বাবার মৃত্যু : একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ

সানজিদা হোসাইন | Apr 19, 2021 01:28 pm
বাবার মৃত্যু

বাবার মৃত্যু - ছবি : অন্য এক দিগন্ত

 

আমার বাবা মারা যান মোটর নিউরন ডিজিজে (গঘউ)। মোটর নিউরন ডিজিজ... সারা পৃথিবীতে যে রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। বিশ্বের অন্যতম দুর্বোধ্য এবং দুর্লভ ব্যাধি গড়ঃড়ৎ হবঁৎড়হ ফরংবধংব আবার খড়ঁ এবযৎরম’ং ফরংবধংব নামেও পরিচিত।

মূলত মোটর নিউরন নামক এই স্নায়ুকোষই আমাদের চলাফেরা, কথা বলা, খাবার গেলা, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং কোন কিছু মুঠো করে ধরার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। তাই যতই দিন যেতে থাকে মোটর নিউরনে আক্রান্ত মানুষটির জন্য জীবন যাপন ধীরে ধীরে ততই কঠিন হয়ে পড়ে এবং একসময় রোগী শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যান।

সেই সময়কার অনেক হৃদয় বিদারক অভিজ্ঞতা আমাদের আছে, যা আমি ওই কঠিনতম সময়ে ধৈর্যের পরীক্ষায় আমার মায়ের স্টার মার্কস নিয়ে পাস করা দেখে জীবন থেকে, মন ও মস্তিষ্ক থেকে মুছে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। সেইসব কথা আমরা ভুলেও কখনও মনে করি না। বরং সেই স্মৃতির অতল সেঁচে সেই সময়ের ভালো কথা গুলোই হাইলাইট করার চেষ্টা করি সবসময়।
বাবার যখন এই অসুখ ধরা পড়ে তখন আমি ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠবো। কলকাতার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে যখন ডাক্তার আমাদের রোগটা সম্পর্কে বুঝিয়ে বলছেন, তিনি তখনো নিশ্চিত না আমার বাবা গঘউ তেই আক্রান্ত কি না। শুধু ধারণার ওপর ভিত্তি করে তিনি আমাদেরকে এই রোগ সম্পর্কে কিছুটা তথ্য দেন।

এই রোগে মস্তিষ্কের এবং স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ু আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে স্নায়ুতে তথ্য আদান প্রদান কমে যায়। ফলে রোগী প্রতিবন্ধিতার মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুবরণও করতে পারে। প্রতি বছর বিশ্বে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে দুইজন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এই পরিসংখ্যান অবশ্য তেইশ বছর আগের। এখন শুনেছি সারা পৃথিবীতে বছরে প্রতি লাখে বারো জন আক্রান্ত হয়।
যাই হোক, এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, গবেষণা চলছে। রোগের মূল কারণও অজানা। বংশগত সাইকোলজিক্যাল বিকৃতি থাকলে এই রোগ হতে পারে। তবে সৈনিক ও ফুটবলারদের এই রোগ বেশি হয়। সাধারণত দুই বছরের মাথায় রোগীর মৃত্যু হয়।
ডাক্তার তার কম্পিউটার ঘেটে আমাদের একটা ডকুমেন্টারি দেখান। বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ডাক্তাররা তাকে বলেছিলেন, “তুমি আর মাত্র দু’বছর বেঁচে থাকবে। তার বেশি নয়।”

তবে তিনি ডাক্তারদের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে করে দিয়ে হুইলচেয়ারে বসেই বেঁচে ছিলেন আরো ৫৪ বছর। একটা যন্ত্রের মাধ্যমে তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতেন। প্রথমে হাতে রাখা একটি সুইচের মাধ্যমে এবং শেষ পর্যন্ত গালের একটিমাত্র পেশির সাহায্যে তিনি যন্ত্রটি পরিচালনা করতেন।
ডাক্তার আমাদের শেষ কথা যেটা বলেছিলেন সেটা হলো, "খবঃ'ং যড়ঢ়ব ধহফ ঢ়ৎধু ভড়ৎ ঃযব সরৎধপষব."
ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “স্টিফেন হকিং কত বছর যাবৎ এ রোগে ভুগছেন?”
তিনি বললেন “প্রায় তিরিশ বছর।”
“তাহলে আমার বাবা মাত্র দুই বছর বাঁচবেন বলছেন কেন? হকিং তিরিশ বছর বেঁচে থাকতে পারলে আমার বাবা কেন পারবে না?”

ডাক্তার বলেন, “তিনি স্টিফেন হকিং। বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী।”
আমি দৃপ্ত কণ্ঠে বলি, “আমার বাবাও বাংলাদেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশের জন্য ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। আপনি তো বললেন এই রোগ সৈনিকদের হয়। আমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত মানুষটির শরণাপন্ন হবো বাবাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। স্টিফেন হকিংকে যেভাবে ৩০ বছর ধরে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে আমার বাবাকেও সেভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”
ডাক্তার আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলেন, “এই মেয়েটা কি বলছে?”

আমার নিজেরও ধারণা ছিল না আমি কি বলছি। মা সেবার আমাদের সাথে যাননি। আমার ছোট ভাইয়ের বয়স তখন মাত্র চার মাস। বাবার একজন বন্ধু ছিলেন আমাদের সাথে। তিনি আমাদের নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলেন। আমাদের দুই বোনকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে যখন তারা প্যাথলজিক্যাল টেস্টের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে গেলেন, তখন আমি অনেক অনুরোধ করে আবার তার চেম্বারে ঢুকেছিলাম। বড় আপু অনবরত কেঁদেই চলছে। আমি ডাক্তারকে বললাম,

“স্যার, আমার ছোট ভাইটার বয়স চার মাস। সে কখনো আমার বাবার কোলে চড়তে পারবে না? বাবার হাত ধরে হাঁটা শিখবে না? মাত্র আড়াই বছর বয়সে সে বাবার মৃত্যু দেখবে?”
আমার চোখে এক ফোঁটা পানি নেই। রাগে দুঃখে ফেটে পড়া আমার অন্তরাত্মা কিছুতেই আমাদের পরিবারের উপর সৃষ্টিকর্তার এই আচরণ মেনে নিতে পারছে না। ডাক্তার তার চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, “আমি কখনো বাংলাদেশে যাইনি। কার্ড দিয়ে দিচ্ছি। তোর বিয়েতে দাওয়াত করিস। বাংলাদেশ দেখতে যাবো। তুই অনেক সাহসী মেয়ে। মা কে, দিদিকে আর ভাইদের দেখে রাখিস।”

আধো আধো বাংলা বলা সেই অবাঙালি ডাক্তারের কার্ড আমি চেম্বার থেকে বেরিয়েই ছুড়ে ফেলে দিই। আকস্মিক ক্ষোভ গিয়ে ভর করে সেই ডাক্তারের ওপর।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে চোখমুখ শক্ত করে থাকতে দেখে বাবা হো হো করে হেসে পিঠ চাপড়ে বলেছিল, “চিয়ার আপ মাই ডিয়ার। আমি হবো বাংলার প্রথম স্টিফেন হকিং।”
এর পর প্রায় দুই বছর একটু একটু করে স্নায়ুযুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করতে দেখেছি আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। সারাক্ষণ অদম্য উচ্ছ্বাসে মেতে থাকা মানুষ আমার বাবা। হইহই করে বাড়ি মাথায় তুলে রাখা আমার বাবা যখন ড্রইংরুমে হুইলচেয়ারে বসেই স্টিফেন হকিং এর “ব্ল্যাক হোল” আর “বিগ ব্যাং থিওরি” আবিষ্কারের মতো আবিষ্কার করছেন দৃষ্টির অগোচরে লুকিয়ে থাকা নিজ জীবনের অসংখ্য ব্ল্যাক হোল, বিগ ব্যাং থিওরির মতো নিজের আদ্যোপান্ত ঘেটেও মেলাতে পারছেন না জীবনের তত্ত্বগুলো, তখন আমি মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

স্টিফেন হকিং ‘ব্ল্যাক হোল’ থিওরির যাবতীয় বিষয় নিয়ে লেখেন- ঞযব খধৎমব ংপধষব ঝঃৎঁপঃঁৎব ড়ভ ঝঢ়ধপবঃরসব নামের গ্রন্থ... লিখতে সময় লেগেছিল চার বছর।
ব্ল্যাক হোল ও বিগ ব্যাং থিওরির নিয়ে লেখেন- অ ইৎরবভ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঞরসব... লন্ডনের ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে স্টিফেন হকিংয়ের এ বইটি পুরো বিশ্বে দুইশ পাঁচ সপ্তাহ বেস্ট সেলার লিস্টে ছিল।
দুই বছর হুইল চেয়ারে বসে আমার বাবাও তার অনেক কথা দিয়ে আমাদের অনেকের কাছেই আজীবনের জন্য বেস্ট টেলার উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
‘সানডে টাইমস’ পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হকিং বলেছিলেন, “শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে আমি কখনো বিষণ্নতা বোধ করি না। কারণ আমি যা চাই তা করে উঠতে পারি এবং তা আমাকে সাফল্যের তৃপ্তি দেয়।”

স্টিফেন হকিংয়ের মতো করেই বাবা হুইল চেয়ারে বসে জীবনকে সর্বোচ্চ উপভোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। আমরা অবাক হয়ে দেখেছি, শারীরিক যন্ত্রণাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে আবদ্ধ জীবনকে কিভাবে তিনি উপভোগ করেছেন প্রত্যেকটা মুহূর্তে।

আমার এসএসসি পরীক্ষা চলার সময় একবার তিনি বাথরুমে পড়ে যান। বায়োলজি পরীক্ষার দিন সকালবেলা বাবাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটা বাম দিকে যায়। আর আমি ডান দিকে কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষার হলে। এমার্জেন্সিতে চিকিৎসা নিয়ে আমার আগেই তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তখন বুঝিনি, কি কষ্ট করে ওইটুকু জীবনীশক্তি তিনি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন আমার পরীক্ষাটা শেষ হওয়ার জন্য।
প্র্যাক্টিকেল পরীক্ষা যেদিন শেষ হয় সেদিন তিনি জোর করে আমাদের দুই বোনকে নানু বাড়ি পাঠিয়ে দেয় কয়েকদিন বেড়িয়ে আসার জন্য। পরদিন সকালেই বাড়ি থেকে ফোন আসে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এরপরের দিনগুলো কেটে যায় শান্ত, চুপচাপ আইসিইউ’র সামনে বসে। আমাদের কারোরই কিচ্ছুটি করার নেই। শেষ কর্তব্যটুকু পালন করে যাচ্ছে ভেন্টিলেটর মেশিনের সাথে যুক্ত মনিটর। অ্যালার্ম দিচ্ছে নিয়মমাফিক। কখনো বিপদসঙ্কেত, কখনো শান্ত বাধ্য, রেগুলার রিডিং। মাঝে মধ্যে হুড়মুড় করে ডাক্তার, সিস্টারদের ছোটাছুটি। হঠাৎ করে আমার বাবা হয়ে গেলেন বেড নাম্বার ৪/এ।
কয়েকটা দিন এভাবেই কেটে গেল। হঠাৎ এক দিন কী যেন একটা হলো। আধা বেলা হরতাল ছিল বলে সকালে হাসপাতালে যাইনি। মা স্যুপ নিয়ে গেছিলেন। কাপে ঢালতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে ফ্লাস্কটা ভেঙে যায়। পুরো স্যুপ ছিটকে পড়ে মেঝেতে। বাবার এত্তোবড় মটোরোলা সেট থেকে ফোন করে মা বাড়িতে খবর দেয় আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আইসিইউর সামনে পৌঁছে দেখি করিডোরে নিশ্চুপ হয়ে থাকা পরিচিত মানুষের ভিড়। একদল ইন্টার্নি ডাক্তার দৌড়ে গেল আইসিইউর কাছে। ক্ষেপে উঠেছে মনিটর। দরজার গোল কাঁচ দেয়া জায়গাটায় চোখ রেখে দেখি বাবার বেড ঘিরে দাঁড়িয়ে সবাই। অনেক হাতড়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না পালস। ডাক্তারের গলা চড়ছে, নার্সদের ছোটাছুটি বাড়ছে। কারো হাতে ইঞ্জেকশন, কেউ সিপিআর দেয়ার জন্য প্রস্তুত। তাড়াহুড়ো করে অ্যাম্পুল ভাঙতে গিয়ে কারো হাতে কাঁচ ঢুকে যাচ্ছে। নিউরো ডিপার্টমেন্টের হেড এসির ঠাণ্ডা বাতাসেও ঘেমে উঠছেন। শার্টের হাতায় কপাল মুছে বারবার না সূচক মাথা নাড়ছেন।
টেনে-হেঁচড়ে সেখান থেকে যখন সরিয়ে আনা হলে দেখি, এক পাশে মাকে ঘিরে সব আত্মীয়-স্বজন। সবচেয়ে বড় মামাতো ভাইটা তার বিশাল দেহ নিয়ে ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ে কাঁদছে। একটু দূরেই মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মামারা। জ্যাঠা তার একমাত্র ভাইয়ের শোকে বুক চাপড়ে চিৎকার করছে। সবাই তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

আমার সেদিকে যাওয়ার সাহস হলো না। দূরে একটা আলাদা বিল্ডিংয়ে যাওয়ার বাইপাস ব্রিজের মতো একটা জায়গায় কয়েকটা জোড়া লাগানো চেয়ারে গিয়ে বসলাম। তখনো বড় আপু গোল কাঁচের দরজায় নাক ঠেকিয়ে আছে। তাকে কেউ সরাতে গেলেই তেড়ে উঠছে সে। স্কুল পড়ুয়া ১০ বছরের ভাইটা একটা পিলারের পেছনে লুকিয়ে ছিল। সে এসে আমার পাশে চুপ করে মাথা নিচু করে বসলো। একবার শুধু জিজ্ঞেস করেছিল,

‘বাবা মারা যাচ্ছে?’

আমি কিছু উত্তর না দেয়ায় আবার উঠে সেই পিলারের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে রইলো।
একটু পরেই দরজা খুলে একজন ডাক্তার বেরিয়ে এলেন। হাতে একটা ফাইল, সই করতে হবে, আশঙ্কা অবস্থার সম্মতিপত্র। আমি মনে মনে ভাবছি, কে সই করবে? মা কলম ধরতে পারবে?
শুনতে পেলাম আমার বড় মামা বলছে ‘চেষ্টা করেন না। আমাদের চার ভাইয়ের একটা মাত্র বোন। সন্তানগুলো ছোট ছোট। আরেকটু চেষ্টা করে দেখেন না।’

শেষ পর্যন্ত কে সই করেছিল জানি না। ভেতরে যুদ্ধ চলছে। সিনেমায় দেখেছি শেষ চেষ্টা করতে শক দেয়। ইচ্ছে হলো গিয়ে তাদের বলি, “ওটা দেবেন না। আমার বাবা আমাদের পুরো পরিবারের ওয়ান ম্যান আর্মি। আমাদের গ্রামের স্কুল, মসজিদ, মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা। লায়ন্স ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাকে আপনারা কোনো শক দেবেন না। পরজয়ে ডরে না বীর। তাকে পিসফুলি এক্সপায়ার করতে দিন।”
অবাধ্য মনিটরটা বিপ বিপ শব্দ করতে করতে চোখ রাঙিয়ে একসময় শান্ত হয়ে গেল। মিরাকল হলো না। সবসময় মিরাকল হয় না। মনে পড়ল, বাবা হুইল চেয়ারে বসেও নেতিয়ে পড়া লতার মতো শরীর থেকে বজ্রপাতের মতো আওয়াজ করে বলত... ‘লেট লাইফ প্লে হিমসেল্ফ।’

ডেথ সার্টিফিকেট মানে যে সবসময় হেরে যাওয়া নয় সেই প্রথম বুঝেছিলাম। ডেথ সার্টিফিকেট মুক্তির সনদপত্র। দেশ স্বাধীন করে যেমন রাইফেলে ফাঁকা গুলির আওয়াজ করতে করতে গ্রামে ফিরেছিলেন, ঠিক তার বিপরীত নৈঃশব্দে চলে গেলেন অসীম পথের যাত্রায়।

অসুস্থ হওয়ার পর বাবা বলতেন, ‘সৃষ্টিকর্তা যখন কারো ওপর অসন্তুষ্ট হন, তখন কোনো না কোনোভাবে তার প্রার্থনা করার সুযোগটা কেড়ে নেন তার সব প্রয়োজন মিটিয়ে দিয়ে। আর তিনি যখন কারো ডাক শুনতে চান তখন তাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন। বান্দা আকুল হয়ে তার মালিককে স্মরণ করে। সৃষ্টিকর্তা আমার ডাক শুনতে চান।’

পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে ভালো থাকা, জীবনকে উপভোগ করা, বিষণœতায় না ভোগা, হাসিমুখে প্রকৃতিকে মেনে নেয়া।

বিধাতা যাকে দেয়, দু’হাত ভরে দেয়। যাকে দেয় না, তাকে বুঝেশুনেই দেয় না। তাই যা পাওয়া হয়নি তা নিয়ে অনুশোচনা করতে নেই।

চিরায়ত নিয়মে মানুষের জীবনটা এক দিন হঠাৎ করে থেমে যাবে। চার দেয়ালে বন্দী হবে। ক্লিনিক্যাল বেডটা সঙ্গী হবে। তখন শৈশব, কৈশোর, ফেলে আসা দিন, দুরন্তপনা... সবকিছু মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠবে। বুকের বামপাশে চিনচিন ব্যথা অনুভব হবে... আর মনে হবে,
‘উফ! জীবনকে যেভাবে উপভোগ করা উচিত ছিল, সেভাবে কখনোই করা হয়নি। অথচ জীবন কত সুন্দর ছিল।’


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us