শিশুদের করোনা কতটা বিপদের?
শিশুদের করোনা কতটা বিপদের? - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসকে মনে করা হতো বয়স্কদের রোগ হিসেবে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ছোটরাও বড় সংখ্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর কারণ কী?
এর কারণ সম্পর্কে এখনই জোর দিয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে ভাবা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের মিউটেশন বা ভাইরাসের চরিত্র বদলই এর পিছনে রয়েছে। আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেইনের বাড়বাড়ন্তের কথা সামনে আসছে। এক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের ই৪৮৪কিউ ও এল৪৫২আর স্ট্রেইন দু’টি একত্রিত হয়ে যেই ভাইরাস তৈরি করেছে তাকে ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেইন বলা হচ্ছে। এই ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেইন অত্যন্ত সংক্রামক। এছাড়া এদেশে প্রবেশ করা বিদেশী স্ট্রেইনগুলোর কথা ভুললেও চলবে না। ইংল্যান্ড স্ট্রেইন, দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেইনও খুবই সংক্রামক। দ্বিতীয় ঢেউয়ের মিউট্যান্ট ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন মানুষের দেহকোষে সহজেই আটকে যাচ্ছে এবং দ্রুত নিজেদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করে ফেলছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে চলেছে।
তবে শুধু ভাইরাসের চরিত্র বদলকে দোষ দিলে চলবে না। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বহুলাংশে কমে গিয়েছিল, এটাও মাথায় রাখতে হবে। স্কুল বন্ধ থাকলেও বহু ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে যাওয়ায় কোনো খামতি নেই। বাজার, দোকান, বিয়েবাড়ি, জন্মদিন, ঘুরতে যাওয়া— অভিভাবকরা বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে মানুষের ভিড়ে পৌঁছে গিয়েছেন। আর অনেক সময়ই বাচ্চা বা সামনে থাকা কারো মুখেই মাস্ক থাকছে না। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। বড়দের সঙ্গে ছোটদের মধ্যেও সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। তাই মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
এই ট্রেন্ড কতটা চিন্তার?
আগে যেখানে মোট আক্রান্তের ৪ থেকে ৫ শতাংশ ছিল বাচ্চা। এবার সংখ্যাটা ১৫ শতাংশ বা তারও বেশি হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। তাই চিন্তা তো থাকছেই।
কোন বয়সের বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে?
বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েরা বাড়ির বাইরে বেরয় বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবে তাদেরই বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সব বয়সের বাচ্চারাই প্রায় সমান হারে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকী এক বছর বয়সের নিচের বাচ্চাদেরও আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
উপসর্গ ফুটে ওঠার প্রবণতা কি বেড়েছে?
গতবার বহু বাচ্চার মধ্যে করোনা সংক্রমণ থাকলেও উপসর্গ দেখা যেত না। তারা অ্যাসিম্পটোমেটিক থাকত। কিন্তু এবার সেই ধারার অনেকটাই বদল হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বাচ্চাদের মধ্যে উপসর্গ তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে।
এবার কী কী লক্ষণ দেখা যাচ্ছে?
উপসর্গ মোটামুটি একই রয়েছে— জ্বর, সর্দি, কাশি, গা-হাত-পা ম্যাজম্যাজ, চোখ দিয়ে পানি পড়া, লুজ মোশান, বমি, বমিবমিভাব, পেট ব্যথা ইত্যাদি। এমন লক্ষণ দেখা দিলে বাচ্চার করোনা পরীক্ষা করানো উচিত।
চিকিৎসা কী?
আশার কথা একটাই যে বেশিরভাগ বাচ্চারই উপসর্গ দেখা দিলেও এখনো রোগের তীব্রতা খুব বেশি একটা দেখা দিচ্ছে না। ফলে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা করলেই ফল মিলছে। অর্থাৎ জ্বরের জন্য প্যারাসিটেমল, ডায়ারিয়ায় ওআরএস, জিঙ্ক ও প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি।
তবে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে, ঝিমিয়ে পড়লে, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪-এর নিচে নেমে গেলে বা অন্য কোনো উপসর্গ খুব বেশি মাত্রায় দেখা দিলে— এই ধরনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই বাচ্চাকে দ্রুত হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করতে হয়। এক্ষেত্রে কোভিড গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
এছাড়া কোভিড থেকে সেরে ওঠার কয়েক সপ্তাহ বাদে বাচ্চাদের মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, র্যাশ ইত্যাদি নানা ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। এমনকি কিডনি এবং হৃৎপিণ্ডও এই সমস্যায় গুরুতরভাবে জড়িয়ে পড়ে। এই সিনড্রোম বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশ বিপজ্জনক। বহু ক্ষেত্রেই বাচ্চা শকে চলে যাচ্ছে। তাই প্রয়োজন দ্রুত চিকিৎসার। তাই বাচ্চা করোনা থেকে সেরে ওঠার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোনও শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে শিগগিরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ কীভাবে?
বাচ্চা একটু বড় হলে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, ভিড় এড়িয়ে চলার মতো বিষয়গুলোতে জোর দিন। তাদের বুঝিয়ে বলুন, কোভিড থেকে কী কী সমস্যা হতে পারে। তবেই তাদের মধ্যে করোনা প্রতিরোধের অভ্যেস তৈরি হবে। একদম ছোট বাচ্চাকে তো আর মুখে মাস্ক পরিয়ে রাখা যাবে না। ফলে বাবা-মাকেই ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে। বারবার বাচ্চার হাত স্যানিটাইজ করে দিতে হবে। বাচ্চার শোয়ার ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাচ্চার খেলনাকেও নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।
যত শিগগিরই সম্ভব পরিবারের বড়রা করোনা টিকা নিন। তবেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঢাল পাওয়া যাবে। এছাড়া পরিবারের কারো মধ্যে কোভিডের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই করোনা টেস্ট করান। এই সময়ে বাচ্চার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। কাছে গেলেও মাস্ক পরা বাঞ্ছনীয়।
সূত্র : বর্তমান