নেতানিয়াহুর বিচার
নেতানিয়াহু - ছবি : সংগৃহীত
ইসরাইলে অপর একটি অনির্ণায়ক বা অমীমাংসিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশটি যখন সঙ্কটজনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, তখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার গঠনের প্রয়াস শুরু করলে গত সোমবার তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিচারের কার্যক্রমও শুরু হয়। দুর্নীতির মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে নেতানিয়াহু আদালতে উপস্থিত হলে ইসরাইলের আইনগত এবং রাজনেতিক নাটক একই বিন্দুতে এসে মিলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ৭১ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে গত মাসে চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আদালতে প্রতিবাদকারীরা তাকে ঘেরাও এবং ‘অপরাধী প্রধানমন্ত্রী’ বলে আখ্যায়িত করে। ইসরাইলে এই প্রথম একজন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলেন। তাকে ঘুষ, প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার অভিযোগের ব্যাপারে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ব্যক্তিগতভাবে জেরুসালেমের জেলা আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
অতি সম্প্রতি নির্বাচনে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী লিকুদ পার্টি ৩০ আসনে জয়লাভ করে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার জন্য ৬১ আসনের সমর্থন জোগাড় করা তার জন্য খুবই কঠিন। নেতানিয়াহুর বিরোধী শিবির আদর্শিকভাবে বিভক্ত। তারা কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে তারা রয়েছে নেতৃত্বের সঙ্কটে।
নেতানিয়াহু দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে উপস্থিত হলে প্রধান কৌঁসুলি লিয়াত বেন অ্যারি বিচারকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘সরকারি দুর্র্নীতির মারাত্মক একটি মামলায় জড়িত।’ অবৈধভাবে উপহার গ্রহণ এবং মিডিয়ায় ইতিবাচক কভারেজ পাওয়ার জন্য মিডিয়ামোগলদের বাণিজ্যিক সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বেন অ্যারি অভিযোগ করেছেন, ‘নেতানিয়াহু তার হাতে থাকা ব্যাপক সরকারি ক্ষমতা অবৈধভাবে ব্যবহার করেছেন। তার ব্যক্তিগত বিষয়াদিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য’ মিডিয়ামোগল তথা মিডিয়ার নির্বাহীদের সাথে তিনি সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আদালতে শুনানি শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পর এক অনির্ধারিত বক্তৃতায় নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, আদালত তার অফিসের অপব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা দেখতে অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টা মতোই।’ নেতানিয়াহুর নিয়োগকৃত অ্যাটনি জেনারেল আভিচাই মানদিলব্লিতের তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি এ ধরনের ভূমিকা পালন করার কারণে নেতানিয়াহু তার তীব্র সমালোচনা করেন। বাদিপক্ষ তাদের প্রথম সাক্ষী ওয়ালা নিউজ সাইট আইলান ইয়েশোয়ার সাবেক প্রধান সম্পাদককে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকার আগেই নেতানিয়াহু আদালতের অনুমতি নিয়ে আদালত ত্যাগ করেন।
আইনজীবীরা নিউজ সাইটটির মালিক শাউল এবং আইরিস এলোভিচের সাথে তাদের বিভিন্ন সম্পাদকীয় ও নিবন্ধে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করার বিনিময়ে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি করতে সহায়তা দেয়ার জন্য নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করেছেন।
ইয়েশোয়া সাক্ষ্য দেন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কলঙ্কলেপন করে, সংবাদ ও সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখার জন্য তিনি নেতানিয়াহুর মিত্রদের কাছ থেকে সদা সর্বদা নির্দেশনা পেয়েছেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘এটা সুস্পষ্ট যে, আমাদেরটা এমন একটা ওয়েবসাইট যেখানে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ীই আমরা কাজ করেছি।’
এদিকে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট রিভলিন মাখাদিন বিভিন্ন পার্টির কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। সোমবার তার আলাপ-আলোচনা শেষ হয়। তার পক্ষে নেতানিয়াহুর ৫২ জন এমপির সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, তার পক্ষে সর্বোচ্চ সংখ্যক এমপির সমর্থন আছে। লিকুদ পার্টি, দু’টি উগ্রপন্থী ইহুদি পার্টি এবং চরম ডানপন্থী ধর্মীয় ইহুদিবাদী জোট তার পক্ষে রয়েছে বলে নেতানিয়াহু প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
সাবেক টিভি উপস্থাপক ইয়ার লাপিদ তার মধ্যপন্থী ইয়েশ আতিদ পার্টির ১৭ আসনসহ তার পক্ষে ৪৫ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন। উল্লেøখ্য, লাপিদ এ রকম নির্বাচনী ফলাফলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। কয়েকটি জোট ছোট ও আদর্শিকভাবে নেতানিয়াহুর বিরোধী দল তার পক্ষে রয়েছে। ইয়ামিনা তার সাতটি আসন নিয়ে বেনেটকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সমর্থন দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর বিরোধী শিবিরে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিয়ে লাপিদ বলেছেন, তিনি বেনেটকে প্রস্তাব দিয়েছেন, ‘তিনি আমার সাথে সরকার গঠনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। আমরা দু’জন পালাক্রমে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারি। দু’জনের বোঝাপড়া অনুযায়ী আমি তাকে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছি।’
লাপিদ বলেন, আদালতকে আক্রমণ করে নেতানিয়াহুর দেয়া বেপরোয়া ও অসংযত বক্তব্য যে অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’, তা প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাকে অপসারণ করার জন্য ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নেয়া প্রয়োজন।
লিকুদ পার্টি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিউহোপ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা গিদিয়োন সার কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি প্রধানত আরব জয়েন্ট লিস্ট এবং মনসুর আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ইসলামিক পার্টির সাথে রয়েছেন।
মনসুর আব্বাস ইসরাইলি রাজনৈতিক ইতিহাসের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি একজন আরব ও মুসলিম নেতা যিনি বলেছেন, তিনি আরব জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার জন্য ইসরাইলি সরকারের যোগদান করবেন। আব্বাসের দলের চারটি পার্লামেন্ট আসন কোন পক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তা নিশ্চিত করবে।
এদিকে, বিভিন্ন দলের সাথে মতবিনিময়ের পর ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট রিভলিন নেতানিয়াহুকেই আবার সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আইনানুযায়ী নেতানিয়াহু সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় পাবেন। তিনি প্রেসিডেন্টকে আরো দু’সপ্তাহ সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করতে পারেন। নেতানিয়াহুকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানোর আগে প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন, কোনো প্রার্থীরই কোয়ালিশন সরকার গঠনের ম্যান্ডেট নেই। নেতানিয়াহু এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়েই সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে দেশটিতে পঞ্চম দফা নির্বাচন অনুষ্ঠান অনিবার্য হয়ে ওঠবে। হ
এশিয়া টাইমসের সৌজন্যে
ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার