করোনায় লণ্ডভণ্ড যে ৪ দেশ
করোনাভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম থাবা বসায় সে। তার পর ক্রমেই ওই থাবা বড় হয়েছে। গ্রাস করেছে গোটা দুনিয়াকেই। দুনিয়ার মানুষ, মানুষের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি- সবই গিলে খেয়েছে করোনা। পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত ৩০ লাখ মানুষ করোনায় মারা গিয়েছে।
২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুনিয়ায় করোনার বলি ছিল ১০ লাখ। পাঁচ মাসেরও কম সময় পর, ২১ ফেব্রুয়ারি ওই মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ ২০ লাখ। আর পরের দু’ মাসের মধ্যে সেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০ লাখ। এর নেপথ্যে অবদান রয়েছে মূলত চারটি দেশের। মৃত্যুর নিরিখে প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে আমেরিকা, ব্রাজিল, মেক্সিকো। তবে পিছিয়ে নেই ভারতও। এক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে।
• মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : যখন করোনা প্রথম শুরু হয়েছিল, তখন ১৯৫টি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, আমেরিকাই সবচেয়ে ভালোভাবে এই মহামারী সামাল দিতে পারবে। কারণ তাদের কাছে সেই পরিষেবা, পরিকাঠামো রয়েছে। বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। এর জন্য দায়ী অবশ্যই পূর্বতন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন।
এখন পর্যন্ত আমেরিকায় করোনায় মারা গিয়েছেন ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ জন। প্রতি ৫৬৭ জনের এক জন।
• ব্রাজিল : ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪৯ জন। এখন বিশ্বে করোনায় প্রতি চারজন মৃতের মধ্যে একজন ব্রাজিলের। আর এই মৃত্যুর মিছিলের নেপথ্যেও রয়েছে প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারোর ভুল সিদ্ধান্ত, পরিচালন ব্যবস্থা।
• মেক্সিকো : দেশের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৯৩ জন। কিন্তু আসল মৃত্যুর সংখ্যা তার থেকে অনেক বেশি। বেসরকারি হিসেবে, ওই দেশে করোনায় মারা গেছে ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা বলছে, মেক্সিকো সরকারে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খরচ করার অনীহা, করোনা পরীক্ষার কম হারই বিপদ ডেকে এনেছে।
• ভারত : এখন পর্যন্ত মারা গেছে করোনায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪৯ জন। মনে রাখতে হবে, ওই তিন দেশের তুলনায় জনসংখ্যাও ভারতে অনেক বেশি। সংক্রমণের নিরিখে মৃত্যুর হার (আইএফআর) এ দেশে তাই অনেকটাই কম। এ দেশে আইএফআর ০.০৮ শতাংশ। আমেরিকায় এর প্রায় আট গুণ বেশি।
প্রতি তিন মিনিটে একজন কোভিড আক্রান্তের মৃত্যু মহারাষ্ট্রে!
গত বছরের মতো, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এ বিপর্যস্ত গোটা মহারাষ্ট্র। গোটা ভারতের মধ্যে রেকর্ড সংক্রমণের হার প্রতিদিন এই রাজ্যে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মিনিটে রাজ্যে ২ হাজার ৮৫৯ জন করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসছেন। গড়ে প্রতি তিন মিনিটে একজন মানুষ কোভিড আক্রান্ত মারা যাচ্ছেন। রোববার রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ অতীতের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। নতুন করে ৬৮ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্রে। এই নিয়ে মোট ৩৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৮ জন কোভিড আক্রান্ত হলেন এই রাজ্যে।
তথ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, রোববার গোটা রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৫০৩ জন। এই নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে শুধু মহারাষ্ট্রে মারা গেলেন ৬০ হাজার ৪৭৩ জন। অন্যদিকে শুধুমাত্র বাণিজ্যনগরী মুম্বইতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৪৬৮ জন। যাদের মধ্যে মারা গিয়েছেন ৫৩ জন। এই নিয়ে মুম্বইয়ে কোভিড আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ১২ হাজার ৩৫৪ জন। পাশাপাশি রবিবার, মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপ দাবি করেছেন, অক্সিজেনের অভাবে কোনো করোনা রোগী এই রাজ্যে মারা যাননি। রোগীর তরফে গাফিলতির কারণে, এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসাধীন না হওয়ার কারণে মৃত্যু হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই জনতা কার্ফু জারি করা হয়েছে মুম্বইতে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিংবা প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অক্সিজেনের ঘাটতি দেখায়, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের তরফ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল ট্রেনে করে অক্সিজেন সরবরাহ করার। সেই অনুরোধের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানান, খুব শিগগিরই চালু করা হবে 'অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেন'।
সূত্র : আজকাল