দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন ১৪ বছরের মরক্কোর হাফেজের
হাফেজ ইয়াহইয়া সিদকী - ছবি : সংগৃহীত
হাফেজ ইয়াহইয়া সিদকী। বয়স মাত্র ১৪ বছর। কিন্তু তবুও দুনিয়াজোড়া তার পরিচিতি। কারণ, সবচেয়ে কম বয়সে পুরো কোরআনের ৩০ পারা সম্পূর্ণ অডিও রেকর্ডের মালিক এই শিশু। নিষ্পাপ চেহারার এই শিশুর অসাধারণ কোরআন তিলাওয়াত তাকে আরবদের চোখের মণিতে রূপান্তরিত করেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার পুরনো একটি চমৎকার ভিডিও সাক্ষাৎকার ইউটিউবে ঘুরছে। সাক্ষাতকারের শুরুতেই প্রশ্নকারী তাকে বলেন, আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য অনেক ভালোবাসি। জবাবে শিশুটি জানায়, যিনি আমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসেন, আল্লাহও তাকে ভালোবাসুন।
এরপর তার কাছে জানতে চাওয়া হয় পবিত্র কোরআনের সঙ্গে তার অভিযাত্রার গল্প। সে আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর রাসূলের প্রতি সালাম নিবেদন করে বলতে শুরু করে, ‘বাস্তবিকপক্ষে কোরআনের সঙ্গে আমার যাত্রা শুরু হয়েছে জন্মের আগে থেকে, যখন আমি আমার মায়ের পেটে। মা আমাকে শুনিয়েছেন, আমি যখন তাঁর পেটে দুনিয়ায় আগমনের অপেক্ষা করছি তখন সবসময় তিনি সুরা মারইয়াম (এই সুরায় হজরত জাকারিয়া এবং তাঁর বৃদ্ধ বয়সের পুত্র ইয়াহইয়া আ.-এর ঘটনা-সংবলিত) তিলাওয়াত করতেন আর এই সুরাটি মায়ের কাছে দারুণ পছন্দের ছিল।
এরই মধ্যে তার মায়ের একটি সাক্ষাৎকারমূলক ভিডিওক্লিপ চালু করা হয়। তাতে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে ইয়াহইয়া সিদকীর মা পবিত্র কোরআনের সাথে সন্তানের অভিযাত্রার গল্প শোনান, ‘এক আহবানকারী আমাকে যেন ডেকে বলল, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ! (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই) তোমার গর্ভের অনাগত সন্তানের নাম ইয়াহইয়া রাখো। আর এই আওয়াজ আমার হৃদয়ে অনবরত বাজতে থাকে এবং একসময় আল্লাহ আমাকে একটি সন্তান দান করেন। আমরা তার নাম রাখি ইয়াহইয়া। তখন থেকে আমি সংকল্প করি, আমার এ সন্তান অনেক বড় কারী ও সৎ বান্দা হবে এবং আমার মৃত্যুর পরে সে আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, আমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হবো, যাদের সন্তান হাফেজ হওয়ার কারণে তাঁদের নূরের মুকুট পরানোর সুসংবাদ দেয়া হবে- যেদিন কোনো সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কাজে আসবে না। মহান আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা, তাকে দেখে দুনিয়ায় আমার চোখ শীতল হবে এবং আখেরাতে সে হবে আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমার আরো স্বপ্ন, তার মাধ্যমে আল্লাহ সবাইকে সুপথপ্রাপ্ত করবেন, তিনি তার এবং সব মুসলিম শিশুর জীবনে বরকত দান করবেন। আমিন- ওয়াস সালামু আলাইকুম।’
ভিডিওটি শেষ হলে ইহায়ইয়া আবার তার গল্প বলতে শুরু করে, জন্মের পর আমি যখন কথা বলতে শিখি তখনই আমার বাবা আমাকে আরবি বর্ণমালা শিখাতে ‘কায়েদায়ে বাগদাদিয়া’ নামের প্রাথমিক স্তরের একটি কিতাবের পাঠদান করেন। আমার বোনও এই কিতাব পড়ে উপকৃত হয়। কিতাবটির পাঠবিন্যাস ও লেখাগুলো আমাকে দারুণ আকর্ষণ করে, আমার কাছে সহজ মনে হয়।
শিশুটি জানায়, এরপর কোরআন হিফজের জন্য আমার মা-বাবা আমাকে মরক্কোর প্রসিদ্ধ নগরী দারুল বাইজার (ক্লাসাব্লাঙ্কা) নিকটবর্তী আল ওয়াজিজের একটি মাদরাসায় ভর্তি করা। কোরআনের প্রতি আমার অশেষ আগ্রহ খুব অল্প সময়ে আমার জীবনে সফলতা নিয়ে আসে। একদিন শুক্রবারে মাদরাসার ছাত্রদের উদ্দেশে আমাকে কিছু কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। কথায় মুগ্ধ হয়ে আমাকে ছাত্রদের নিয়ে নামাজ পড়ানোর সুযোগও দেয়া হয়, যা আমাকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করে।
শিশুটি জানায়, হিফজ সমাপ্তির পরে আমি মা-বাবার সহযোগিতায় বিখ্যাত তিন ওস্তাদের কাছে তাজবিদ-জ্ঞান শিক্ষাগ্রহণ করি। এরপর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ইয়াহইয়াকে বলেন, তুমি এত কিছু অর্জন করেছ- এর কৃতজ্ঞতা হিসেবে আমাদের একটু পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত শোনাও। সে সুরা নুন তিলাওয়াত করে শোনায়।
প্রশ্নকারী তাকে জিজ্ঞাসা করে, পৃথিবীতে তোমার অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত রয়েছে তাদের সম্পর্কে কিছু বলো। ইয়াহইয়া সিদকী বলে, আমার তরুণ-তরুণী ভক্তদের বলতে চাই, তোমরা কোরআন পড়ো, যারা মনে করো দৈনন্দিন ব্যস্ততার পাশাপাশি কোরআন পড়া সম্ভব নয়- এটা ভুল; বরং কোরআন পাঠ আমার সামনে হাজারো পথ খুলে দিয়েছে। তোমরাও কোরআনের প্রতি মনোযোগী হও। তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ সম্মান বাড়িয়ে দেবেন। ইনশাআল্লাহ!