বাইডেন কেন আফগানিস্তান থেকে সরতে চাচ্ছেন?
জো বাইডেন - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তানে আজ যে দুরবস্থা তার সূচনা হয়েছিল দেশটিতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক হস্তক্ষেপে। এর পথ ধরে পরাজয় শিকার করে ক্রেমলিনকে এখান থেকে শুধু বিদায় নিতে হয়নি, সে সাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার কারণও সৃষ্টি হয়েছিল। এখনকার রাশিয়ার প্রত্যক্ষ কোনো সীমান্ত আর আফগানিস্তানে নেই। তবে মধ্য এশিয়ায় সাবেক সোভিয়েত বা রুশ প্রভাব নিরঙ্কুশ করার ক্ষেত্রে আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতির মধ্যে রাশিয়ার স্বার্থ রয়েছে।
সামগ্রিকভাবে দীর্ঘ আড়াই দশকের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে বিপর্যয়ের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে প্রাপ্তির হিসাব করতে গিয়ে তিক্ত বটিকা গেলার মতো আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে কাবুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে এর সবচেয়ে বড় কারণটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগতভাবে বড় ধরনের ‘প্যারাডাইম শিফট’। আফগানিস্তানে যখন আমেরিকার অভিযান পরিচালিত হয় তখন দেশটি প্রধান শত্রু হিসেবে ইসলামিক শক্তিকে চিহ্নিত করেছিল। দীর্ঘ দুই দশক এর পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় করার পর দেখা গেছে, এটি লাখ লাখ লোকের মৃত্যু এবং কয়েকটি সম্ভাবনাময় মুসলিম দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার কারণ হয়েছে। কিন্তু এ সময়ে নীরবে শক্তি সঞ্চয় করে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করার পর্যায়ে এসেছে চীন ও রাশিয়া। বাইডেনের সরকার আর সে সাথে আমেরিকার ক্ষমতা-বলয় মনে করছে, (হান্টিংটনের সভ্যতার দ্বন্দ্ব তত্ত্ব অনুসারে) শত্রু নির্ধারণে ভুল হয়ে গেছে, তাদের আসল শক্তি বা প্রতিপক্ষ চীন, সে সাথে রাশিয়া।
আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মার্কিন সঙ্কল্পের আরো একটি লক্ষণ হলো, গত সপ্তাহে বাইডেনের এক ঘোষণা। এই ঘোষণায় বলা হয়, আমেরিকা আরো বড় চ্যালেঞ্জকে এখন অগ্রাধিকার দেবে। বিশেষত তিনি মার্কিন শক্তির বিরোধী হিসেবে ‘চীনের উত্থান’ এর কথা উল্লেখ করেছেন। বাইডেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের প্রতিপক্ষ এবং প্রতিযোগীদের জন্য আরো শক্তিশালী হবো; আমরা শেষ ২০ বছর নয়, পরবর্তী ২০ বছরের জন্য লড়াই করছি। ’
সঙ্গত কারণেই আমেরিকার নতুন কৌশলগত কর্মপন্থায় লক্ষ্যবস্তুও পাল্টে গেছে। সম্ভবত চীন ও রাশিয়ার কোনো কোনো ছায়াকে যুক্তরাষ্ট্র তার লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এমন লক্ষ্যবস্তু হতে পারে মিয়ানমার ও ইউক্রেনের মতো এলাকা। আফগানিস্তানের মতো অগ্নিগিরিসম একটি উত্তপ্ত অঞ্চলে সামরিক অবস্থান বজায় রেখে নতুন লক্ষ্যে মনোযোগী হওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য কঠিন। সম্ভবত এ হিসাব থেকে আমেরিকা সত্যিকার অর্থেই আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিতে চাইছে। আর চীন ও রাশিয়া আমেরিকার এই দুই প্রতিপক্ষের নতুন উদ্বেগের জায়গাটাও এখানে। ফলে এতদিন দুটি দেশই আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার বিদায় কামনা করলেও এখন বলছে, হ য ব র ল অবস্থায় ফেলে রেখে আমেরিকার বিদায় নেয়াটা ঠিক হচ্ছে না। এতে মনে হয় আফগানিস্তানে আগামীতে যে মাত্রাতেই হোক না কেন, হয়তো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে আর উত্তপ্ত হয়ে উঠবে ভিন্ন কোনো দেশ, যে কেন্দ্রগুলোর কোনো কোনোটি বাংলাদেশের একেবারেই নিকটবর্তী।
mrkmmb@gmail.com