণ কৌঁসুলিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, হাই কোর্টের যাবতীয় মামলা নিজের হাতে তুলে নেবে সুপ্রিম কোর্ট।
শনিবার প্রধান বিচারপতি বোবডে প্রবীণ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা আমাদের নির্দেশ না পড়েই তার পিছনে উদ্দেশ্য খুঁজেছেন। প্রধান বিচারপতি যুক্তি দেন, তারা কোনো হাই কোর্টের মামলাই নিজের হাতে তুলে নেননি। হাই কোর্টকে নিরস্তও করেননি।
কাল দাভে ছাড়াও মুকুল রোহতগি, সঞ্জয় হেগড়ে, অঞ্জনা প্রকাশের মতো আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলাও করে। দাভে যুক্তি দেন, প্রধান বিচারপতির কথায় ধারণা হয়েছিল, তিনি হাই কোর্টের মামলা নিজের হাতে তুলে নিতে চান।
কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা দাভের সমালোচনা করে বলেন, প্রবীণ আইনজীবীরা ধারণার ভিত্তিতে আদালতকে দোষারোপ করছেন। দাভে পাল্টা তাকে বলেন, আপনার ধারণা নিয়ে কথা না বলাই ভালো। ধারণার উপর ভর করেই সরকারকে বাঁচিয়ে চলেছেন।
বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিং বলেন, আপনিই বলেছিলেন, কোনো পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় হাঁটছেন না। সুপ্রিম কোর্ট আপনার সেই ধারণা মেনেও নিয়েছিল।
পরিস্থিতি সামলাতে মেহতা বলেছেন, প্রধান বিচারপতির শেষ দিনে তাকে ভালোবাসার সঙ্গে বিদায় জানানো দরকার। কোভিড মোকাবিলা নিয়ে কেন্দ্র নিজের জবাব দিতে আরো সময় চায়। মঙ্গলবার পর্যন্ত তাই মামলা স্থগিত হয়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তিনি নিজের পক্ষে যতখানি সম্ভব ভালো কাজ করেছেন। তার বিদায় সংবর্ধনায় বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বিচারপতি ও আইনজীবীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানের প্রয়োজনের কথাও বলেছেন।
কিন্তু বিতর্ক থামেনি। কোভিড মামলায় বর্তমানে লন্ডনে বসবাসকারী আইনজীবী হরিশ সালভেকে আদালত-মিত্র নিয়োগ করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। অভিযোগ ছিল, স্কুলের বন্ধু বলেই প্রধান বিচারপতি সালভেকে নিয়োগ করেছেন। আজ সালভে ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু আইনজীবীদের প্রশ্ন, প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালের সাহায্য না নিয়ে সালভের সাহায্য নিতে গিয়েছিলেন কেন? যেখানে লন্ডনে থাকা সালভের ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। বেণুগোপাল এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তার বক্তব্য, তিনি এতে অখুশি হননি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
শাহরুখ খানকে অযোধ্যা মামলার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চেয়েছিলেন বোবদে
অযোধ্যার বাবরি মসজিদ মামলায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানকে চেয়েছিলেন সদ্য সাবেক হওয়া ভারতের প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে। শুক্রবার বোবদের এই ইচ্ছার কথা জানালেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিংহ। গতকালই অবসর নিলেন বোবদে। তার আগে আয়োজিত হয়েছিল একটি ভারচুয়াল ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানের। সেখানেই এই অজানা কথাটি সকলের সামনে তুলে ধরলেন বিকাশ। অযোধ্যা মামলার রায়দানকারী বিচারপতিদের বেঞ্চে ছিলেন বোবদে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় বিকাশ বলেন, ‘অযোধ্যা মামলা নিয়ে একটি গোপন কথা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। এত দিন এটা আমার আমার বিচারপতি বোবদের মধ্যেই ছিল। শুনানির শুরুর দিকে উনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন মধ্যস্থতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। ওই সময়ই তিনি আমাকে বলেছিলেন, শাহরুখ খান কি মধ্যস্থতার অংশ হতে রাজি হবেন? আমি শাহরুখের সঙ্গে এই নিয়ে কথাও বলেছিলাম। উনিও অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন মধ্যস্থতার বিষয়ে। তার বিশ্বাস ছিল, এভাবেই আমাদের দেশে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রাখা সম্ভব।’
এবিষয়ে শাহরুখের একটি পরামর্শের কথাও তুলে ধরেন বিকাশ। তার কথায়, ‘তার পরামর্শ ছিল হিন্দু মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করুন কোনো খ্যাতনামা মুসলিম। এবং একইভাবে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করুন কোনো বিখ্যাত হিন্দু ব্যক্তিত্ব। দুর্ভাগ্যবশত, মধ্যস্থতার ব্যাপারটা পরে আর এগয়নি।’
আলোচনার মধ্যে দিয়ে অযোধ্যার বিতর্কিত জমি বিবাদ মেটাতে ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ তিনজন মধ্যস্থতাকারীর একটি কমিটি গড়েছিল। তাতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এফ এম আই কলিফুল্লা, অধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব শ্রী শ্রী রবিশংকর ও প্রবীণ আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু। শেষ পর্যন্ত এতে কাজ না হওয়ায় শুরু হয় শুনানি। ৪০ দিনের শুনানির শেষে ২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার রায় দেয়। পাঁচ বিচারপতিদের ওই বেঞ্চের অন্যতম সদস্য ছিলেন এসএ বোবদে। পরে তিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি হন। শুক্রবার অবসর নিলেন তিনি।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন