করোনার টিকার প্রভাব থাকে কত দিন?
করোনার টিকার প্রভাব থাকে কত দিন? - ছবি : সংগৃহীত
ভয়াবহ হয়ে ওঠছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতি দিনই লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আগের থেকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে করোনার নতুন স্ট্রেন। ভারতের অবস্থা আরো নাজুক। দেশটিতে বিগত সব রেকর্ড ভেঙে প্রত্যেক দিন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন ২ লাখেরও বেশি মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির জেরে বেশ কয়েকটি জায়গায় পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। হাসপাতালগুলোতে বেড, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের অভাব দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যে। কোথাও আবার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুও হচ্ছে মানুষের।
চার দিকে কেবল বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। এর ফলে জোর কদমে চলছে করোনার বিরুদ্ধে টীকাকরণ অভিযান। কয়েক লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এখনও প্রতিদিন লাইন দিয়ে করোনার ভ্যাকসিন নিচ্ছেন বহু মানুষ।
কোভিডের টিকা নিয়ে নানা তত্ত্ব ঘুরছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে কত দিন পর্যন্ত টিকার প্রভাব থাকবে? কারণ সকলেই জানেন, ভ্যাকসিন আজীবন কোভিড -১৯ এড়ানোর গ্যারান্টি দেয় না, তবে কিছু সময়ের জন্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। আজকাল মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, টিকা নেয়ার পর কত দিন শরীরে এর প্রভাব থাকবে? অথবা যিনি টিকা নিয়েছেন, তার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কত দিন পর্যন্ত থাকবে?
জেনে নিন-
ভ্যাকসিন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সম্প্রতি, কিছু বিজ্ঞানী এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন। যেখানে জানা গেছে টিকা নিলে মানুষের শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সমস্ত লোক করোনায় সংক্রামিত হয়েছেন তাদের ভ্যাকসিন ডোজ নেয়ার পর কোভিড -১৯-এর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে অনেকাংশে হ্রাস করে। অতএব, এই ভ্যাকসিনের দু'টি ডোজ শরীরে অনাক্রম্যতা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বলে তারা মনে করেন।
টিকা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা : গবেষণা কী বলছে?
আমেরিকান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন টিকা দেয়ার পরে ৪০০০-এরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী এবং সামনের সারির কোভিড যোদ্ধাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার ভ্যাকসিনগুলো সংক্রমণ প্রতিরোধে ৮০ ভাগ পর্যন্ত কার্যকর। এর পর যখন দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় তখন এর প্রভাব ৯০ ভাগ হয়ে যায়।
একই সময়ে, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিশিল্ডের উপরও গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা যায় যাদের কোভিশিল্ড দেওয়া হয়েছে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ৯০ ভাগ পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ব্রাঞ্চের এক্সপেরিমেন্টাল প্যাথলজি গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের পরিচালক জেরেমি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মডার্নার এবং ফাইজার দ্বারা তৈরি ভ্যাকসিন কোভিড -১৯ সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে দু থেকে তিন বছরের জন্য।
ভ্যাকসিনের প্রভাব কত দিন স্থায়ী হয়?
ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, ছয় মাস পর্যন্ত মারণ ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে এই ভ্যাকসিন। আবার কিছু ভ্যাকসিনের প্রভাব ছয় মাস থেকে এক বছর ধরে স্থায়ী হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। CDC-র ভ্যাকসিন কোভিড -১৯-এর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য টিকা ১০০ ভাগ পর্যন্ত কার্যকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রবীণদের অবশ্যই টিকা নিতে হবে
করোনভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকলেরই টিকা নেয়ার প্রয়োজন। তবে, বয়স্কদের ব্যক্তিদের প্রথমেই টিকা দিতে বলা হয়। কারণ, প্রবীণদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তরুণদের তুলনায় অনেক কম। তাই সরকারের তরফ থেকে আগে প্রবীণদের টিকা নেয়া দরকার।
সূত্র : এই সময়