ভয় বাড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন!
মমতা ব্যানার্জি - ছবি : সংগৃহীত
গত এক মাসেরও কিছু বেশি সময় ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আনাচকানাচ ঘুরে বেড়াচ্ছি। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষ কী বলছেন, নেতারা কী বলছেন, তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি আপনাদের সামনে। যত ঘুরছি, তত ভয় করছে।
গত এক মাসে ভারতে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়েছে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যখন দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভোট কভার করতে এসেছিলাম, গোটা ভারতে করোনার দৈনিক সংক্রমণ তখন হাজারেরও নিচে নেমে গিয়েছিল। গত এক সপ্তাহে যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আরো অনেকের মতো আমারও একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। সত্যিই কি এত দিন ধরে ভোটের কোনো প্রয়োজন ছিল?
এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া মুশকিল। পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪টি আসনে আট দফায় ভোট করাচ্ছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গ স্পর্শকাতর অঞ্চল। ভোট নিয়ে এখানে রাজনৈতিক উত্তেজনা অন্য অনেক জায়গার চেয়ে বেশি। ফলে যথেষ্ট সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে সুষ্ঠুভাবে ভোট করতে হলে বেশি দফা প্রয়োজন। কথা খুব ভুল নয়। রাজনৈতিক হানাহানির ঘটনা এর মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ দেখে ফেলেছে। যার সব চেয়ে বড় ঘটনা শীতলকুচি। সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন চারজন। কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালালো, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে যথেষ্ট।
প্রায় প্রতিদিন রাজ্যে ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বড় বড় জনসভা রোড শো করছেন। হাজার হাজার মানুষ সেখানে জড়ো হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রায় প্রতিদিন একাধিক সভা করছেন। সেখানেও মানুষের ভিড়ের ছবিটি একই রকম। পশ্চিমবঙ্গে কোনো পাড়ায় ঢুকলে বোঝার উপায় নেই, গোটা দেশে করোনার দৈনিক সংক্রমণ দুই লাখ। বোঝা যাচ্ছে না, রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে আর বেড নেই। করোনা রোগীর চাপ এতটাই বেশি।
গত এক মাসে বেশ কয়েকটি জনসভা দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। মোদি-শাহ, মমতা ব্যানার্জি এবং সিপিএমের একাধিক সভা দেখেছি। নিরাপদ দূরত্বের কোনো ব্যাপারই নেই সেখানে। মাস্ক ছাড়া গায়ে গায়ে সকলে বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন। কাউন্টারে বিড়ি টানছেন, বাদামভাজা ভাগাভাগি করে খাচ্ছেন, হাঁচছেন, কাশছেন- সবই করছেন স্বাভাবিক সময়ের মতো। যে নেতারা কিছু দিন আগেও প্রাইম টাইমে টেলিভিশনে করোনা নিয়ে বড় বড় ভাষণ দিয়েছেন, তারাই এখন জনসভা করে বেড়াচ্ছেন। ভোট বড় বালাই।
সন্দেহ নেই, ভোট গুরুত্বপূর্ণ। আগামী চার বছর পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত দাঁড়িয়ে আছে এই নির্বাচনের উপর। কিন্তু তা মানুষের জীবনের চেয়ে বড় হতে পারে না। কমিশন এবং নেতারা যদি সে কথা না বোঝেন, তা হলে বৃথাই তারা জনপ্রতিনিধি। আরো এক কাঠি উপরে গিয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি, যে ভাবে করোনা বাড়ছে, তার দায় কিন্তু তাদেরও নিতে হবে।
চারদিকে ভোটের যে ছবি দেখছি, তাতে ভয় করছে। সত্যিই ভয় করছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে