রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা : নিখুঁতভাবে কি খেলতে পারবেন এরদোগান?
রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা : নিখুঁতভাবে কি খেলতে পারবেন এরদোগান? - ছবি সংগৃহীত
ইউক্রেনে রাশিয়া যেকোনো অজুহাতে হামলা চালানোর পথ খুঁজছে। ঠিকঠাক মতো হামলা হলে ইউক্রেন দখল হয়ে যাবে (পুরোটা না হলেও আংশিক)। এই পরিস্থিতিতে জো বাইডেনের আমেরিকা দাঁড়াচ্ছে ইউক্রেনের পাশে। সময় মতো দাঁড়াতে পারলে যুদ্ধটা হয়তো হচ্ছে না।
তবে আমেরিকার নৌ বাহিনীকে তুর্কি প্রণালী ব্যবহার করে ব্লাক সি-এ ঢুকতে হবে। সেটা যেন না হয় সেজন্য পুতিন আগেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগানকে ফোন করেছিলেন। ওদিকে মার্কিন নৌ, প্রণালী ব্যবহারের নিয়ম মেনে ১৪ দিন আগেই অনুমতি নিয়ে রেখেছে। তুরস্কের এই পরিস্থিতিতে অ্যান্ট্রি নেয়া বাধ্যতামূলক। মার্কিন রণতরী বা ন্যাটোর রণতরী যেটাই হোক ব্লাক সিতে পৌঁছতে হলে দার্দানেলিস প্রণালী, মারমারা সাগর, বসফোরাস প্রণালী পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে হবে। এগুলো সবই তুরস্কের ভেতর, বাইরে জড়িত। এশিয়া, ইউরোপ বিভক্তকারী বসফোরাস তুরস্কের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে। তারমানে তুরস্কের ভূখণ্ড দিয়ে সামরিক ট্রানজিট দিতে হবে আমেরিকাকে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কিকে যুদ্ধকালীন সহযোগিতার কথা বলেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। ওই সহযোগিতার ধরন কেমন হবে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এখন যা বলছেন আর বলবেন তার প্রায় সবটাই ন্যাটো আর মার্কিনিদের জন্য সবুজসঙ্কেত। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এই মুহূর্তে রুশ বিরোধিতার জায়গা থেকে ভুলে যেতে হবে আঙ্কারার দগদগে চেয়ার অপমান কাণ্ড। একইভাবে রাশিয়ার অপমানের বিরুদ্ধে (বছর দুয়েক আগে পুতিন, এরদোগানকে মস্কোর প্রেসিডেন্টের অফিসের বাইরে দাঁড় করে রেখেছিলো দলবলসহ, তারপর অবশ্য সাক্ষাৎ দিয়েছেন। ২০১৭ সালে এরদোগানের চেয়ার ফেলে দিয়োছিলেন পুতিন।) পরোক্ষ প্রতিশোধের সুযোগ হাতছাড়া করার বান্দা এরদোগান না।
ইউরোপের প্রভাবশালী দেশ জার্মানি রুশ ট্রুপকে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়েছে। এখানেও পরোক্ষভাবে জার্মানি তার অবস্থান ব্যক্ত করেছে। এরপরও রাশিয়া চাইলে ইউক্রেনে স্বল্পমাত্রার হামলা চালিয়ে নিজের সামর্থ্য জানান দিতেও পারে। ২০১৪ সালে বিশ্ব অলিম্পিকে যখন সব নেতা ব্যস্ত তখন সাউথ ওসেটিয়া দখলে নিয়েছিল রাশিয়া। রাশিয়া আসলে কী চায় তা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তারা যুদ্ধ চায় কি না, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।
এখানে এরদোগানের ভূমিকা কী, কেমন খেলোয়াড়ি দেখাবেন সেটা লক্ষ্যণীয়। অবশ্যই এরদোগান দুই পরাশক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব চাইবেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এরদোগানের এফ-১৬ যেমন দরকার, তেমনি এস-৪০০ও দরকার।
এই সংঘাতময় পরিস্থিতি তুর্কির সার্বভৌমত্বকেও কিন্তু একটু হুমকিতে রাখবে। মার্কিন মুল্লুক ও রুশ নৌবাহিনী উভয়কেই তুর্কি প্রণালী ব্যবহার করেই ওয়ার জোনে পৌঁছাতে হয় পরস্পরের বিরুদ্ধে । রাশিয়াকেও বসফরাস ব্যবহার করেই মূল সাগরে ঢুকতে হয়। তাই তুরস্কের সাথে রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক থাকবেই। এই দুই দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ডিও ব্যালেন্স রাখাই এরদোগানের বড় চ্যালেঞ্জ হবে। অতএব খেলাটা হতে হবে নিখুঁত।
সুইজারল্যান্ডিও ব্যালেন্স বলতে বুঝাতে চেয়েছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সুইজারল্যান্ডের সমীকরণের বিষয়টি। ওই সময় দুনিয়ার যাবতীয় লুটপাটের টাকার জিম্মাদারি নিয়েছিল দেশটি। এজন্য অক্ষশক্তি, মিত্রশক্তি কারো সাথে জড়ায়নি, কেউ হামলাও করেনি। উভয়ের সম্পদই সেখানে নিরাপদে গচ্ছিত ছিল। যুদ্ধের সাথে সাথে সব শেষ হলে তো হবে না। তাই ওখানে উভয়েই জমা রেখেছে নিশ্চিন্তে।
এরদোগানের তুরস্কের দিকে তাকালে তাই মনে হয়। ইসরাইলের অভ্যন্তরে আগুন নেভাতে তুর্কি আগে পৌঁছায়, আবার ফিলিস্তিনিকেও ত্রাণ দিতে দৌড়ায়। তবে একটা আশঙ্কার জায়গা থেকে যায়। সেটা হলো দুই বিশ্বযুদ্ধেই তুরস্ক জড়িয়ে গিয়েছিলো। ফলাফল বিশ্ব দেখেছে। ওই যুদ্ধে উসমানি সুলতান নিরপেক্ষ থাকতে চাইলেও আর্মি চিফদের সিদ্ধান্তে যুদ্ধে জড়াতে হয়েছিল। এরদোগান আমলে একাধিক ক্যু চেষ্টা এই আভাস দেয় যে খেলোয়াড় এরদোগানও আর্মি ট্রাপে পড়ে ভুল করে ফেলতেও পারেন।
তবে তুরস্ক যে লক্ষ্যে পৌঁছতে চায়; সেখানে যেতে কোনো পরাশক্তির সাথে সরাসরি যুদ্ধে সে জড়াবে না বলেই অনুমান হয়। তবে টেনশন জিইয়ে থাকলেই কেবল তুরস্কের উভয় দিকের লাভ। সেটাই কৌশলী হাতে করতে চাইবে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ হওয়ার চেয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব দীর্ঘায়িত হলে তুরস্কের ড্রোন, অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।