জাতিসঙ্ঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী আমিনা
আমিনা - ছবি সংগৃহীত
বিশ্বের অন্যতম সেরা নেত্রী তিনি। নাইজেরিয়ায় রাজনৈতিক জীবন শুরুর পর আজ তিনি হয়ে উঠেছেন জাতিসঙ্ঘের সবেচেয়ে ক্ষমতাধর নারী। তিনি সংগঠনটির উপমহাসচিব, যে পদটি জাতিসঙ্ঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী। আমিনা মুহাম্মদ বিগত ৩০ বছর ধরে বিশ্বের উন্নতির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোকে দেখেছেন এবং নারীদের জন্য লড়াই করেছেন। জাতিসঙ্ঘে যোগ দেয়ার আগে আমিনা মুহাম্মদ তিনজন নাইজেরীয় প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করেছেন। প্রেসিডেন্টের উপদষ্টা ও জাতীয় পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জাতিসঙ্ঘের উপ-মহাসচিব হিসেবে সংস্থাটির টেকসই উন্নয়নের পরিকল্পনাকেই সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়েছেন আমিনা। তবে মহিলা অধিকারের পক্ষে তার কণ্ঠ থেকেছে মজবুত। বিশেষ করে করোনা মহামারী কালে বাজার দখলের লড়াইয়ে মহিলারা যখন পিছিয়ে পড়েছিলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা যখন হুমকির মুখে পড়ে ছিল তখনই তিনি মহিলাদের ন্যায়প্রাপ্তির কথা ভাবছিলেন। করোনা পরবর্তী সময়ে মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরিতে তার বিভিন্ন প্রকল্প প্রশংসা পেয়েছে বহু জায়গায়।
জন্ম ও শিক্ষা
১৯৬১ সালে ব্রিটেনের লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেন আমিনা। তার পিতা ছিলেন একজন নাইজেরীয় চিকিৎসক এবং মা ছিলেন ব্রিটিশ নার্স। পাঁচ বোনের সবচেয়ে বড় ছিলেন আমিনা। পরে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় নাইজেরিয়ার কাদুনা ও মাইদুগুরিতে। এরপর তিনি ব্রিটেনের হেনলে ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে পুনরায় নাইজেরিয়ায় ফিরে যান।
বিচিত্র কর্মজীবন
১৯৮১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত নাইজেরিয়ার আর্কিটেকচার ফার্ম আর্চকনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে আমিনা নিজের হাতে আফ্রিপ্রোজেক্টস কনসোর্টিয়াম নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বনে যান। ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের মিলেনিয়াম প্রোজেক্টের জেন্ডার অ্যান্ড এডুকেশন বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। পরে নাইজেরীয় প্রেসিডেন্টের শীর্ষ ও বিশেষ সহযোগীর দায়িত্ব বর্তায় তার ওপর। দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ, বাজেট সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ এবং দেশের বেসরকারি খাতে সংস্কার ও টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে অবদান রাখতে থাকেন তিনি। কিছু সময় পর মুহাম্মদ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি সলিউশন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হয়ে যান এবং একইসঙ্গে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভেলপমেন্ট প্র্যাক্টিস প্রোগ্রাম বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। সেসময়ই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা পরিষদ ও প্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। জাতিসঙ্ঘের নজরে আসার পর তিনি সংস্থাটির শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক শাখার অ্যাডভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের ডেভালপমেন্ট প্ল্যানিংয়ের বিশেষ উপদেষ্টাও থেকেছেন আমিনা মুহাম্মদ।
নাইজেরিয়ার পরিবেশমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘের উপ-মহাসচিব
প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারির ক্যাবিনেটে পরিবেশমন্ত্রী ছিলেন আমিনা মুহাম্মদ। ওই সময় আফ্রিান ইউনিয়নের রিফর্ম স্টিয়ারিং কমিটিতে নাইজেরিয়ার নিযুক্ত প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। নাইজেরিয়ার মন্ত্রিসভা থেকে তিনি ইস্তফা দেন ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ২০১৭ সালে তিনি পরিবেশমন্ত্রী থাকাকালীন একটি চীনা কেলেঙ্কারিতে তার নাম জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। অভিযোগ তোলা হয়, নাইজেরীয় রোজউডের অবৈধ চোরাচালান করেন তিনি। তবে নাইজেরিয়ার সরকার সেই অভিযোগ নাকচ করে দেয়। ওই বছরই জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আমিনা মুহাম্মদকে তার ডেপুটি সেক্রেটারিজেনারেল নিয়োগ করার ইচ্ছার কথা জানান।জাতিসঙ্ঘে নিয়োগ পেয়ে গোটা বিশ্বের উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক পরিকল্পনা করার পাশাপাশি নারী সমাজের জন্য বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন নাইজেরিয়ার এই নেতা।
সূত্র : পুবের কলম