১০০ বিলিয়নিয়ারের শহর বেইজিং
১০০ বিলিয়নিয়ারের শহর বেইজিং - ছবি : সংগৃহীত
কখনো কি জানতে ইচ্ছে হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ারের বসবাস কোন শহরে? ভাবছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিগ অ্যাপল? আপনার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে বেইজিং এখন ২০২১ সালে ফোর্বস ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনে বিলিয়নিয়ারের নগরীর তালিকায় প্রথম স্থান দখল করেছে।
কিন্তু কি এমন হলো যার কারণে বেইজিং রাতারাতি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ারের বসবাসকারী শহর হয়ে গেল? চলুন জেনে নেয়া যাক।
এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে বেইজিংয়ে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার বসবাস করছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাজধানী এবং দেশটির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এই বেইজিং।
গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও সারা বিশ্বে ৪৯৩ জন নতুন বিলিয়নিয়ার যোগ হয়েছে। প্রায় প্রতি ১৭ ঘণ্টায় একজন করে নতুন বিলিয়নিয়ার দেখেছে পৃথিবী।
২০২১ সালের প্রথম চার মাসে বিশ্বব্যাপী আরো ৪২১ জন নতুন বিলিয়নিয়ার যুক্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে ২,৭৫৫ জন বিলিয়নিয়ার বসবাস করছেন। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩. ১ ট্রিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় ১৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি। এই বিলিয়নিয়ারের মোট সম্পত্তির বাংলাদেশের ২০২০ অর্থ বছরের মোট বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি।
গ্রহের মাত্র ১০টি শহরে বসবাসকারী বিলিয়নিয়ারের মধ্যে ১০ ভাগ শত কোটিপতির বসবাসই রয়েছে কেবল চারটি চীনা মহানগরীতে। বিখ্যাত মার্কিন ব্যবসায় সাময়িকী ফোর্বস তাদের ৩৫তম সংখ্যায় বিলিয়নেয়ারদের এ তালিকা প্রকাশ করে।
গত সাত বছরে প্রথমবারের মতো, যুক্তরাষ্ট্রের বিগ অ্যাপল তার প্রথম র্যাঙ্কিং-এর মুকুট হারাতে বসল বেইজিংয়ের কাছে। কারণ বেইজিংয়ে করোনা মহামারীর মধ্যেও গত বছর ৩৩ জন নতুন বিলিয়নিয়ার যুক্ত হয়েছে। বিগ অ্যাপেলের ৯৯ জন ধনকুবরকে পিছনে ফেলে ১০০ জন শত কোটিপতির বাস চীনের বেইজিং শহরে।
যদিও বিগ অ্যাপলের চেয়ে বেশি সংখ্যক বিলিয়নিয়ার আছে এখন বেইজিংয়ে, তবুও নিউ ইয়র্কের বিলিয়নিয়ারদের, বেইজিংয়ের বিলিয়নিয়ারদের তুলনায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি রয়ে গেছে।
২০১৫ সালের প্রথম দিকে চীনে প্রতি সপ্তাহে একজন নতুন ধনকুবের উত্থিত হতে দেখা গেছে বলে জানা যায়।
চীনা অর্থনৈতিক নীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উৎসাহ দেয়ার কারণে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বছরজুড়ে ব্যাপক উৎপাদনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।
চীনের নতুন কোটিপতিদের অর্ধেকই ই-সিগারেট থেকে অর্থোপার্জনকারী। বেশির ভাগ বিলিয়নিয়ারদের ভাগ্য বদল হয়েছে প্রযুক্তি খাতকে কেন্দ্র করে।
বেইজিংয়ের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন ঝাং ইমিং। তিনি ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা এবং এর অংশীদারী প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের প্রধান নির্বাহী। গত বছর তার সম্পদের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে তার মোট সম্পদ ৩৫ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ সাল কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির মন্দার একটি বছর ছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ৪.৪ শতাংশ বিশ্বের অর্থনৈতিক বিকাশকে সংকোচন করেছে।
তবে চীন মহামারীর কেন্দ্রবিন্দু হওয়া সত্ত্বেও তুলনামূলকভাবে ২০২১ সালে পুনরুদ্ধার এবং একমাত্র প্রধান অর্থনীতি ছিল।
বেইজিংয়ের স্থিতিশীল এবং সময়-সংবেদনশীল নীতি প্রতিক্রিয়া, মহামারী নিয়ন্ত্রণ কৌশল এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলির পুনঃনির্মাণ নিশ্চিত করেছে যে এটিই একমাত্র জি -২০ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির দেশ। যেটি ইতিমধ্যে ২০২০ সালে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল।
এই মহামারির মধ্যেও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আগের চেয়ে আরো বেশি আয় করেছে। লোকজন ঘরে বসে অনলাইনেই বেশিরভাগ পণ্য কিনেছে।
এদিকে, টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। তার মোট সম্পদ গত বছর ৬৪ বিলিয়ন ডলার ছিল। এক বছরে সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭ বিলিয়ন ডলারে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়