করোনার ছোবল : আমরা কি ভুল পথে হাঁটছি?

ডা: মো: ছায়েদুল হক | Apr 13, 2021 03:22 pm
করোনার ছোবল : আমরা কি ভুল পথে হাঁটছি?

করোনার ছোবল : আমরা কি ভুল পথে হাঁটছি? - ছবি : নয়া দিগন্ত

 

করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু হঠাৎ করে ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কি ভুল পথে হাঁটছি? না কি সক্ষমতার ঘাটতি; না কি মনোযোগের ঘাটতি? ক’টি বিষয় নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে। খুব সংক্ষেপে ক’টি বিষয় উপস্থাপনা করা যেতে পারে।

১. স্বাস্থ্যবিধি : সম্ভবত স্বাস্থ্যবিধি না মানার খেসারাত বর্তমানে করোনা সংক্রমণ বৃদ্বির জন্য অনেকাংশে দায়ী। স্বাস্থ্যবিধি না মানার পেছনে কেবলই সাধারণের অজ্ঞানতা, অনীহা নাকি দায়িত্বশীলদের গাছাড়াভাবও অনেকাংশে দায়ী তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় যেমন গাফিলতি আছে তেমনি এর প্রয়োগে মনোযোগের ঘাটতিও দৃশ্যমান।।

২. ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি : বিদ্যমান ভাইরাসটিই মিউটেশনের মাধ্যমে ভিন্ন কোনো স্ট্রেইনের জন্ম দিয়েছে কি না; অথবা বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে ইতোমধ্যে সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেইন, ইউকে স্ট্রেইন, ভারতের ডাবল মিউটেশন স্ট্রেইন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া জরুরি। দেশে আরটিপিসিআর অনেক ল্যাবে সংযোজিত হলেও জেনম এনালাইসিস করার সুযোগ এগুলোতে নেই। ফলে ভাইরাসের গতি প্রকৃতি, মিউটেশন ইত্যাদি বিষয়ে তাৎক্ষণিক ধারণা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে করোনা বিস্তার প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও সমস্যা হচ্ছে। আইইডিসিআর-এর তত্ত্বাবধানে কয়েকটি ল্যাবকে উন্নীত করে সেখানে জেনম এনালাইসিসের সুযোগ সৃষ্টি করার অবকাশ আছে। বর্তমান করোনা মিউটেশনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে এবং ভবিষ্যৎ অনুরূপ মহামারী মোকাবেলায় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. লকডাউন : লকডাউন প্রয়োগ করে অনেক দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হয়েছে। অনেকের ধারণা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সেটি অনুমোদন করবে না। এত ঘনবসতির দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কলকারখানা,অফিস-আদালত, দোকানপাট ইত্যাদি চালু রাখা প্রায় অসম্ভব। এমতাবস্থায় সিমিত আকারে হলেও কিছুটা বিধিনিষেধ আরোপে সুফল লাভের সম্ভাবনা আছে। তবে যেসব সমাগমে মাস্ক খোলার প্রয়োজন যেমন রেস্ট্রোরেন্ট, কমিউনিটি সেন্টারের সব অনুষ্ঠান, হোটেল পরর্যাটন কেন্দ্র এমনকি পারিবারিক সমাবেশের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।

৪. মাস্ক : বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা একমত কেবলমাত্র মাস্ক ব্যবহারেই করোনা থেকে সাধারণের পক্ষে অনেকটাই নিরাপদে থাকা সম্ভব। এটি ব্যয়বহুল কোনো বিষয় নয়। এই একটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলে করোনার প্রাদুর্ভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

৫. হার্ড ইমিউনিটি : বিজ্ঞানীদের অভিমত একটি সমাজে ৭০ শতাংশ বা তার বেশি লোকজন সংক্রমিত হলে বা টিকা নিলে তবে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবে। তবে খুব দ্রুত হার্ড ইমিউনিটির সম্ভাবনা নেই দু’টি কারণে। প্রথমত যে হারে টিকা প্রদান সম্ভব হচ্ছে তাতে অনেক দেশের পক্ষেই ২০২১ এমনকি ২০২২ সালেও টিকা প্রদান প্রত্যাশিত অবস্থায় পৌঁছাবে কিনা সন্দেহ। দ্বিতীয় কারণটি হলো যত সময় পাবে করোনা ভাইরাসটি ততই নতুন নতুন স্ট্রেইনের জন্ম দিতে থাকবে যেগুলো নতুন চেলেঞ্জ ছুরে দিতে পারে।

৬. টিকা : এখানে অনেকের মধ্যে টিকা নিয়ে একটু অস্পষ্টতা আছে। আসলে প্রথম ডোজ টিকায় দেহে তেমন একটা প্রতিরোধ গড়ে উঠে না। দ্বিতীয় ডোজ টিকার নির্দিষ্ট সময় পরে আশা করা যায় এটি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সামর্থ্য হবে। তার পরেও কথা থেকে যায়। কারণ আমরা যে স্ট্রোজেনেকার ভেকসিনটি ব্যবহার করছি সেটি করো কারো বেলায় শতভাগ সংক্রমণ প্রতিরোধ নাও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে টিকা নেয়ার পরও যদি হঠাৎ কেউ সংক্রমিত হয়েই পড়ে সে ক্ষেত্রে আশা করা যায় তীব্রতা অনেক কম হবে। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে।

৭. টিকা পরবর্তী সতর্কতা : ভেকসিন নেয়াটা কেন জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আরো আলোচনা ও জোরদার প্রচারণা দরকার। যারা ভেকসিন গ্রহণ করছেন তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না; প্রত্যাশা অনুযায়ী দেহে এন্টিবডি তৈরি হচ্ছে কি না; প্রয়োজনে এন্টিবডি টেস্টে এর মাধ্যমে একটি সেরোসার্ভেলেন্স করা উচিত।

৭. করোনা চিকিৎসা : করোনার ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বিপদজনক দিক হলো হঠাৎ করে প্রচুর রোগীর একসাথে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ সমস্যাটি মোকাবেলা করতে হলে করোনার প্রাদুর্ভাব সীমিতকরণের প্রচেষ্টার পাশাপাশি হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে করোনা সহসাই নির্মূল হয়ে যাবে এমন ভাবনার অবকাশ নেই।

কৌশল যত বিজ্ঞানভিত্তিক হবে সফলতার সম্ভাবনা তত বেশি।

লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (চক্ষু); চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল; কনসালট্যান্ট-আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ৩৮/৩-৪ রিং রোড, আদাবর, ঢাকা।

ফোন : ০১৯২০৯৬২৫১২

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us