চীনের তাইওয়ান নীতিতে বিপর্যয় আসবে!
চীনের তাইওয়ান নীতিতে বিপর্যয় আসবে! - ছবি : সংগৃহীত
বেইজিং এ বছর পয়লা মার্চ থেকে তাইওয়ানে ‘আনারস যুদ্ধ’ শুরু করেছে। হঠাৎ আনারসের ভরা মওসুমে বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো অঘটন ঘটায় হিমশিম খাচ্ছে তাইপে। সামাল দেয়ার জন্য তাইওয়ান সরকার দেশের অভ্যন্তরে আনারসের চাহিদা বৃদ্ধির নানা চেষ্টা করছে; তাইওয়ানে রেস্টুরেন্ট মালিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে, আনারস খাবারের বেচাবিক্রি বাড়ানোর এবং শেফরা নতুন নতুন আনারস-খাবার প্রস্তুত প্রণালী আবিষ্কার করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন মনে করেন, এভাবে আনারস-খাবারের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবে এবং আনারস বিনষ্ট হবে না। প্রেসিডেন্ট ওয়েন মজা করে বলেন, ‘পেট বিস্ফোরিত না হওয়া পর্যন্ত খেতে থাকুন’।
তাইপের নাম করা শেফ হুং চিং লুং তার রেস্টুরেন্টে আনারস-গরুর গোশত-নুডলস উপকরণ দিয়ে নতুন ধরনের স্যুপ বানিয়ে দেদার বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে এই বিফ স্যুপ পরীক্ষা করার পর ভোক্তাদের সরবরাহ করা হচ্ছে। তাইওয়ানের ভোজন রসিকরা বিফ স্যুপে ভালো সাড়া দিয়েছেন। লুং এই খাবারের ১০টি ভেরিয়্যান্ট তৈরি করে তাক লাগিয়েছেন সবাইকে। পাচক চিংও আনারসের স্যুপ বানিয়েছেন। প্রথম প্রথম মিষ্টির জন্য অখাদ্য হলেও পরবর্তীতে তিনি সুস্বাদু আনারস স্যুপ বানাতে সক্ষম হয়েছেন। তাইপের লোকজনদের এখন রসনা ও ক্ষুণ্নিবৃত্তিতে আনারস স্যুপ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আনারস যুদ্ধে ক্লান্ত তাইওয়ান কৃষকদের যেকোনো ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য ৩৫ মিলিয়ন ডলার প্রণোদনা সহায়তা দিচ্ছে। চীনের পরিবর্তে অন্যান্য দেশে- যেমন জাপান, আস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামে আনারস রফতানির ব্যবস্থা করছে। তাইওয়ান ফি বছর চার লাখ ২০ হাজার টন আনারস উৎপাদন করে যার ৯৫ শতাংশ চীনে রফতানি করা হয়।
চীন বলেছে, এটি কোনো রাজনীতি নয়, কোনো যুদ্ধ কৌশল নয়; এটি কৃষির পতঙ্গ ইস্যু ও সাধারণ নরড়ংধভবঃু সবধংঁৎব-এর বিষয়। দক্ষিণ চীনেও এবার প্রচুর আনারস উৎপাদিত হয়েছে, যাকে বলে বাম্পার ফলন। দক্ষিণের প্রদেশ গুয়াংদংয়ে দেশের সবচেয়ে বেশি আনারস উৎপন্ন হয়। এবার চীনে প্রচুর আনারস ফলনের কারণে আমদানির কোনো প্রয়োজন পড়েনি। চীনের এক তৃতীয়াংশ আনারসের খামার জুয়েন প্রদেশে। এবার জুয়েনে ছয় লাখ ৩৫ হাজার টন আনারস উৎপাদিত হয়েছে। আগামী বছরে সাত লাখ টন উৎপাদিত হওয়ার আশা। এ বছর আনারস খাতে চীন ১.৫ বিলিয়ন ইউয়ান বা ২৩২ মিলিয়ন ডলার আয় করছে।
ক্যাপ্টেন জেমস কুক ১৭৭০ সালের এপ্রিলে প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছিলেন, সে পথ ধরে ব্রিটিশরা তাড়াতাড়ি ১১টি জাহাজের বহর নিয়ে ক্যাপ্টেন আর্থার ফিলিপের নির্দেশে সেখানে যায়। দলে লোক সংখ্যা ছিল এক হাজার ৫০০ জন। তারা অস্ট্রেলিয়াকে ‘কলোনি’ বানায় যদিও আধুনিককালে এমন কোনো কলোনি বানানো সম্ভব নয়। তখন ব্রিটিশরা বিভিন্ন পণ্য নেয়া শুরু করে। এর মধ্যে ছিল কাঠ ও কাঠজাত পণ্য। ১৮০০ সালে হিমায়িত মেষ নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর বিভিন্ন শস্য, ডেইরি ও কৃষিপণ্য নেয়া শুরু হয়। এভাবে অস্ট্রেলিয়া খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান উপলক্ষ হয়ে উঠে। ব্রিটিশদের এই কৌশলটি চীনা বিশেষজ্ঞরা পছন্দ করেন এবং খাদ্য নিরাপত্তার কৌশল মনে করেন। বিশাল জনসংখ্যার কারণে চীন খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কৌশলকে কাজে লাগাতে এবং দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান প্রণালীকে ব্যবহার করতে চায়।
চীন ২০২১-২৫ সালে বয়স্কদের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য চিন্তিত। সরকার স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সহায়তার জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ এবং কৌশল অবলম্বন করতে আগ্রহী। চীনা পপুলেশন অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউআন জিন রয়টারকে এই তথ্য দেন। চীনে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক জনসংখ্যা এখন ২৫৪ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশের বেশি। সামনের দিনগুলোতে কর্মহীন মানুষের বড় চাপ পড়বে খাদ্য ও স্বাস্থ্য খাতে।
জনতত্ত্ববিদরা আরো বলেছেন, কাজ করতে পারে এমন জনসংখ্যা কমে ২০৫০ সালের মধ্যে ২০০ মিলিয়নে দাঁড়াবে। ২০১৬ সালে ‘এক সন্তান নীতি’র ফলে বছর বছর জন্মহার কমে যায়, ফলে চীন আবার দুসন্তানের নীতি গ্রহণ করেছে। জনতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া জনসম্পদ সামলাতে চীনকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। জাপানও এমন সমস্যায় ভুগেছে। তাই জাপানকে এখন ভোক্তাদের ৬৪ শতাংশ আমদানি করতে হয়। চীন জাপানের এই সমস্যাকে মাথায় রেখেছে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগর মাছের স্টকে ভরপুর। চীন মাছের সমুদ্রকে আরো পরিচর্যা করে বেশি মাছ আহরণ করতে চায় যাতে খাবারের সঙ্কট সৃষ্টি না হয়। চীনের এই প্রচেষ্টাকে ‘আগ্রাসন’ বলা যাবে না মোটেই। কেননা, চীনা মৎস্য ফার্মগুলো অস্ট্রেলিয়ার কোস্ট লাইনের ডারবিন বন্দর ও পাপুয়া নিউ গিনির দারুতে বড় অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। টরেস প্রণালীর উভয় দিক বড় বড় চিংড়ি ও লবস্টারে ভরপুর। চিংড়ি ও মাছ সমুদ্রসীমা না বুঝলেও এই সম্পদ নিয়ে সীমানা বিরোধ ও রাজনৈতিক কলহের সৃষ্টি হচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার না করলে চীন অনেক কাঁচা সম্পদ হারিয়ে ফেলবে। চীন এমনটি হতে দিতে চায় না। তবুও চীন ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তাকে সংহত করতে চায়। চীন মনে করে, বিপদে পড়ার চেয়ে বিপদকে দূর করাই শ্রেয়।
দক্ষিণ চীন সাগরে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জাহাজ চলাচল করে। চীন দক্ষিণ চীন সাগরকে নিজের করায়ত্বে রাখতে চায় এবং বিভিন্ন দেশের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে, উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ করে নিজের জোটভুক্ত করতে চায়। আমরা লক্ষ্য করেছি, চীন নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে; সেটিকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে- পরবর্তীতে অপরপক্ষের স্বার্থের দিকে নজর দিয়েছে। এ জন্য অনেক ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি আর উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি করেছে। পূর্ব চীন সাগরে জাপান এবং দক্ষিণ চীন সাগরে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে চীনের বিরোধ অব্যাহত রয়েছে।
চীনা বিতর্কিত সমুদ্রসীমায় বিভিন্ন দেশের মাছধরা নৌযানগুলোকে প্রায়ই চীনের কোস্ট গার্ডের মুখোমুখি হতে হয়। তাই চীনের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও সামুদ্রিক অধিকার রক্ষার জন্য দেশটির শীর্ষ আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস স্ট্যান্ডিং কমিটি কোস্ট গার্ড আইন পাস করেছে। ফলে কোস্ট গার্ড বিদেশী ট্রলার বা জাহাজের উপর গুলিবর্ষণের অধিকার অর্জন করেছে। চীনের দাবি করা সমুদ্রসীমার মধ্যে অন্য দেশের নির্মিত অবকাঠামো ধ্বংস এবং বিদেশী জাহাজগুলোতে তল্লাশি করারও অধিকার দেয়া হয়েছে। এতে যেকোনো সময় অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে মর্মে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আনারসের ভরা মওসুমে চীন এখন তাইওয়ানের কোনো আনারস আমদানি করছে না। বরং চীন আনারসের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে বয়স্ক খামারিদের বেশি লাভের পথ খুলে দেয়ায় আনারসচাষিরা খুশি। অপর দিকে, তাইওয়ান আনারস-আয়ের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল।
‘আনারস যুদ্ধে’ অস্ট্রেলিয়া সাথে সাথেই ঢুকে পড়ে এবং ঘোষণা দেয়, তারা আনারস কিনে নেবে। চীন অনেক আগ থেকে সব ধরনের অস্ট্রেলিয়ান মদে উচ্চকর আরোপ করেছে। সুযোগ বুঝে অস্ট্রেলিয়া অপ্রয়োজনীয় হলেও আনারস আমদানি করে কিছুটা শোধ নিলো যদিও অস্ট্রেলিয়ার বাজার আনারসে সয়লাব। প্রয়োজনের বেশি আনারস উৎপন্ন করে দেশটি। এর মধ্যে জাপানও অংশ নিয়েছে। জাপানিরা বলছে, ‘এবার তাইওয়ানি খাবো’। জাপান চলতি মার্চে হাজার হাজার আনারস কেনার বুকিং দিয়েছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ নতুন একটি ফল রফতানি জোন খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘বন্ধনহীন মুক্ত আনারস’। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টও কম যান না। তিনি বলেছেন, ‘এবার আমাদের আনারসের স্বাদ অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’ ‘বন্ধনহীন মুক্ত’ আনারসের ঢেউ সুদূর যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে।
আনারস যুদ্ধ, কূটনীতি ও শক্তি প্রদর্শন করে বাইরের দেশগুলোকে চীন বার্তা দিয়েছে। চীন বুঝাতে চায়- দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান নিয়ে কিছু দেশ যা করছে চীন সেগুলো বিনা প্রতিবাদে ছেড়ে দেবে না। চীন মনে করে, ভারতসহ অনেক দেশ রয়েছে যাদের দক্ষিণ চীন সাগরে কোনো কাজ নেই। তবে জাহাজ চলাচলের জন্য চীন সবসময় সহযোগিতা করে আসছে। চীনের বৃহৎ অর্থনীতি ও বাণিজ্যের জন্য শুধু কয়েকটি দেশের ওপর চীন নির্ভর করে বসে থাকতে পারে না; বিশ্ববাজারে উন্মুক্ত বিচরণ করতে চায়।
প্রসঙ্গক্রমে, ফকল্যান্ডের আশেপাশের এলাকা প্রচুর তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মাঝে ফকল্যান্ড নিয়ে ১০ সপ্তাহের যুদ্ধ হয়েছিল। সেটি ৪০ বছর আগের কথা। কিন্তু ব্রিটিশরা তেল স্পর্শ করতে পারেনি। এশিয়া প্যাসিফিকে যদি যুদ্ধ হয়, কেউ সীমা অতিক্রম করবে বলে মনে হয় না। তবে চীন কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলবে না। ফকল্যান্ড পরিস্থিতি এখানে ফিরে আসবে না। চীন কোনো দাবি থেকে ‘পিছপা হবে না’ মর্মে প্রতিভাত হচ্ছে। এখন দিন দিন এশিয়া প্যাসিফিক উষ্ণতর হচ্ছে।
গত মার্চের শুরুতে পেন্টাগন জানায়, তাইওয়ান দখল করতে চায় চীন। যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই চীন এখনো অগ্রসর হয়নি।’ তবে যেকোনো প্রকারে তাইওয়ান দখল করবেই বলে সূত্রের খবর। রয়টারের খবরে প্রকাশ, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং তার ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, চীনারা টার্গেট পূরণ করবেই। ‘তাইওয়ানকে অবশ্যই নিজ ভূখণ্ডের সাথে একীভূত করা হবে।’
চীনের সামরিক শক্তির সাথে লড়তে তাইওয়ান দূরপাল্লার মিসাইল এবং শক্তিশালী সাইবার ডিফেন্স তৈরি করছে। বিগত ছয় মাসে তিনটি ঘটনায় তাইওয়ানের ছয়টি ফাইটার জেট আকাশে নিজেদের জেটের সাথে ধাক্কা লেগে পুড়ে বিনষ্ট হয়েছে। ফাইটার জেটের জন্য এসব বিরল ঘটনা। ধারণা করা হচ্ছে, চীন উচ্চ প্রযুক্তির জ্যামিং সিস্টেম ব্যবহার করে ফাইটার জেটের গতিপথ ও অটোপাইলট নিয়ন্ত্রণ করেছে।
তাইওয়ান সম্প্রতি চীনে আঘাত করতে সক্ষম, মিসাইল তৈরি করছে। সেনাবাহিনীকে আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিচ্ছে। তাইওয়ান খুব দ্রুত সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি করছে। তাইওয়ান ঘোষণা দিয়েছে, যদি চীন তাইওয়ানের দংসু উপদ্বীপে কোনো বিমান পাঠায় তবে কোনো সাবধানবাণী ব্যতিরেকে তা ধ্বংস করে দেয়া হবে। তাইপের এসব সামরিক নির্মাণকে বেইজিং নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করছে। এখন চীনা রনতরী তাইওয়ানের কাছাকাছি অবস্থান করছে। চীনের প্রথম বিমানবাহী কেরিয়ার ও আরো পাঁচটি যুদ্ধজাহাজের ফ্লোটিলা তাইওয়ানের জলসীমার পূর্বে গত ৯ এপ্রিল থেকে সপ্তাহের জন্য মহড়া প্রদান করেছে। গত শনিবার জাহাজগুলো মিয়াকো প্রণালী অতিক্রম করলে জাপানি সেনাবাহিনী তা প্রত্যক্ষ করে। ওকিনাওয়া থেকে মিয়াকো প্রণালী ১৩০ নটিকেল মাইল চওড়া ও জাহাজ চলাচলের জন্য বেশ উপযোগী।
প্রয়োজনে তাইওয়ানের সামরিক স্থাপনায় আঘাত করার জন্য চীন চারপাশে ব্যুহ রচনা সম্পন্ন করেছে। তবে চীন তাইওয়ানে কোনো সামরিক ব্যবস্থা নিতে চায় না। সেখানে চীনপন্থী তাইওয়ানি রয়েছে যারা চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। চীন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাইওয়ান কোনো স্বাধীনতার পদক্ষেপ নিলে সেটি হবে তাইওয়ানের শেষ দিন।
চীনের বহু মিসাইল যার রেঞ্জ এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ কিলোমিটারের বেশি, তাইওয়ানের কৌশলগত এলাকার দিকে তাক করা আছে। যুদ্ধের প্রথম দফায় চীন মিসাইল আক্রমণ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক সেন্টারের মতে, চীনা মিসাইল বিশ্বের সবচেয়ে সঠিকভাবে লক্ষ্য চিহ্নিত করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম। এ জন্য তাইওয়ান ও তার মিত্ররা শক্তিশালী বলয় তৈরি করতে চায়। ফোর্বস জানিয়েছে, এরই মধ্যে তাইপে অ্যান্টি শিপ মিসাইল বানিয়েছে যার সহায়তায় যুদ্ধরত অর্ধেক চীনা জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া যাবে। গত বছরই তাইওয়ান ২.৪ বিলিয়ন খরচ করে ৪০০ বোয়িং হারপুন মিসাইল, ১০০ ট্রাক লঞ্চার এবং ২৫টি মোবাইল রাডার কিনেছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট দেশে স্কাই বো-৩ সুপারসনিক মিসাইল তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন যার মাধ্যমে ভূমি ও সাগরের লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র প্যাট্রিয়ট ও এফ-১৬ বিমান প্রস্তুত রেখেছে তাইওয়ানকে সহায়তার জন্য।
চীনের আনারস যুদ্ধের পর জো বাইডেন নতুন ট্রেড পলিসি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চীনের ব্যবসা-নীতির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা হবে।’ তাইওয়ান মনে করে, যেকোনো সময় যুদ্ধ শুরু হতে পারে। তাইওয়ানের এই সমরসজ্জায় চীন বসে থাকতে পারে না। চীনও অনেক প্রস্তুতি নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা চীনের বিরুদ্ধে তাইওয়ানকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এই ধারায় দক্ষিণ চীন সাগর ও এশিয়া প্যাসিফিক উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রয়টার জানায়, তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ সাংবাদিকদের বলেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর সম্ভাবনা দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ান বলেছে ‘যুদ্ধের দরকার হলে করব এবং শেষ পর্যন্ত লড়ব’। তবে কথা হলো, ভারসাম্যহীন যুদ্ধ তাইপের জন্য মোটেই শুভ হবে না। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা মনে করেন, বিশাল চীনের সাথে যুদ্ধের সব প্রস্তুতি বাদ দিয়ে তাইওয়ান শুধু ‘চিপ’ উৎপাদন করে বিশ্বে সমৃদ্ধ ও সুখী দেশে পরিণত হতে পারে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার