মাড়ির রোগ : অবহেলা করলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ
মাড়ির রোগ - ছবি : সংগৃহীত
গাম হেলথ্ ডে বা মাড়ি স্বাস্থ্য দিবস একটি আন্তর্জাতিক সচেতনেতা দিবস যা প্রতি বছর ১২ মে পালিত হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে সাধারণত জনগণ মাড়ির স্বাস্থ্য এবং রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। মাড়ির সাথে শরীরের অন্যান্য রোগের যোগসূত্র রয়েছে। ইউরোপিয়ান ফেডারেশন অব পেরিওডন্টোলজি গাম হেলথ্ ডে বা মাড়ি স্বাস্থ্য দিবসকে প্রমোট করে থাকে। ২০১৯ সালের মাড়ি স্বাস্থ্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল 'স্বাস্থ্যবান মাড়ি, সুন্দর হাসি'। স্বাস্থ্যবান মাড়ি মুখ ও সার্বিক স্বাস্থ্য ছাড়াও মুখের সৌন্দর্যে সহায়তা করে থাকে। ২০২০ সালের মাড়ি স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল মাড়ি থেকে রক্তপাতকে না বলুন। এর মূল উদ্দেশ্য মাড়ি থেকে রক্তপাত যা মাড়ি রোগের লক্ষন সেই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা। মাড়ি রোগ সাধারণত ব্যথাহীন হয়ে থাকে। ইউরোপিয়ান ফেডারেশন অব পেরিওডন্টেলজির মতে মাড়ি রোগের একমাত্র উল্লেখযোগ্য লক্ষণ রক্তপাত। সব সময় মনে রাখতে হবে কোনো কারণ ছাড়া মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে না।
তাই মাড়ির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। ২০২১ সালের গাম হেলথ্ ডে বা মাড়ি স্বাস্থ্য দিবসের ফোকাস হলো কিছু অ্যানিমেটেড বা প্রানবন্ত ভিডিও যা রসাত্মক পন্থায় এবং সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন মুখের বিভিন্ন সমস্যাকে সবার সামনে উপস্থাপন করা যায়। এর মাধ্যমে জনগণকে উৎসাহী করা তোলা যেন তারা দাঁত ও মুখের ডাক্তারের কাছে যান। ৩০ সেকেন্ডের চারটি ভিডিওর একটি কমন মেসেজ বা বাণী রয়েছে যা হলো মাড়ি রোগ প্রতিরোধযোগ্য। ভিডিও ফোকাস করেছে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর যা মাড়ি রোগের একটি লক্ষণ হতে পারে অথবা মাড়ি রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
উদাহরণ স্বরূপ দুর্গন্ধ, সংবেদনশীল দাঁত, ধুমপান ইত্যাদি। আশা করা যায় ভিডিওগুলি সার্বিকভাবে মাড়ির যত্নে সাধারণ জনগণকে আরও বেশি উৎসাহী করে তুলবে। মাড়ি রোগের সাথে শরীরের অন্যান্য রোগের যোগসূত্র রয়েছে। হৃদরোগ ইতিমধ্যে শীর্ষ ঘাতক ব্যাধি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে যা মাড়ি রোগের সাথে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি জরিপে দেখা গেছে মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার বা টিউমারের সাথে সম্পৃক্ত। মাড়ি রোগের মাধ্যমে যদি ভিরিড্যানস্ ষ্টেপটোকক্কাই ব্যাকটেরিয়া কোনোভাবে রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয় তাহলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় পেরিওডন্টাল রোগে যে সব ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় তার মধ্যে স্ট্রেপটোকক্কাস স্যানগুইস বা স্যানগুইনিস হার্টে সংক্রমিত হয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস দেখা দিতে পারে।
স্ট্রেপটোকক্কাস স্যানগুইস সুস্থ মানুষের মুখে বিদ্যমান বিশেষ করে ডেন্টাল প্ল্যাকে। সম্প্রতি গবেষণায় জানা যায় মাড়ি রোগের সাথে শুধুমাত্র হৃদরোগ সম্পৃক্ত নয় বরং মাড়ি রোগের কারণে ব্রেন স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত পেরিওডন্টাইটিস এর ক্ষেত্রে দাঁত নড়ে যায়। কিন্তু দাঁত বেশী নড়ে গেলেই সেটি পেরিওডন্টাইটিসের কারণে হয়েছে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। আর এ ক্ষেত্রে পেরিওডন্টাইটিস ভেবে দাঁত তোলাও ঠিক নয়। রোগীদের দাঁত নড়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে এসে দাঁত ফেলে দেয়ার অনুরোধ করা মোটেও ঠিক নয়। কারণ পেরিওডন্টাইটিস ছাড়াও মাড়ির ক্যান্সারের কারণেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া রক্তনালীর টিউমার হেমানজিওমা হলেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে ভালভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে দাঁত ফেলে দিলে বড় ধরণের সমস্যা যেমন অঝোর ধারায় রক্তপাত হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মোট কথা টিউমার, সিস্ট এবং অন্য কারণেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। মাড়ি রোগ বা মাড়ির পাশে আলসার বা ঘাঁ দেখা দিলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। মাড়িতে অনেক সময় ক্ষতযুক্ত স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার দেখা যায়। ফলে মাড়ির সমস্যায় সচেতন হতে হবে। থাইরয়েড গ্রন্থির অচলাবস্থার কারণেও পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে। আবার পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্য খারাপ হলে সংক্রমণের মাধ্যমে আপনার হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো লিভারের সাথে মাড়িতে সবুজ দাগ দেখা যেতে পারে। আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং আপনার মাড়ির রোগ থাকে তাহলে আপনার গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয় জন্ম নেওয়া শিশু আকার আকৃতিতে ছোট হতে পারে।
ফিনাইটয়েন জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে জিনজাইভাল হাইপারপ্লাসিয়া হতে পারে। মাঝে মাঝে সাইক্লোসপরিন অথবা নিফিডিপিন এবং কিছু ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার জাতীয় উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার ওষুধও জিনজাইভাল হাইফারপ্লাসিয়া বা মাড়ি বৃদ্ধি এবং ফুলে যাওয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই মাড়িতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে জানতে হবে রোগী কোনো ওষুধ সেবন করছেন কিনা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র প্রদান করতে হবে। তাই মাড়ি রোগ কখনই অবহেলা করবেন না। মাড়ি স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজে সচেতন হউন এবং অন্যকে সচেতন করে তুলুন।
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ