এ এক নতুন সময়

রহমান মৃধা | Apr 13, 2021 04:49 pm
করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত

 

It's been six hours and 9 days

Since I left my old house away...

তা সত্ত্বেও বর্তমান সময় দ্রুততার সঙ্গে পার করছি। একটি নতুন বাসায় মুভ করা যত সহজ ঠিক ততই কঠিন। ছোটবেলায় আমাদের এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে বেদে সম্প্রদায়ের পরিবার দেখা যেত। ছোট ছোট নৌকায় করে তারা এসে এ-বাড়ি সে-বাড়ি ঘুরে নানা রকমের চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের থেকে যেটা আয় রোজগার করত তাই দিয়ে জীবন চালাত। কিছু দিন পর এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় মুভ করত। মনে কী পড়ে সেই গানের কথা 'মোরা এক ঘাটেতে রাঁধি বাড়ি, মোরা আরেক ঘাটে খাই, মোদের সুখের সীমা নাই।'

শত শত বছর ধরে প্রচলিত সমাজ ও সভ্যতার প্রতি এক ধরনের উদাসীনতা রয়েছে বেদে সম্প্রদায়ের। পৃথিবীর সর্বত্রই যাযাবর শ্রেণির মাঝে এই প্রবণতা বিদ্যমান। তারা নিজের কাজটাকে ভালোবাসে, ভালোবাসে মানুষকে আনন্দ দিতে। বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা ছাড়া আর কোনো চাহিদা যেন নেই তাদের। নদীর স্রোতের মতো, বহমান বাতাসের মতো তাদের জীবন। পাশ্চাত্যের জীবন কিছুটা বেদে সম্প্রদায়ের মতো। কাজ যেখানে বসত সেখানে। শুধু রাজা ছাড়া বলতে গেলে সবাই বসত বাড়ি চেঞ্জ করে।

তারপর সুইডিশ জাতির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে সবাই আমার মতো একদিন এখানে এসেছিল। অনেকে আবার এখান থেকে মুভ করে পৃথিবীর নানা দেশে বসবাস করছে। সেই ১৮৫১-১৯১৯ সালে এরাও পেটের দায়ে প্রায় ১০ লাখ হবে আমেরিকা পাড়ি দেয়। সে অনেক দিন আগের কথা। বাংলাদেশের ১৭-১৮ কোটি মানুষের মধ্যে কমপক্ষে এক কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত মুভ করছে এক শহর থেকে অন্য শহর, এক দেশ থেকে অন্য দেশে। এটা একটি বড় জনসংখ্যা সত্ত্বেও অনেকে জানে না এ তথ্যটি। অনেকে মনে করে, মুভ করা একটি ফ্যাশান। কারণ তারা বিষয়টি সম্পর্কে জানে না। সমস্যা যেটা সেটা হলো, বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ যারা যেটা জানে না সেটা নিয়ে মন্তব্য করে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যেটা জানে না সেটা নিয়ে মন্তব্য করতে পছন্দ করে, সত্য মিথ্যার যাচাই-বাছাই ছাড়া। এই কারণে গুজব রটে বেশি সেখানে।

যাই হোক আমি এবার যে বিষয় নিয়ে লিখতে চাই সেটা কিছুটা ভিন্ন।

শত শত বছর পার হলেও বিস্ময়কর কিছু ঘটনা ঘটে না প্রতিদিন, যেমন করোনাভাইরাস মহামারীর মতো ঘটনা প্রতি এক শ' বছরে একবার হয়তো শোনা যাবে। নতুন প্রজন্ম ইতিহাসের পাতা থেকে জানবে ২০২০ সালে সারা বিশ্ব লকডাউনে ছিল। বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা বিপদে যেন না করি আমি ভয়। ভয় না করে কি পারা সম্ভব? না। তারপরও আমরা সংগ্রাম করে চলছি, দৈনন্দিন জীবনে সব কিছু ম্যানেজ করে চলছি। কখনো বিপদগ্রস্ত হচ্ছি কখনো পাশ কেটে এড়িয়ে যাচ্ছি। রিফ্লেশন করার সময় পাচ্ছি না, কী কারণে এমনটি হচ্ছে। নামি-দামি ঘড়ি হাতে আছে ঠিকই, তা সত্ত্বেও সময় নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছি। হাজার হাজার ফেসবুক বন্ধু ফেসবুকে আছে, তা সত্ত্বেও রিয়েল বন্ধুর বড্ড অভাব। প্রায় আট শ' কোটি মানুষ, অথচ মানবতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। সবাই ব্যস্ত অন্যকে উপদেশ দিতে, অথচ নিজে একজন ভণ্ড। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি অথচ নিজেই ভণ্ড ধার্মিক। কেউ খাবার ফেলছে, অন্যদিকে কেউ তা তুলছে। গোটা বিশ্বের খবর রাখি অথচ নিজ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন। ঘটনা ঘটার আগেই তা রটাতে ব্যস্ত। এ এক নতুন জীবন। মনে হচ্ছে পৃথিবী হঠাৎ অন্য রূপ ধারণ করছে। টাকা আছে ব্যবহার নেই। দেহ আছে মন নেই। জায়গা আছে যাবার ব্যবস্থা নেই। বন্ধু আছে দেখা নেই। পা আছে চলন নেই।

ট্যুরিস্টদের আনাগোনা বন্ধ। বয়স্ক লোকদের ঘরের বাইরে দেখা যাচ্ছে না। সব থাকতেও কোথাও কেউ নেই, কিছু নেই। মনে হচ্ছে সবাই বেঁচে মরে আছি, কিন্তু কেন এমনটি হলো?

পৃথিবী সৃষ্টির পর নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন মানুষ জাতি হয়েছে। সব সমস্যার সমাধান মানুষ করতে পারেনি। যেমন খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এ সবগুলোই কিন্তু বেসিক চাহিদা। অন্যদিকে আমরা আমাদের ক্যাপাসিটির বাইরে অনেক কিছুর সমাধান করেছি/ করছি।

মনে হচ্ছে ধাপে ধাপে সবগুলো স্টেপ পার না হয়ে হঠাৎ জাম্প করে কয়েকটি স্টেপ উপরে উঠেছিলাম। তাই হোমওয়ার্ক করা দরকার যে কাজগুলো শেষ না করে এসেছি, তার ওপর। যেমন বেসিক চাহিদার সমাধান করা। আজ যদি বেসিক চাহিদার সমাধান করা হতো তাহলে পৃথিবীর অবস্থা এমনটি হতো না।

সামান্য একটি ভাইরাস সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে ফেলছে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে। মনে হচ্ছে এত যুগ ধরে যা করেছি তাসের ঘরের মতো তার সব ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যেখানে ছিলাম সেখানে কি আবার ফিরে যেতে পারবো?

পারলেও কত দিন, কত মাস বা কত বছর লাগবে কেউ কি বলতে পারবে তা আজ এ মুহূর্তে? যাদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা এবং প্রাচুর্য ছিল তারা কি পারতো না মানুষ জাতির সেই বেসিক চাহিদাগুলোকে পূরণ করতে?

আজ তাদের সামনেই সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তারপরও কি তারা শপথ করছে যদি আবার সুযোগ আসে তাহলে বেসিক চাহিদা পূরণ করব প্রথমে? কী মনে হয়? আমি জানি অনেকে সত্যি মন-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে।

মানুষ সত্যি বড় ভয়ঙ্কর জাতি তা না হলে এমন হবে কেন? এখনও না খেয়ে পৃথিবীর মানুষ মরছে, এখনো হাজারও শিশু জন্মের শুরুতেই ঝরে পড়ছে, এখনও অনেকের রয়েছে প্রচুর সম্পদ, তা সত্ত্বেও তারা দিতে শেখেনি। শিখেছে শুধু দুর্নীতি করতে আর নিতে।

আজ মনে হচ্ছে কী হবে এত সব প্রাচুর্য দিয়ে যদি সত্যিই তার সঠিক ব্যবহার আর কোনদিন না হয়! মনে রাখা দরকার পৃথিবীর সমস্যা এখন বাংলাদেশের সমস্যা। ভেবেছেন কি গার্মেন্টসগুলো বন্ধ হতে যাচ্ছে এবং প্রায় এক কোটি বাংলার মানুষ সারা বিশ্ব জুড়ে কাজ করছে? যদি গ্লোবাল ক্রাইসিসের কারণে দেশে ফিরে আসে, কী নিয়ে দেশে ফিরবে? রেমিট্যান্স নাকি করোনাভাইরাস?

গত বছর করোনা মোকাবেলা করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে ঢাকা শহরে যতটুকু মনে পড়ে দুটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়। এবার জনগণ যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভয়ে, আতঙ্কে, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না, হাসপাতালে পারছে না ভর্তি হতে। দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে একটু চিকিৎসা পেতে ঠিক তখনই সেই হাসপাতাল দুটি হাওয়া হয়ে গেছে! গুগুলেও ওই দুটি হাসপাতালের খোঁজ মিলেছ না। কীভাবে সম্ভব হতে পারে এমন বাটপারি করা? এই দায়িত্বে যারা ছিল তারা কি মানুষ না অন্য কিছু? কী হবে তাদের যাদের কেউ নেই কিছু নেই?

আজ নতুন করে আরেকটি জিনিস চোখে পড়ল। অভিনেত্রী কবরীর ব্যক্তিগত সহকারী বলেছেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আমাদের বলেন, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর আমরা দুপুর ২টার পর ম্যাডামকে সেখানে নিয়ে যাই।’

এতবড় একজন নামকরা খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তির চিকিৎসার সাধারণ ব্যবস্থা আজও হয়নি দেশে। এখানেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দরকার, আমার প্রশ্ন কী হবে বাকি সব মানুষের যাদের জীবনে এমনটি সুব্যবস্থা নেই! এ সত্যি এক নতুন সময়! মুভ করেছি বটে তবে এসব চিন্তা সাথেই রয়েছে, ভাবছি সৃষ্টিকর্তা যদি সব সইতে পারেন তবে কেন আমি পারব না। পারতে আমাদের হবেই। তার পরও মনে হচ্ছে নির্মমতা কত দূর হলে জাতি হতে পারে এত বড় নির্লজ্জ? দিব্যি বাড়িঘরওয়ালা মানুষগুলোকে এরা বেদে সম্প্রদায় বানিয়ে ছাড়ছে। পথে পথে ঘুরেও একটু চিকিৎসার আশ্বাস তারা পাচ্ছে না।

লেখক : সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us