ভারতীয় মিডিয়াকে ক্ষমা করে দিয়েছি
মাওলানা সাদ - ছবি : সংগৃহীত
কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিনে ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজে যাওয়ার জন্য তবলিগি জামাত কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশটির প্রায় সব মিডিয়া। ভারতে করোনাভাইরাস বিস্তারের জন্য একতরফাভাবে তাদেরকে দায়ী করে চলেছিল। তারা সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে চললেও প্রবল আক্রমণের শিকার হচ্ছিলেন। কিন্তু তারপরও তবলিগি কর্মীরা নীরব থেকে শান্তি বজায় রেখেছিলেন। দেশের করোনা ছড়ানোর জন্য মিডিয়া তাদেরই কাঠগড়ায় তুলে অপরাধী সাব্যস্ত করেছিল।
দীর্ঘ দিনের এক তবলিগি সদস্য বললেন, 'আমরা আল্লাহর জন্য ভারতের মিডিয়া ও যারা আমাদের সন্ত্রাসী বলে সমালোচনা করেছিল তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। মার্কাজ থেকে আমাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে গত বছরের ঘটনা নিয়ে মিডিয়াতে কথা না বলতে।'
আরো এক তবলিগি কর্মী বলেন, বিনা কারণে দেশের অনেক আদালতে তবলিগি কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন হওয়ায় সব মামলায় তবলিগিরা জয়ী হয়। তিনি আরো জানান, মিডিয়া অভূতপূর্ব মিথ্যাচার করার জন্য গভীর হতাশা ও অপমানের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তবলিগিদের। কিন্তু তবলিগি জামাত প্রধান মাওলানা সাদ আশা জুগিয়েছিলেন ওই বিষাদের দিনে।
তিনি জানান, তবলিগি কর্মীরা প্রশাসনের সম্মতি নিয়েই জমায়েত করেছিল। সরকারও জানত বিদেশী অতিথিদের বিষয়ে। কিন্তু তারা এমন ভাব দেখাল যেন তারা কিছুই জানত না। একটা ভয়ানক ষড়যন্ত্র হয় গোটা বিষয়টাকে নিয়ে।
হায়দরাবাদের এক তবলিগি কর্মী জানালেন, বহু বিদেশীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয় এবং যাদের ফেরার তাড়া ছিল তাদের জরিমানা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। বাকিরা দেশের নানা আদালতে মামলা লড়ে জয় লাভ করে দেশে ফিরেছেন।
তদন্তের পর ৪৮টি চার্জশিট ও ১১টি অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেয়া হয় ৩৬ দেশের ৯৫৩ জন বিদেশীকে টার্গেট করে। অতিমারি আইনসহ ভারতীয় দণ্ডবিধির অনেক ধারায় তাদের আটক করা হয়। যাই হোক, অবশিষ্ট আট বিদেশী সব ঝামেলা কাটিয়ে চলতি বছরের ৮ মার্চ নিজেদের দেশে ফিরতে পারেন।
দেশের বড় বড় মিডিয়া সংস্থা তবলিগি সমাবেশ নিয়ে আক্ষরিকভাবে শো সম্প্রচার করে এবং মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য মুসলিমরাই দায়ী। রিপাবলিক টিভি ও আজ তকের মতো চ্যানেলগুলো তবলিগি জামাতের পিছনে পড়ে যায়। হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ তৈরি করে নকল ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের মগজধোলাই করা হয়। এর ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও শহরে বিপদের মধ্যে পড়েন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালত জানায়, ভাইরাস ছড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে নিজামুদ্দিন মার্কাজে ওই সমাবেশ করেনি তবলিগি জামাত।
মজার ব্যাপার হলো, বর্তমানে কুম্ভ মেলা চলছে ভারতের ভয়াবহ সংক্রমণের সময়। এখন কিন্তু ওইভাবে ভারতীয় মিডিয়া বিষয়টি তুলে ধরছে না।
সূত্র : পুবের কলম