ট্রিপল মিউটেশন কেন এত ভয়াবহ!
ট্রিপল মিউটেশন কেন এত ভয়াবহ! - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের আতঙ্ক কমার বদলে দিন দিন বেড়েই চলেছে। যত দিন দিন যাচ্ছে ততই নতুন নতুন রূপে হাজির হচ্ছে এই মারণ ভাইরাস। ভারতে হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে ডবল মিউট্যান্ট মনে করা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে ভাইরাসের ট্রিপল মিউটেশন-এর খবর সামনে এসেছে। নতুন রূপটিতে তিনটি আলাদা কোভিড স্ট্রেন পাওয়া গেছে, যা ট্রিপল মিউটেশন নামে পরিচিত।
বিজ্ঞানীদের মতে, নতুন করোনা ভেরিয়্যান্টের কারণে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
ট্রিপল মিউটেশন কী?
করোনা ভাইরাসের ‘ডাবল মিউট্যান্ট' আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই এবার দেশে থাবা বসাল ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভেরিয়্যান্ট'। ভারতে সর্বপ্রথমে ডাবল মিউটেশন ভেরিয়্যান্ট পাওয়া গিয়েছিল, যা করোনার দু'টি আলাদা স্ট্রেন নিয়ে গঠিত। এরপর এখন ট্রিপল মিউটেশন ভেরিয়্যান্ট-এ করোনার তিনটি স্ট্রেন পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, মিউটেশনগুলো কেবলমাত্র ভারতে নয়, বরং সারা বিশ্বে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ট্রিপল মিউটেশন, ডাবল মিউটেশনের চেয়ে আরো বিপজ্জনক হতে পারে। এখন পর্যন্ত মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিতে করোনার এই ট্রিপল মিউট্যান্টের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
ট্রিপল মিউটেশন কী সংক্রামক?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিডের তিনটি আলাদা স্ট্রেন মিলে তৈরি এই নয়া ভেরিয়্যান্টের সংক্রমণ ক্ষমতা প্রায় তিন গুণ। তাদের মতে, ট্রিপল মিউটেশন ভেরিয়্যান্ট কতটা মারাত্মক বা কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তা জানার জন্য এখনো আরো অনেক গবেষণা করতে হবে। তবে ট্রিপল মিউট্যান্ট আরো মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে। এই নয়া স্ট্রেনের পোশাকি নাম ‘বেঙ্গল স্ট্রেন'। পশ্চিমবঙ্গে এর দাপাদাপির কারণেই নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে ‘বেঙ্গল'।
ডাবল মিউট্যান্ট-এর কারণে শুধুমাত্র আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে না, পাশাপাশি এবার বাচ্চাদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বর্তমানের ভ্যাকসিন কী এর বিরুদ্ধে কার্যকরী হবে? ভ্যাকসিনের প্রভাব এই ভেরিয়্যান্ট-এর ওপর পড়বে কিনা, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র : বোল্ডস্কাই
করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এলে পরিস্থিতি আরো খারাপের আশঙ্কা বিশ্লেষকদের
বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন করে বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে এলে পরিস্থিতি আরো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক তথ্য উপাত্ত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পদক্ষেপ, ভাইরাস বিস্তারের ধরন- এমন বিভিন্ন কিছু বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকদের দলটি যে সম্ভাব্য চিত্র তৈরি করেছে তাতে একথা বলা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বিশ্লেষক দলটির প্রধান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশাল সীমান্ত ভারতের সাথে। তাই আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ যতই বন্ধ থাকুক তাতে সেখানকার ভাইরাস আসবে না এই নিশ্চয়তা নেই। ভারতে এর ব্যাপকভাবে বিস্তার হচ্ছে এবং সেখানে ভাইরাসের ডাবল ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে।’
‘অন্য দিকে আমরা আগে ধারণা দিয়েছিলাম যে সেকেন্ড ওয়েভের চূড়া বা পিক আসবে মে মাসের শেষে বা জুনের দিকে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই স্বল্প মাত্রায় লকডাউনসহ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন আমাদের মডেল বলছে যে জুলাইতে আসতে পারে সেকেন্ড ওয়েভের পিক বা চূড়া। তবে স্বাস্থ্যবিধি সবাই ঠিক মতো মানলে সেটি তেমন খারাপ নাও হতে পারে।
এখানে পিক বা সর্বোচ্চ চূড়া বলতে দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
ড. শাফিউন নাহিন শিমুল যে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনসোর্টিয়ামের অংশ হিসেবে কাজটি করছেন এবং তাদের প্রতি দু’সপ্তাহ পর পর সেখানে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য চিত্র সম্পর্কে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করতে হয়।
বাংলাদেশী বিশ্লেষকদের দলটির আনুষ্ঠানিক নাম বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ। অক্সফোর্ডের ওই কনসোর্টিয়ামের সাথে ৪২টি দেশের গবেষক ও বিশ্লেষকরা কাজ করছেন।
সূত্র : বিবিসি