মীরজাফরের বংশধরের দাবি
মীরজাফরের বংশধরের দাবি - ছবি সংগৃহীত
তারা ক্লান্ত, বিরক্ত। কেন বারবার একই কথা? কেন একটা পরিবারকে যুগ যুগ ধরে এইভাবে টেনে নামানোর চেষ্টা? ‘গাদ্দার’ সাব্যস্ত করে সকলের সামনে ছোট করার চেষ্টা। তারা সৈয়দ মীর জাফর আলি খান বা মীরজাফরের বংশধর। ইতিহাসের পাতা যাকে ‘বেইমান’ আখ্যা দিয়ে রেখে দিয়েছে কালের গর্ভে।
‘ইংরেজরা তাদের মতো করে ইতিহাস লিখিয়েছিল। যেখানে তারা মীর জাফরকে বেইমান দেখিয়েছিল। কারণ তিনি ইংরেজদের অঙ্গুলি হেলনে চলতে চাননি। ওই ইতিহাস পড়েই সবার মধ্যে ধারণা হয়েছে মীরজাফর বেইমান বা সিরাজদৌল্লাকে হত্যার জন্য দায়ী। বিষয়টা কিন্তু এরকম নয়। মীর জাফর যদি মনে করতেন, তবে সিরাজদৌল্লাকে অনেক আগেই মেরে দিতে পারতেন।’ দাবি মীরজাফরের ১৮তম বংশধর সৈয়দ মোহম্মদ ফাহিম মীর্জার।
১৭৫৭ সাল। ততদিনে বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত হয়েছে। প লাশির প্রান্তরে মুখোমুখি ইংরেজ ও বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার বাহিনী। সিরাজের সেনাপতি মীরমদন, মোহনলাল প্রাণপণ লড়াই চালালেও নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। শেষ পর্যন্ত সিরাজের পরাজয় ও মৃত্যু ঘটে।
পরে সিরাজ যেমন অসহায় ‘বীর’ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী জায়গা করে নেন, তেমনি মীরজাফর জায়গা পান বেইমান হিসেবে। এখনো মুর্শিদাবাদে কেউ কারুর সঙ্গে বেইমানি করলে বলা হয় ‘মীর জাফরি’ করা।
পিছিয়ে নেই রাজনৈতিক নেতারাও। দলত্যাগীদের উদ্দেশ্যে তাদের সম্বোধন ‘মীর জাফর’। প্রচারে আসা সেই প্রার্থীর প্রতি বিক্ষোভ দেখাতেও কর্মীরা প্ল্যাকার্ড বা পোস্টারে টেনে আনছেন সিরাজের এই প্রধান সেনাপতির নাম।
এটাতেই আপত্তি ফাহিমের। তার কথায়, শুধু একা মীর জাফরের কথা কেন বারবার বলা হচ্ছে? যদি ধরে নেওয়া হয় যে সত্যিই মীরজাফর ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তবে তো এটা তিনি একা করেননি। ইতিহাসের বর্ণনায় এই ষড়যন্ত্রে তো জগৎ শেঠ বা আরো অনেকের নাম আছে। তাদের নাম তো কেউ নেয় না।
মীর জাফরের এই বংশধর জানালেন, তাদের বংশ থেকেও বলা হয়েছে সেই সময় মীরজাফর যেটা করেছিলেন সেটা ঠিকই করা হয়েছে। ইতিহাস তার সঙ্গে অন্যায় করেছে।
ইংরেজদের অধীনে নবাব হয়েছিলেন মীর জাফর। সেইসময় এই বংশের হাতিশালে হাতি বা ঘোড়াশালে ঘোড়া থাকলেও আজ সেসব অতীত। তৎকালীন সম্পত্তি এখন সরকারি অধিগৃহীত। মুর্শিদাবাদের লালবাগে দক্ষিণ দরজার কাছে এখন এই পরিবারটি যেখানে থাকে তার নাম ‘ব্যান্ড মাস্টার্স কোয়ার্টার’। স্কুলে শিক্ষকতা করেন ফাহিম। তার বাবা সৈয়দ মোহম্মদ রাজা আলি মীর্জাকে সবাই ডাকেন ‘ছোটে নবাব’ বলে। নবাবি নিদর্শন বলতে একটা দুটি ওই সময়ের তরবারি।
কিন্তু স্থানীয়রা? তারাও কি আপনাদের অন্য চোখে দেখে? ‘একদম নয়। কারণ এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেরই এই বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ আছে। আসল ঘটনা কী হয়েছিল তা কেউ জানে না। হতেও তো পারে তখনকার পরিবেশের জন্য মীরজাফর বাধ্য হয়েছিলেন।’
বেইমানির জন্য মুর্শিদাবাদে মীর জাফরের বাড়িটাকে পর্যটকরা জানেন ‘নিমক হারাম দেউরি’ নামে। ওই বাড়ি দিয়ে হু হু করে বয়ে যায় ভাগীরথী থেকে উঠে আসা অজানা কোনো ইতিহাসের হাওয়া।
সূত্র : আজকাল