ইসরাইল-জর্দান টানাপোড়েনের নেপথ্যে
ইসরাইল ও জর্দান - ছবি : সংগৃহীত
‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ নিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে জর্দানের বাদশাহর সম্পর্কে টানাপড়েন বেড়ে যায় সাম্প্রতিক বছরে। এই চুক্তিতে যেমন ফিলিস্তিন কর্র্তৃপক্ষকে সমঝোতার বাইরে রাখা হয়; তেমনিভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি জর্দানকেও। ইসলামের পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনার রক্ষণাবেক্ষণকারী ছিলেন জর্দানের বাদশাহর পূর্ব পুরুষরা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এর কর্তৃত্ব নিয়ে নেয় সৌদ পরিবার। এর পর মসজিদুল আকসার তত্ত্বাবধায়কের মর্যাদাটি কেবল ছিল জর্দানের রাজ পরিবারের। কথিত শান্তি চুক্তির পর এর কর্তৃত্বও জর্দানের হাত থেকে নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের হাতে সমর্পণের সমঝোতার বিষয় প্রকাশ হয়ে পড়ে। বাস্তব আচরণেও এর প্রকাশ ঘটে। বাদশাহ আবদুল্লাহর ছেলে ক্রাউন প্রিন্স হুসেইন যখন সম্প্রতি জেরুসালেমে গিয়ে মসজিদে আল আকসায় নামাজ পড়ার কর্মসূচি নেন; তখন তার কতজন দেহরক্ষী অস্ত্র বহন করতে পারবেন সে সম্পর্কে জর্দানের নিরাপত্তা বিভাগের সাথে ইসরাইলের শিন বেটের বিবাদ শুরু হয়। এতে অপমানিত ক্রাউন প্রিন্স মসজিদুল আকসাহ পরিদর্শন বাতিল করে দেন। এর পাল্টা হিসাবে আবুধাবিতে নেতানিয়াহুকে নিতে মোহাম্মদ বিন জায়েদ প্রেরিত একটি ব্যক্তিগত বিমানকে জর্দানের আকাশসীমা অতিক্রম করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করা হয়।
জর্দানে ভ্যাকসিনের ঘাটতি ইসরাইলের সাথে উত্তেজনার আরেকটি উৎস। জর্দান ভাইরাস দ্বারা ধ্বংস হচ্ছে। অথচ ইসরাইল গুয়াতেমালার মতো অনেক দূরের দেশগুলোকে সাহায্য করছে, তবে এর নিকটতম প্রতিবেশী জর্দানকে ভ্যাকসিন দেয়নি। বস্তুত জর্দানের প্রতি ইসরাইলের অবহেলা হলো সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে তার উদীয়মান সম্পর্কেরই এক অংশ।
ইসরাইলের বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপটে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা কতদিন কিভাবে বজায় থাকবে তা স্পষ্ট নয়। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে উভয়েই দীর্ঘ দিন ধরে স্থিতিশীলতা ভোগ করেছে। তাদের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা অনেক প্রতিকূল প্রকল্প বানচাল করতেও সহায়তা করেছে। ইসরাইলের নিরাপত্তায় জর্দানের স্থিতিশীলতা অপরিহার্য বলে মনে করা হয়। তবে ওই সহযোগিতা ইসরাইলের ক্রমবর্ধমানভাবে শক্তিধর হয়ে ওঠা ডানপন্থীরা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের এক ফর্মুলায় একমত হয়ে ১৯৯৪ সালে দুই দেশ একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছেছিল। তখন পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পশ্চিম তীরের ওপর মালিকানা পরিত্যাগ করে জর্দান। এখন ইসরাইলের কট্টরপন্থী দলগুলো যারা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ক্ষমতায় রয়েছে তারা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিরোধিতা করে পুরো পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের অংশ করতে চাইছে। আর ফিলিস্তিনিদের জর্দানে ঠেলে দিয়ে সেই দেশকে ফিলিস্তিন বানানোর প্রস্তাব দিচ্ছে। ট্রাম্পের ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’র পুরোটা প্রকাশ করা হয়নি। এ চুক্তির অপ্রকাশিত উদ্দেশ্য এই রকম বলেই জানা গেছে।
জর্দানকে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা এবং পশ্চিম তীরের পুরোটি ইসরাইলকে তুলে দেয়া কোনোভাবেই জর্দনের বাদশাহ মেনে নেবার কথা নয়। বলা হয় যে, পরিকল্পনাটি গত শতকের আশির দশকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আরিয়েল শ্যারন গোপনে বাজারে ছাড়েন। সেটি নিয়ে সন্তর্পণে এগিয়ে গেছেন নেতানিয়াহু, যা বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়েছে ট্রাম্প এবং তার ইহুদি জামাতা জারাদ কুশনারের সহযোগিতায়। বাদশাহ আবদুল্লাহর এই বিরোধিতার আওয়াজ ক্ষীণ করতে হলে তার দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্র এবং সরকারকে বিপদে ফেলে দুর্বল করতে হবে। অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা তার একটি অংশ হয়ে থাকতে পারে।