যেভাবে রোজা রাখলে কবুল হয়
যেভাবে রোজা রাখলে কবুল হয় - ছবি : সংগৃহীত
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকালীন মুক্তির আশায় মুসলিম ব্যক্তি তার সব কাজকর্ম সম্পাদন করবে; এটাই স্বাভাবিক ও কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা। এই কথাই যদি সত্য হয় তাহলে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আল্লাহর বাণী ‘রোজা আমার জন্য, আর আমি নিজেই রোজার প্রতিদান দিই’ এর ব্যাখ্যা কী? এখানে রোজাকে নিজের সাথে কেন সম্পৃক্ত করলেন মহান প্রভু। এর অন্তর্নিহিত রহস্য কী?
এর ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম বলেন, সব ইবাদতের চেয়ে রোজায় স্বতন্ত্র এমন কিছু দিক রয়েছে যা আর কোন ইবাদতে হয় না। রোজায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, ভেতরে ও বাইরে, একাকী ও জনসমাগম সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর ভয় ও আনুগত্যের বিষয় রয়েছে। ভয় ও আনুগত্যের প্রভাব না থাকলে একাকী অবস্থায় রোজা ভেঙে পানাহার করা খুবই সহজ বিষয়। তাই বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে গ্রহণযোগ্য রোজা হলো, খাদ্য ও পানীয় ত্যাগের পাশাপাশি মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের সকল আকাক্সক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। নিজেকে আল্লাহর ইচ্ছায় ছেড়ে দেয়াকে সৌভাগ্যবান মনে করবে। বুখারির বর্ণনায় রয়েছে, ‘সে তার খাদ্য, পানীয় ও মনোকাক্সক্ষা ত্যাগ করে শুধু আমার জন্য।’ এ কারণেই সব ইবাদত থেকে রোজা বিশেষ মর্যাদায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
রোজা হলো, আল্লাহর আমল-জিকির, তার নৈকট্য লাভের আত্মিক জিহাদ, শরীরের চাহিদার ওপর হৃদয়ের আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া এবং দুনিয়ার ভালোবাসাকে তুচ্ছজ্ঞান করে ঐশী প্রেমকে স্থায়ী ও ফলদায়ক প্রমাণের এক অনন্য ইবাদত।
চূড়ান্ত কথা হলো, শুধুমাত্র খাদ্য ও পানীয় ছাড়ার নাম রোজা নয়। নবীজী সা: বলেছেন, ‘যে মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যায় আবর্তিত হওয়ার কাজ ছাড়বে না, তার খাবার ও পানীয় ত্যাগের কোনো মূল্য নেই আল্লাহর কাছে।’
অন্য হাদিসে নবীজী সা: বলেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ । (এই ঢালকে ছিদ্র করা যাবে না) তাই রোজাদার ব্যক্তি অশ্লীল কথা ও কাজে লিপ্ত হবে না, বিকট আওয়াজে কথা বলবে না। যদি কেউ তাকে কটু কথা বলে, অথবা তাকে ঝগড়ায় প্ররোচিত করে তখন সে যেন বলবে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।’
সামাজিক দৃষ্টিতে প্রতিশোধ গ্রহণ, বদলা নেয়া যে কোনো আত্মমর্যাদাবান মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেখুন, রোজাকে পূর্ণাঙ্গ করার জন্য মুমিনকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, রোজাদার মুমিন ব্যক্তি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করবে, তার প্রভুর আদেশ ও পরকালের পুরস্কারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিবে। তাহলে দাঁড়াল যে, রোজা হলো- সব প্রকার খাদ্যাভ্যাস ও মানবাভ্যাসের নিয়ন্ত্রণ করে স্বর্গীয় গুণে গুণান্বিত হয়ে এই মাসটি অতিবাহিত করা।
আমাদের জানতে হবে যে, মুসলিম উম্মাহর জীবনে ও ইতিহাসে রোজার আলাদা একটি অবস্থান রয়েছে। তা হলো, রোজায় আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে যে মজবুত সম্পর্ক স্থাপিত হয় তার মূলে রয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারিম। এই মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়, এই মাসে অধিকহারে কুরআন চর্চা হয়, কুরআন তিলাওয়াত হয়, রাতে কুরআন তিলাওয়াতে স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কুরআনের বদৌলতে রমজানের এত গুরুত্ব আমাদের জীবনে। তা আমাদের বুঝতে হবে।
রমজানে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য পরিলক্ষিত যায়। সূর্য ডোবার পর যখন সবাই একসাথে ইফতার শুরু করে। শেষ রাতে যখন সবাই একসাথে সেহরি গ্রহণ করে। এখানেই যে রমজানের মহত্ব নিহিত তা আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে। রমজান আমাদের একতা শিক্ষা দেয়। এসব দিক লক্ষ রাখলেই রমজানের ফজিলত লাভ করে আমরা ধন্য হতে পারব। আমাদের সিয়াম সাধনা মহান প্রভুর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, কক্সবাজার