করোনায় যেসব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
করোনাভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত
কোভিড-পরবর্তী উপসর্গ অনেক সময় মাসের পর মাস থেকে যেতে পারে। এই ভাইরাস, আক্রান্তের লাংস, হার্ট ও ব্রেনকে ক্ষতি করতে পারে। ফলস্বরূপ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য জটিলতার আশঙ্কা থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সাধারণত বয়স্ক মানুষ যারা নানা জটিল অসুখের শিকার, তাদের ক্ষেত্রেই শুধু কোভিড-পরবর্তী উপসর্গ অথবা লং কোভিড-১৯ দেখা যায় তা কিন্তু নয়, কম বয়সীরাও করোনার দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য জটিলতার শিকার হতে পারেন।
কী কী স্বাস্থ্য জটিলতা হয়?
দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, গিঁটে ব্যথা, বুকে ব্যথা, মাংসপেশীর ব্যথা, হৃদয় চঞ্চলতা, স্বাদ-গন্ধহীন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা, চুল পড়ে যাওয়া।
বিভিন্ন অঙ্গে কোভিড-এর কুপ্রভাব
হার্ট কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার কয়েক মাস পরও (এমনকী যাদের বিশেষ কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি) ইমেজিং টেস্ট করে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির ক্ষত দেখা গেছে। এই ক্ষত থেকে ভবিষ্যতে হার্ট ফেলিওর কিংবা অন্য কোনো হার্টের অসুখ দেখা দিতে পারে।
ফুসফুস কোভিড-১৯ ফুসফুসের বায়ুথলির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে দিতে পারে, এবং এই ক্ষতিগ্রস্ত স্কার টিস্যু দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টের কারণ হতে হতে পারে।
মস্তিষ্ক , কেডিড-১৯ ইনফেকশনের ফলে স্ট্রোক– খিঁচুনি– গুলেন বারি সিনড্রোম হতে পারে। কম বয়সীরাও শিকার হতে পারেন এই সব জটিলতার। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ভবিষ্যতে পারকিনসন ডিজিজ এবং অ্যালঝাইমার্স রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, করোনা ভাইরাস রক্ত কণিকাদের জমাট বাঁধিয়ে দিতে সক্ষম। এই জমাট বাঁধা রক্ত যেকোনও ছোটোখাটো রক্ত জালিকা থেকে শুরু করে হার্ট, ব্রেন, কিডনি, লিভার, পা ইত্যাদি অঙ্গে রক্ত চলাচল বন্ধ করে তাদের কর্মক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ফলস্বরূপ, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, ইত্যাদি রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। কোভিড-১৯ ইনফেকশন রক্ত জালিকা থেকে রক্তের উপকরণ বাইরে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনতে পারে।
মানসিক জটিলতা , যেসব করোনা রোগীর আইসিসিইউতে চিকিৎসা হয়েছে এবং ভেন্টিলেটরের দ্বারা কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে নানা মানসিক জটিলতা দেখা যেতে পারে। যেমন, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস সিন্ড্রোম, মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি।
বেশির ভাগ রোগী যারা করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে উঠেছেন, তাদের ক্ষেত্রে ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম দেখা যায়। এটি একটি বেশ জটিল সমস্যা যেখানে অসম্ভব দুর্বলতা, মানসিক কিংবা শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে আরো বেড়ে যেতে থাকে, বিশ্রামেও কমে না সেই দুর্বলতা।
সত্যি কথা বলতে, করোনা পরবর্তী জটিলতার কতটুকুই বা আমাদের জানা। নতুন ভাইরাস, নতুন রোগ, নতুন নতুন উপসর্গ এবং হয়তো বা অজানা অনেক জটিলতা। নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের থেকে পাওয়া তথ্য এবং বিভিন্ন সেন্টারে গবেষণামূলক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের গবেষণীয় উঠে আসা তথ্যের উপর ভিত্তি করেই আমাদের অতিমারির সঙ্গে এই লড়াই। করোনা সংক্রমণ বিষয়ক কিছু কিছু তথ্য জানা গেলেও অনেক তথ্যই বোধহয় এখনও অজানাই থেকে গিয়েছে। ইনফেকশন থেকে সেরে উঠলেও ডাক্তারবাবুদের তত্ত্বাবধানে থাকাই শ্রেয়। যে কোনও শারীরিক জটিলতা দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।
বেশিরভাগ কোভিড আক্রান্ত রোগী সেরে উঠছেন এটি একটি সুখবর তো বটেই, কিন্তু কিছু কিছু রোগী সেরে ওঠার পরও পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোম বা লং কোভিড-১৯-এর কারণে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম। কাজেই সংক্রমণের হাত থেকে অন্যকে নিরাপদ রাখতে নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ভীষণভাবে জরুরি। করোনা থেকে সেরে উঠলেও নিয়মমাফিক মুখবন্ধনী ব্যবহার করুন। অযথা জনসমাগম এড়িয়ে চলুন, হাত বারবার সাবানজলে কুড়ি সেকেন্ড ধরে ধুতে থাকুন, যতদিন না এই মহামারির হাত থেকে সমগ্র পৃথিবীকে মুক্ত হতে পারে। এই সমস্ত সমস্যার সমাধান হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে সম্ভব যদি এই পদ্ধতিতে মানুষের সঠিক চিকিৎসা করা হয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সুফল পাওয়া যাবে।
সূত্র : পুবের কলম