সাপে কাটা রোগীর সহজ চিকিৎসা

অন্য এক দিগন্ত | Apr 21, 2021 03:29 pm
সাপ

সাপ - ছবি : সংগৃহীত

 

বিষাক্ত সাপের কামড়ে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মারা যায় প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ, কিন্তু সহজ কিছু পদক্ষেপ সর্পদংশন থেকে মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে পারে।

‘বর্ষায় আগাছা বেড়ে ক্ষেতের মাটি ঢেকে যায়,’ বলছিলেন টুকারাম রাও, যিনি ভারতের কর্নাটক রাজ্যের রত্নাপুরী গ্রামের এক ক্ষেত মজুর। ‘রাতের বেলা ওই ক্ষেতের মধ্য দিয়ে আমাদের হেঁটে যেতে হয় পাম্প চালু করার জন্য। পানির পাইপ ঠিকমতো কাজ না করলে, হাত দিয়ে ওই পাইপ টেনে বের করে তা মেরামত করতে হয়।’

তার মতো গ্রামের বহু কৃষক ও ক্ষেত মজুর খালি পায়েই হাঁটা-চলা করেন। বর্ষাকালে ঘন আগাছার মধ্যেই থাকে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আস্তানা। ভারত আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খুবই বিষাক্ত এই সাপের ছোবলে প্রাণ যায় বহু মানুষের।

এই সাপ রাতের বেলায় বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ছোবল মারার আগে নিস্তেজ অবস্থায় অনেকক্ষণ নিজেকে লুকিয়ে রাখে চন্দ্রবোড়া। দীর্ঘ সময় নড়াচড়া করে না এই সাপ, তারপর হঠাৎই ভয়ানকভাবে ছোবল বসায়।

এরা সচরাচর ইঁদুরজাতীয় প্রাণী বা ছোটখাট ব্যাঙ শিকার করে খায়। মানুষ সচরাচর তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু থাকে না। তার পরেও ভারতে অন্য যেকোনো জাতের সাপের তুলনায় চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের শিকার হয় সবচেয়ে বেশি মানুষ, আর এই সাপের ছোবলে মৃত্যুও ঘটে সবচেয়ে বেশি।

ভারতে সর্পদংশনে মৃত্যুর ৪৩ শতাংশই চন্দ্রবোড়ার কামড়ে হয়। শ্রীলঙ্কাতেও সর্পদংশনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য দায়ী চন্দ্রবোড়া।

বাংলাদেশেও যেসব সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত চন্দ্রবোড়া। ১০০ বছর আগে এই প্রজাতির সাপ বাংলাদেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করা হলেও গত বছর দশেক ধরে এই সাপের দংশনের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটি।

চন্দ্রবোড়ার দংশন ভয়ানক কারণ হলো তাদের শিকারের ধরন।

ঘাস বা আগাছার মধ্যে দিয়ে তারা চলে অতি ধীরে। এত ধীরে যে মনেই হয় না তারা নড়াচড়া করছে। গায়ের সবুজ ও বাদামী চাকা চাকা দাগের কারণে দিনের বেলা তারা ঘাস বা আগাছার রঙের সাথে মিশে থাকে, তাদের দেখা যায় না। আর রাতের বেলা তাদের দেখতে পাওয়া আরো কঠিন।

ধানক্ষেতে বা বেড়ে ওঠা আগাছায় তাদের গায়ের ওপর অসাবধানে পা পড়লেই চন্দ্রবোড়া ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তার ওপর হামলা হচ্ছে ধরে নিয়ে সে ঘনঘন ছোবল বসায়।

বিশেষ করে যারা ক্ষেতখামারে কাজ করেন, তারা চন্দ্রবোড়া সাপে কাটার আশঙ্কায় থাকেন।

সাপের দংশনে প্রতিবন্ধী
ভারতে প্রতি বছর সর্পদংশনের শিকার হয় প্রায় ২৮ লাখ মানুষ, আর মারা যায় ৫০ হাজার। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, গত দুই দশকে শুধু ভারতেই সাপের কামড়ে মারা গেছে ১২ লাখের বেশি মানুষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সর্বশেষ এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হয়, এবং মারা যায় অন্তত ছয় হাজার মানুষ।

সারা বিশ্বে প্রতি বছর সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৮১ হাজার থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজারের মধ্যে। আর বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর সাপের দংশনের শিকার হয় আনুমানিক ৪৫ লাখ মানুষ।

সাপে কামড়ানোর পর যারা প্রাণে বেঁচে যান, তাদের জীবনেও এর সূদুর প্রসারী প্রভাব পড়ে। দংশনের কারণে অনেকের জীবন-জীবিকা দারুণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়।

‘সম্প্রতি একজন হলুদ চাষীর পায়ে সাপে ছোবল মেরেছিল। তিনি ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছিল। তার গোড়ালির চারপাশের মাংস পচে গেছে,’ বলছিলেন রাও। ‘ওই পচন তার হাঁটু পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়, এখন তিনি আর কোনো কাজকর্ম করতে পারে না।’

ডাক্তারদেরকে তার পায়ের পচে যাওয়া অংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছে। পরিবারের খাওয়া-পরা যোগাতে এখন তার স্ত্রীকে বাড়তি কাজ খুঁজতে হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে ঘরে ঘরে, বিবিসিকে বলেন রাও।

‘প্রতি বছর প্রায় চার লাখ সাপে কাটা মানুষ কোনো না কোনো ধরনের পঙ্গুত্বের শিকার হন। হয় তাদের কোনো অঙ্গের কোষকলা শুকিয়ে মরে যায়, যার ফলে ওই অঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয়, নয়ত ওই অঙ্গ নষ্ট হয়ে আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। অনেকে সাপের কামড়ের কারণে অন্ধও হয়ে যান,’ বলছেন ব্রিটেনে লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের সাপের বিষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লরা-ওয়ানা আলবুলেস্কু।

‘সর্পদংশনের কিন্তু একটা বিরাট মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে, যা নিয়ে গবেষণার কাজ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। সাপে কাটার মানসিক প্রভাবও কিন্তু মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।

‘অনেকে সাপে কাটার পর কাজ করতে পারেন না, কেউ ভয়ে, আবার কেউ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ার কারণে। প্রতিবন্ধী অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে হয় না, তারা ঘরবন্দী হয়ে যায়, অনেকে চিকিৎসার খরচ যোগাতে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।’

সাপে কাটা একটা উপেক্ষিত রোগ
প্রতি বছর সারা বিশ্বে সাপের দংশনের শিকার হয় যে ৪৫ লাখ মানুষ, তাদের মধ্যে ২৭ লাখ পুরুষ, নারী এবং শিশু শারীরিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয় বলে জানাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল স্নেকবাইট ইনিশিয়েটিভ।

সাপের কামড়ের সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে এই সংস্থা।

‘সাপের দংশন যে কতটা ব্যাপক সমস্যা, বহু মানুষই তা বোঝে না,’ ব্যাখ্যা করেছেন আমেরিকায় অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে সংস্থা সাপের বিষ প্রতিরোধী রসায়নের ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করছে তার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক লেসলি বয়ার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, সাপের দংশন কোনো কোনো সম্প্রদায়ের জন্য বিশাল একটা সমস্যা, এবং ওই বিবেচনা থেকে তারা সম্প্রতি সর্পদংশনের কারণে মানুষের শরীরে ঘটা বিষক্রিয়াকে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের একটা উপেক্ষিত রোগ হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করেছে।

সাপে কাটাকে এখন বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে উপেক্ষিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, যে সমস্যা বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিষক্রিয়ার চিকিৎসা
লেসলি বয়ার বলেন, ‘প্রায় ১২০ বছর ধরে আমরা জানি সাপের বিষ কাটানোর ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম কীভাবে তৈরি করতে হয়।’

সাপের বিষ সংগ্রহ করা হচ্ছে
অ্যান্টিভেনম বা সাপে কামড়ানোর ওষুধ তৈরি করতে সংগ্রহ করতে হয় সাপের বিষ।

তিনি বলেন, ফ্রান্সের পাস্তুর ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা বহুকাল আগে অ্যান্টিভেনম তৈরির কিছু কাজ করেছেন। এছাড়াও ইংল্যান্ডের লিস্টার ইনস্টিটিউট এবং ব্রাজিলের বুতানতান ইনস্টিটিউটেও অ্যান্টিভেনম নিয়ে গবেষণা হয়েছে। অনেক অ্যান্টিভেনম ভালো কাজও করে।

‘কিন্তু সাপের বিষের চরিত্র যেহেতু বেশ জটিল, ফলে এর সফল চিকিৎসাও অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।’

সঠিক অ্যান্টিভেনম যোগাড় করা এবং অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করে বিষক্রিয়া বন্ধের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে অনেকেই সাপের কামড় থেকে বাঁচার সহজ ও কার্যকর উপায়গুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।

ভারতে কর্নাটক রাজ্যের টুকারাম রাও এবং তার প্রতিবেশীরা একটা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়েছেন। ভারতে হিউমেন সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত এক কর্মসূচির আওতায় তারা এলাকার কৃষকদের সাপের দংশন থেকে বাঁচাতে মোটা রাবাবের বুট জুতা সরবরাহ করছেন।

‘মানুষ যখন চলতে গিয়ে অজান্তে সাপের গায়ে পাড়া দেয়, তখনই সাপের ছোবল খায় তারা। নব্বই শতাংশ সর্পদংশনের ঘটনা এভাবেই ঘটে,’ জানান সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা সুমন্ত বিন্দুমাধব।

তার সংস্থা থেকে রাওয়ের গ্রামের কৃষকদের ৪০০ জোড়ার বেশি রাবারের বুট এবং ২০০ সৌরশক্তি চালিত বাতি বিলি করা হয়েছে।

‘চন্দ্রবোড়ার ফণা ভারতে অন্যান্য প্রজাতির অনেক সাপের চেয়ে বেশি লম্বা। কিন্তু গামবুটের রাবার ভেদ করে কামড়ানো তাদের পক্ষে খুবই কঠিন। আর সাপে কাটার পরে চিকিৎসার চেয়ে আগেই সাপের কামড় থেকে বাঁচা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেন বিন্দুমাধব।

কীভাবে কাজ করে সাপের বিষ
সাপের বিষ নানাধরনের বিষাক্ত পদার্থের একটা জটিল সংমিশ্রণ। আর এই বিষের ধরন সাপের প্রজাতি ভেদে ভিন্ন।

শরীরের যে স্নায়ু কোষগুলো মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়, সাপের বিষে থাকা কিছু জারক রস এবং অল্প মাত্রার প্রোটিন সেই বার্তা বহন প্রক্রিয়াকে অচল করে দেয়। এর ফলে মানুষের মাংসপেশিতে দ্রুত সংকোচন শুরু হয়, পেশিতে ব্যথা হতে থাকে এবং মাংসপেশি অসাড় হয়ে যেতে থাকে।

শ্বাসতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে যেসব মাংসপেশি, সেগুলো ঠিকমত কাজ না করায় মানুষের দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়।

ব্ল্যাক মাম্বা
বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে বিষধর একটি সাপ ব্ল্যাক মাম্বা।

আফ্রিকায় ব্ল্যাক মাম্বা নামে এক ধরনের সাপ আছে, যার বিষ হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিকে আক্রমণ ক'রে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। কোনো কোনো বিষের ক্রিয়ায় কাটা জায়গায় রক্ত জমাট বাধে না, ফলে প্রবল রক্তক্ষরণ হয়ে মানুষ মারা যায়।

কিছু সাপের বিষ আছে যা রক্তের কোষকে এমনভাব ভেঙে দেয় যে সাপে কাটা মানুষের রক্তকোষে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

আবার কোনো কোনো সাপের বিষে শিরার ভেতর রক্ত জমাট বেধে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রাণ হারায়। কখনো বিষক্রিয়া আবার শরীরের অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে সেসব অঙ্গ বিকল করে দেয়।

আর কিছু কিছু বিষ যেখানে সাপে কেটেছে সেই স্থান ও আশপাশের কোষগুলোকে পুরো মেরে ফেলে। তখন মৃত কোষের কারণে পচে যাওয়া সেই সব প্রত্যঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয়।

অনেক সাপের শরীরে এমন বিভিন্ন ধরনের বিষের সংমিশ্রণ থাকে। ফলে ওইসব সাপ কামড়ালে একই সাথে নানাধরনের বিষক্রিয়া ঘটতে থাকে। যে কারণে সাপের দংশনের চিকিৎসা খুব সহজ নয়।

‘কোন একটা সাপের শরীরে ভিন্ন মাত্রায় কয়েকশো’ ধরনের বিষ থাকতে পারে। ফলে একটা ওষুধ দিয়ে এত ভিন্ন ধরনের বিষ কাটানো দুঃসাধ্য ব্যাপার,’ বলছেন লেসলি বয়ার।

অ্যান্টিভেনম তৈরি করা
অ্যান্টিভেনম বা বিষের প্রতিকার ওষুধ তৈরি করা কঠিন নয়, যদি আপনি জানেন অ্যান্টিভেনম বানানোর সঠিক পদ্ধতিটা কী। এছাড়া আপনার কাছে থাকতে হবে ঘোড়া।

যে সাপের বিষ কাটানোর ওষুধ আপনি বানাতে চাইছেন, ওই সাপের শরীর থেকে আপনাকে বিষ সংগ্রহ করতে হবে, সেই বিষ খুবই অল্প মাত্রায় ঘোড়ার শরীরে ঢোকাতে হবে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে। এর থেকে ঘোড়ার শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে সেই অ্যান্টিবডিকে বিশুদ্ধ করে নিয়ে তা সাপে কাটা মানুষের শরীরে দিলে সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব।

কিন্তু অ্যান্টিভেনম ঠিকমতো কাজ করতে হলে অনেকটা পরিমাণে এই ওষুধ সাপে কামড়ানো মানুষকে দিতে হয়। কারণ ওষুধ কার্যকর হতে গেলে বেশ অনেকটা অ্যান্টিবডির প্রয়োজন হয়।

কী ধরনের সাপের দংশন হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে কতটা পরিমাণ অ্যান্টিভেনম ওই বিষ কাটাতে কার্যকর হবে। অ্যান্টিভেনম দামেও সস্তা নয়। অনেক সময় দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের অ্যান্টিভেনম দিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য থাকে না।

তামিলনাড়ুর অ্যান্টিভেনম কারখানা
এই হাঁড়ি থেকে গোখরা সাপ নিয়ে তার থেকে বিষ বের করে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় ভারতের তামিলনাড়ুর এক অ্যান্টিভেনম কারখানায়। এছাড়াও সব অ্যান্টিভেনম সব সাপের বিষ সারাতে কাজ করে না।

যেমন, ভারতে মূলত চার ধরনের সাপের অ্যান্টিভেনম তৈরি হয়, কোবরা বা গোখরা প্রজাতির সাপ, ক্রেইট বা শঙ্খিনী, রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া এবং চেরা আঁশযুক্ত ভাইপার। অথচ ভারতে ৬০টির বেশি বিষাক্ত প্রজাতির সাপ রয়েছে।

প্রতিটি প্রজাতির সাপের জন্য অ্যান্টিভেনম তৈরি করা খুবই খরচ সাপেক্ষ। তাই যেকোনো জাতের সাপে কামড়ালে মূলত এই চারটি সাপে কামড়ানোর ওষুধ দিয়েই তার চিকিৎসা করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশটিতে যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়, তা মূলত আসে ভারতের তামিলনাড়ু থেকে। এমন অভিযোগ রয়েছে যে আমদানি করা এই অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশে সাপে কামড়ানোর চিকিৎসায় সবসময় কাজ করে না।

বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনম আনা হয়, সেটি মূলত চারটি সাপের বিষের একটি 'ককটেল' বা মিশ্রণ, যা কিছু সাপের দংশন নিরাময়ে কাজ করে। বাকি ক্ষেত্রে সেগুলো আংশিক কাজ করে।

নতুন গবেষণা
তবে সাপে কামড়ানোর ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক চিকিৎসার ওপর বিজ্ঞানীরা বেশি জোর দিচ্ছেন, যে অ্যান্টিবডি ব্যাপক সংখ্যক প্রজাতির সাপের বিষ নিরাময়ে কাজ করবে।

বিভিন্ন প্রজাতির সাপের আচরণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লে মানুষ সাপের কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করার সহজ পদক্ষেপগুলো নিতে সক্ষম হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সাপের বিষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লরা-ওয়ানা আলবুলেস্কু এমন ওষুধ তৈরির ব্যাপারে কাজ করছেন যা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এবং যা মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

তিনি বলেন, সাপে কাটার পর সাথে সাথে এই ক্যাপসুল খেলে তা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করবে এবং সাপ কামড়ানোর সাথে সাথে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থার দ্রুত অবনতি রোধ করতে পারবে।
সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us