অক্সিজেন কেলেঙ্কারিতে ভারত সরকার

অন্য এক দিগন্ত | Apr 21, 2021 08:04 pm
অক্সিজেন কেলেঙ্কারিতে ভারত সরকার

অক্সিজেন কেলেঙ্কারিতে ভারত সরকার - ছবি : সংগৃহীত

 

অক্সিজেন আছে, বিদেশে রফতানি তো হচ্ছেই, বরং গত বছরের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে। অথচ দেশের মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় এই কেলেঙ্কারি ভারত সরকারকে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে।

এর মধ্যেই ভারতের মহারাষ্ট্রে নাসিক শহরের একটি সরকারি কোভিড হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে একসঙ্গে অন্তত ২২ জন রোগী আজ মারা গেছেন।

ওই হাসপাতালের সামনে একটি ট্যাঙ্কার থেকে অক্সিজেন লিক হওয়ার জেরেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে - প্রশাসন এখন যার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

মহারাষ্ট্রে এই ঘটনা ঘটল এমন এক দিনে, যেদিন ভারতে দৈনিক শনাক্ত নতুন রোগীর সংখ্যা রেকর্ড তিন লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং সারা দেশে কোভিড রোগীদের জন্য অক্সিজেনের হাহাকারও চরমে।

অক্সিজেনের এই সঙ্কটের জন্য কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণও করেছেন।

ভারতের যে রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি সবচেয়ে শোচনীয়, সেই মহারাষ্ট্রের নাসিকে জাকির হুসেইন মিউনিসিপ্যাল হাসপাতাল এই মুহুর্তে শুধুমাত্র কোভিডের জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে কাজ করছে।

বুধবার সকালেও সেখানে অন্তত দেড় শ' রোগী ভর্তি ছিলেন, যাদের হয় ভেন্টিলিটরে রেখে বা ২৪ ঘন্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে চিকিৎসা চলছিল।

কিন্তু দুপুরের দিকে হাসপাতালের ঠিক বাইরে যখন একটি অক্সিজেন ট্যাঙ্কার থেকে তাদের স্টোরেজে জীবনদায়ী এই গ্যাসটি ভরা হচ্ছিল, তখনই মারাত্মক লিকেজের ঘটনা ঘটে।

সঙ্গে সঙ্গে ঘন সাদা ধোঁয়ায় চারপাশ ছেয়ে যায় - আর হাসপাতালে যে রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল তাদের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়।

অক্সিজেনের জোগান বন্ধ ছিল আধঘন্টার কিছু বেশি সময়, কিন্তু এর মধ্যেই হাসপাতালের অন্তত বাইশজন রোগী প্রাণ হারান।

মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, 'ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। আমরা স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করছি। নিহতদের মধ্যে এগারোজন পুরুষ ও এগারোজন নারী ছিলেন।'

'এখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের গাফিলতি ছিল কি না এখনই বলা যাবে না, তবে প্রাথমিকভাবে এটা একটা টেকনিক্যাল গ্লিচ বা যান্ত্রিক ত্রুটি বলেই মনে হচ্ছে। তবে সরকার বিশদে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।'

নাসিকের হাসপাতালে নিহতদের একজনের পরিজন ভিকি যাদব বলছিলেন, তিনি কাল রাতেও এসে দেখে গেছেন তাদের রোগী ভালোই আছেন, অক্সিজেন সাপ্লাই-ও ঠিক মতোই চলছে।

'মাত্র এক বেলার মধ্যে কীভাবে সেটা দুম করে বন্ধ হয়ে মানুষটা চলে গেলেন, আমি তো কিছু এখনও বুঝেই উঠতে পারছি না!', বলছিলেন ভিকি যাদব।

এর আগে আজ সকালে দিল্লিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তার আগের চব্বিশ ঘন্টায় ভারতে ২ লাখ ৯৫ হাজারেরও বেশি নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২০২৩ জন- যে দুটিই নতুন রেকর্ড।

অক্সিজেনের তীব্র আকাল এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরো হৃদয়বিদারক করে তুলেছে - দেশের বহু হাসপাতালই অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মঙ্গলবার রাতেই কেন্দ্রকে জরুরি এসওএস পাঠিয়ে বলেন, শহরের প্রধান হাসপাতালগুলোতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টার মতো অক্সিজেন অবশিষ্ট আছে।

এদিকে এই সঙ্কটের জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও।

তিনি এদিন বলেন, 'বিশ্বে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি মেডিক্যাল অক্সিজেন তৈরি করে ভারত তার একটি। তার পরেও এই পরিস্থিতি, কারণ আমাদের অক্সিজেন পরিবহনের কাঠামোই তৈরি করা হয়নি।'

'অথচ আমরা আট-ন মাসের ওপর সময় পেয়েছিলাম, সরকারের নিজস্ব সিরো সার্ভেও বলেছিল সেকেন্ড ওয়েভ আসবেই। কিন্তু আমরা সে সব গায়ে মাখিনি।'

'ফলে আজ দেশে মাত্র দু'হাজার এমন ট্রাক আছে, যেগুলো অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম। দেশে অক্সিজেন আছে, অথচ সেগুলো হাসপাতালে পৌঁছনোর রাস্তা নেই- ভাবা যায়?'

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে আজ প্রকাশ পেয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার আগের বছরের তুলনায় ভারত বিদেশে ৭৩৪ শতাংশ বেশি অক্সিজেন রফতানি করেছে।

দেশের প্রয়োজনের কথা না-ভেবে এই বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন বাইরে পাঠানোর জন্যও সরকারকে এখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us