পাকিস্তান-চীন ইন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত আউট!
পাকিস্তান-চীন ইন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত আউট! - ছবি : সংগৃহীত
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে নিঃশর্ত সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণা কার্যকর হলে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার আমেরিকান সেনা ও সাড়ে সাত হাজারের মতো ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। বাইডেনের সোজা সাপ্টা বক্তব্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো প্রেসিডেন্টের জন্য এ কাজটি তিনি রেখে যেতে চান না। যুক্তরাষ্ট্র আলকায়েদা দমন ও সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের মূল লক্ষ্য অর্জন করেছে। এখন দুই দশক যুদ্ধ করার পর সুবিধাজনক সময়ের জন্য সেনা প্রত্যাহার দীর্ঘায়িত করতে বিষয়টিকে অনিষ্পন্ন রেখে যেতে চান না বাইডেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আশা, প্রতিবেশী স্টেকহোল্ডার দেশগুলো আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার বাকি কাজ করতে পারবেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে পাকিস্তান, তুরস্ক ও ভারতের কথা উল্লেখ করেছেন। বাইডেনের অনেকখানি সুস্পষ্ট ঘোষণার পরও আফগানিস্তানে আমেরিকান ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার করা হবে কি না অথবা এই সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে শান্তি আসলেই প্রতিষ্ঠা পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে নানা পক্ষের মধ্যে।
আফগানিস্তানের আশরাফ গনির সরকার মার্কিন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তি ছাড়া সেনা প্রত্যাহারে শান্তি কতটা আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছিলেন, তালেবানরা নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব নিক। প্রয়োজনে তার বাকি যে মেয়াদ আছে সেটাকে তিনি সমর্পণ করে দ্রুত নির্বাচন দেবেন যেখানে তালেবানরা অংশ নিতে পারেন। তবে এ ধরনের প্রস্তাবে যে তালেবানরা সম্মত হবে না, সেটি অস্পষ্ট নয়।
বিবিসিসহ পাশ্চাত্যের অধিকাংশ গণমাধ্যম আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে। বিবিসি একজন দ্বিতীয় সারির তালেবান নেতার বক্তব্য তুলে ধরে বলেছে ‘আফগানিস্তানে আমেরিকা পরাজিত হয়েছে এবং তালেবানদের জয় হয়েছে। সেনা প্রত্যাহার ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আর কোনো পথ ছিল না।’
আফগানিস্তানে আমেরিকার যে জয়ের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কিভাবে সম্ভব তা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প একবার উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমেরিকানরা সেখানে জয়ী হতে পারবে। তবে সেখানকার সবাইকে হত্যা করতে হবে, কেবল বাকি থাকবে দেশ আর মাটি। যুক্তরাষ্ট্রের সেই সক্ষমতা রয়েছে।’ তেমনটি তিনি করতে চান না বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। এই উপলব্ধি থেকে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তিনি কাতার আলোচনার মাধ্যমে তালেবানের সাথে জালিমে খলিলজাদের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি করেছিলেন যে চুক্তি অনুসারে সামনের ১ মের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের সেনা প্রত্যাহারের ধারা থেকে সরে আসেনি, শুধু সময়টা মাস পাঁচেক পিছিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, আফগানিস্তানের সাথে যাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, তারা বিষয়টিকে কিভাবে দেখবে এবং সেনা প্রত্যাহারের পর তাদের ভূমিকাই বা কী হবে। তার আগে যেসব ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে হয় তা উল্লেখ করা যেতে পারে।
তালেবানের সাথে আমেরিকার সমঝোতার ব্যাপারে মধ্যস্থতার দায়িত্ব এত দিন পালন করে আসছিল কাতার। এখন সেই দায়িত্ব অর্পণ হয়েছে তুরস্কের উপর। ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে তুরস্কের আগে থেকেই সীমিত উপস্থিতি রয়েছে আফগানিস্তানে। সঙ্গতভাবে আঙ্কারার কাজের অংশীদার হলো আশরাফ গনির সরকার। তুরস্কের সাথে পাকিস্তানের রয়েছে কৌশলগত সম্পর্ক। আর তালেবানের সাথে ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। এ হিসাবে ২৪ এপ্রিল ইস্তাম্বুলে এ ব্যাপারে আফগান সরকার ও তালেবানে যে আলোচনা হতে যাচ্ছে তা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন একটি ব্যবস্থার বিষয় আলোচিত হতে পারে। তবে এ ধরনের আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগেই অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে সব কিছু চূড়ান্ত করা হয়ে থাকে।
আফগানিস্তানের বাস্তবতা হলো, সেখানে তালেবানই প্রধান শক্তি। শহর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে বেশি থাকলেও বলা যায়, শহরের বাইরে প্রায় পুরো আফগানিস্তানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত। আমেরিকান ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া হলে তালেবানের সামনে সরকারি বাহিনীর পতন কেবলই সময়ের ব্যাপার। ধারণা করা হয় যে, তালেবান যোদ্ধার সংখ্যা প্রায় চার লাখ। তাদের মনোবল এখন তুঙ্গে। অন্যদিকে, সরকারি বাহিনীর সদস্য সাকুল্যে দেড় লাখের নিচে যাদের মনোবল একেবারেই ভঙ্গুর। এই অবস্থায় দুই পক্ষ যুদ্ধের মাধ্যমে নিষ্পত্তি চাইলে এ মুহূর্তে তালেবানের হয়তো জয় হবে। কিন্তু এভাবে নিষ্পত্তি করতে চাইলে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো সম্ভাবনা হয়তো থাকবে না। সঙ্কট নতুন রূপ গ্রহণ করবে।
এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা ও কাঠামো নির্ধারণ। এই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার মধ্যে অবশ্যই তালেবানকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আফগানিস্তানের সক্রিয় সব পক্ষকে যথাসম্ভব অন্তর্ভুক্ত করে তালেবান নেতৃত্বেই এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে।
আফগানিস্তানে ‘লয়া জিরগা’ তথা গোত্রভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের একটি ব্যবস্থা রয়েছে। এ ব্যবস্থাকে প্রয়োজনে কিছুটা বিন্যাস করে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একটি সংসদের রূপ দেয়া যায়। সে সাথে, গোত্র ও জাতিগত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যেতে পারে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে যে তালেবান আফগানিস্তান শাসন করেছে সেই তালেবান এখন নেই বলে মনে হয়। তারা বিশ্বব্যবস্থার সাথে অনেক বেশি পরিচিত ও সম্পৃক্ত এবং সমকালীন সংবেদনশীলতা সম্পর্কে তারা যথেষ্ট ধারণা রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলেছে তাদের দীর্ঘ একটি সময় ধরে। রাশিয়া ও চীনের সাথেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে। পাকিস্তানের সাথে তো বটেই; এমনকি ভারতের সাথেও তাদের একটি যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে হয়।
সব মিলিয়ে তালেবানের যে মূল দাবি, আফগানিস্তানে বিদেশী সেনা থাকবে না- সেটি বাস্তবে কার্যকর করতে হলে দেশটিকে কোনো পক্ষের স্বার্থ হাসিলের সঙ্ঘাতভূমি হিসেবে কোনোভাবে ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি সমঝোতা হতে হবে। সেই সমঝোতা এরূপ হয়ে থাকতে পারে যে, কাবুলে আমেরিকান মিশনের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বাহিনীর কিছু সদস্য থাকবে। আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানতে পারে আলকায়েদা বা আইএস-এর এমন কোনো ধরনের উপস্থিতির সুযোগ দেয়া হবে না আফগানিস্তানে। শেষোক্ত বিষয়ে সমঝোতার বিষয়টি জো বাইডেনের বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়েছে।
আফগানিস্তানে কার্যকর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। এর মধ্যে থাকবে প্রথমত ফেডারেল ধরনের শাসন ব্যবস্থা যেখানে প্রদেশগুলো একরকম স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনার সুযোগ পাবে। দ্বিতীয়ত, সকল পক্ষ বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন বা রাশিয়ার সাথে সমান্তরাল পররাষ্ট্র সম্পর্ক তৈরি করা। কোনো দেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো গ্রুপকে লালন-পালনের সুযোগ না দেয়া। তৃতীয়ত, সরকারের বাহিনীর সাথে তালেবান মিলিশিয়ার একটি আনুষ্ঠানিক সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে একক বাহিনীতে সমন্বয় এবং অন্য সব মিলিশিয়ার বিলুপ্তি সাধন।
এ বিষয়গুলো একদিনেই চূড়ান্ত হয়তো করা যাবে না। তবে তুরস্কের এ ব্যাপারে যথেষ্ট গঠনমূলক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিন চার টুকরা হয়ে পড়া লিবিয়া একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে কার্যকর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তুরস্কের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। তারা আফগানিস্তানে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারবে।
আফগানিস্তান নিঃসন্দেহে একটি জটিল দেশ। দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার সংযোগস্থলের এই দেশটিতে যেমন বিপুল মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে তেমনি দেশটির কৌশলগত অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। এর সাথে সবচেয়ে বেশি জড়িত প্রতিবেশী পাকিস্তানের নিরাপত্তা। যুক্তরাষ্ট্র তালেবান শাসনের অবসান ঘটিয়ে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের সরকার প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের বড় শিকার হয়েছে। এ লড়াইয়ে সহযোগী দেশ হিসেবে ভূখণ্ড ব্যবহারের ট্রানজিট ফি হিসাবে যে অর্থ পাকিস্তান পেয়েছে তার তুলনায় এর ফলে পাকিস্তানের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা শতগুণ বেশি। আর যে বিপুল লোকক্ষয় পাকিস্তানের হয়েছে, সেটিও অপরিমেয়। ফলে এ অবস্থায় আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠাই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় স্বার্থ।
অন্যদিকে, ভারতের প্রত্যক্ষ কোনো নিরাপত্তা স্বার্থ আফগানিস্তানে নেই। তালেবানোত্তর আফগান সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা পুনর্গঠনে ভারত প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। একই সাথে আফগানিস্তানের অবকাঠামোতে বিপুল বিনিয়োগও করেছে। ইসলামাবাদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নাশকতার কাজে ভারতের আফগান বাহিনীকে কাজে লাগানো। আফগানিস্তানে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হলে ভারতের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে কাজে লাগানোর এ সুবিধা থাকবে না। নতুন পরিস্থিতির সাথে দিল্লির কর্মকর্তারা মানিয়ে নেয়ার জন্য কতটুকু কি পদক্ষেপ নেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র যতদিন পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে আফগানিস্তানে ভারতকে একতরফা প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ দিয়েছে, ততদিন শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো রাস্তা তৈরি হয়নি। সর্বশেষ উদ্যোগে এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে খুব বেশি সম্পৃক্ত করেনি, বরং সহায়তা নিয়েছে পাকিস্তানের।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নেয়ার দেশ হিসেবে ইরান উভয়ের কাছ থেকে সক্রিয় নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি বিবেচনা করে থাকে। কাবুলে একটি তালেবান সরকার এই হুমকিকে বাড়িয়ে তুলবে মনে করা হতো এক সময়। কিন্তু সম্প্রতি ইরানের সাথে তালেবানের যথেষ্ট ভালো বুঝাপড়া তৈরি হয়েছে। তালেবান নেতৃত্বে শিয়া আলেমও রয়েছেন।
আফগানিস্তানে চীনের বড় একটি স্বার্থ হলো, রোড অ্যান্ড বেল্ট প্রকল্পের অবকাঠামো তৈরি করে প্রকল্পটি কার্যকর করা। আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। আর দেশটিতে ভারতের প্রভাব বজায় থাকলে দিল্লি কর্তৃক এই প্রকল্পের বিরোধিতার কারণে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি সাধন সম্ভব ছিল না। এছাড়া চীনের একেবারেই দোরগোড়ায় আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি বেইজিংয়ের জন্য সব সময় উদ্বেগের কারণ।
আফগানিস্তানে আজ যে দুরবস্থা তার সূচনা হয়েছিল দেশটিতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক হস্তক্ষেপে। এর পথ ধরে পরাজয় শিকার করে ক্রেমলিনকে এখান থেকে শুধু বিদায় নিতে হয়নি, সে সাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার কারণও সৃষ্টি হয়েছিল। এখনকার রাশিয়ার প্রত্যক্ষ কোনো সীমান্ত আর আফগানিস্তানে নেই। তবে মধ্য এশিয়ায় সাবেক সোভিয়েত বা রুশ প্রভাব নিরঙ্কুশ করার ক্ষেত্রে আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতির মধ্যে রাশিয়ার স্বার্থ রয়েছে।
সামগ্রিকভাবে দীর্ঘ আড়াই দশকের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে বিপর্যয়ের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে প্রাপ্তির হিসাব করতে গিয়ে তিক্ত বটিকা গেলার মতো আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে কাবুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে এর সবচেয়ে বড় কারণটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগতভাবে বড় ধরনের ‘প্যারাডাইম শিফট’। আফগানিস্তানে যখন আমেরিকার অভিযান পরিচালিত হয় তখন দেশটি প্রধান শত্রু হিসেবে ইসলামিক শক্তিকে চিহ্নিত করেছিল। দীর্ঘ দুই দশক এর পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় করার পর দেখা গেছে, এটি লাখ লাখ লোকের মৃত্যু এবং কয়েকটি সম্ভাবনাময় মুসলিম দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার কারণ হয়েছে। কিন্তু এ সময়ে নীরবে শক্তি সঞ্চয় করে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করার পর্যায়ে এসেছে চীন ও রাশিয়া। বাইডেনের সরকার আর সে সাথে আমেরিকার ক্ষমতা-বলয় মনে করছে, (হান্টিংটনের সভ্যতার দ্বন্দ্ব তত্ত্ব অনুসারে) শত্রু নির্ধারণে ভুল হয়ে গেছে, তাদের আসল শক্তি বা প্রতিপক্ষ চীন, সে সাথে রাশিয়া।
আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মার্কিন সঙ্কল্পের আরো একটি লক্ষণ হলো, গত সপ্তাহে বাইডেনের এক ঘোষণা। এই ঘোষণায় বলা হয়, আমেরিকা আরো বড় চ্যালেঞ্জকে এখন অগ্রাধিকার দেবে। বিশেষত তিনি মার্কিন শক্তির বিরোধী হিসেবে ‘চীনের উত্থান’ এর কথা উল্লেখ করেছেন। বাইডেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের প্রতিপক্ষ এবং প্রতিযোগীদের জন্য আরো শক্তিশালী হবো; আমরা শেষ ২০ বছর নয়, পরবর্তী ২০ বছরের জন্য লড়াই করছি। ’
সঙ্গত কারণেই আমেরিকার নতুন কৌশলগত কর্মপন্থায় লক্ষ্যবস্তুও পাল্টে গেছে। সম্ভবত চীন ও রাশিয়ার কোনো কোনো ছায়াকে যুক্তরাষ্ট্র তার লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এমন লক্ষ্যবস্তু হতে পারে মিয়ানমার ও ইউক্রেনের মতো এলাকা। আফগানিস্তানের মতো অগ্নিগিরিসম একটি উত্তপ্ত অঞ্চলে সামরিক অবস্থান বজায় রেখে নতুন লক্ষ্যে মনোযোগী হওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য কঠিন। সম্ভবত এ হিসাব থেকে আমেরিকা সত্যিকার অর্থেই আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিতে চাইছে। আর চীন ও রাশিয়া আমেরিকার এই দুই প্রতিপক্ষের নতুন উদ্বেগের জায়গাটাও এখানে। ফলে এতদিন দুটি দেশই আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার বিদায় কামনা করলেও এখন বলছে, হ য ব র ল অবস্থায় ফেলে রেখে আমেরিকার বিদায় নেয়াটা ঠিক হচ্ছে না। এতে মনে হয় আফগানিস্তানে আগামীতে যে মাত্রাতেই হোক না কেন, হয়তো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে আর উত্তপ্ত হয়ে উঠবে ভিন্ন কোনো দেশ, যে কেন্দ্রগুলোর কোনো কোনোটি বাংলাদেশের একেবারেই নিকটবর্তী।
mrkmmb@gmail.com