করোনা প্রতিরোধে ৪ পরামর্শ
করোনা প্রতিরোধে ৪ পরামর্শ - ছবি সংগৃহীত
করোনা ঝড়ের বেগে বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণের রেখাচিত্র প্রতিদিন ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতা এবং সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে, এমন উৎকণ্ঠা জনস্বাস্থ্যবিদদের। ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৬টি উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ সর্বপ্রথম বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেয় এবং ১৮ মার্চ মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়। তখন নতুন ভাইরাস, তাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, পূর্বপ্রস্তুতির অভাব ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এক বছর সময় পেয়েও দ্বিতীয় ঢেউ রোধে কার্যকর কোনো ব্যাপক উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো নয়।
সরকারের উদ্যোগ ও প্রয়াস যে একেবারে নেই এ কথা সত্য নয়। তবে তা কোনোক্রমে পর্যাপ্ত বা আশাব্যঞ্জকও নয়। প্রধানমন্ত্রী সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন, আইসিইউ বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সব হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সে নির্দেশ কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? ৭৯টি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২৯টিতে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে হতাশার সুর। তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনাগুলো না মানলে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে।’ জনগণকে মানতে বাধ্য করতে হবে এবং বাধ্য করার দায়িত্ব সরকারের। দ্বিতীয় ডোজের টিকা এখনো বিদেশ থেকে এসে পৌঁছায়নি। রাজধানী ও জেলা শহরের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। উপজেলা সদরের সব সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই, নেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা। সরকার ১৮ দফা যে নির্দেশনা দেয়, তা বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কোনো সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না মর্মে স্বাস্থ্যবিদদের অভিমত।
ঢাকায় আইসিডিডিআরবির গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে শনাক্ত করা করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্ট। এবারের ভাইরাস খুব দ্রুতই রোগীদের অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে। এখন রোগীর ফুসফুস সংক্রমণের পাশাপাশি রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে। রক্তের অণুচক্রিকার সাথে হিমোগ্লোবিনও কমে যাচ্ছে। দ্রুত রোগীকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হয়। কোভিডের দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্ট চিকিৎসকদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। চীনসহ পৃথিবীর বহু দেশে স্টেডিয়াম, কমিউনিটি সেন্টার ও ক্লাবগুলোকে করোনারোগীদের জন্য অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়। আমাদের দেশের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে যে সক্ষমতা ও ধারণক্ষমতা রয়েছে, কমপক্ষে তা দ্বিগুণ না করলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত আইসিইউ ফ্যাসিলিটিজ না থাকায় রোগী নিয়ে স্বজনরা শহরমুখী হচ্ছেন। এতে শহরের হাসপাতালে চাপ বাড়ছে। চট্টগ্রামে ১৪টি উপজেলা হাসপাতালের মধ্যে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে মাত্র ছয়টিতে। বাকি আটটি উপজেলা হাসপাতাল খালি। তবে শঙ্কার ভেতরে আশার খবর আছে। রাজধানীর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট হাসপাতালের নতুন ২০০টি করোনা আইসিইউ বেড ও এক হাজারটি আইসোলেশন বেডের প্রস্তুতকরণ ও আনুষঙ্গিক কাজের দৃশ্যত বেশ অগ্রগতি হয়েছে। দু’সপ্তাহের মধ্যে কর্তৃপক্ষ তা উদ্বোধনের আশা করছে। এটি বেশ কার্যকর উদ্যোগ। এদিকে, সরকারের গুদামে চাল ও গমের মজুদও সন্তোষজনক নয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এপ্রিলে গুদামে চাল ও গমের মজুদের পরিমাণ মাত্র চার লাখ ৮৫ হাজার টন। গত বছর এ সময়ে ছিল ১৫ লাখ ৮৬ হাজার টন।
গণপরিবহন ও পর্যটনকেন্দ্র থেকে করোনা ছড়িয়েছে বেশি। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার ৫ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত যে লকডাউন ঘোষণা করেছে তার সফলতা ও কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। লকডাউনের বিকল্প নেই এবং লকডাউনের সিদ্ধান্তটি সঠিক। কিন্তু এতে বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষণীয়- ১. গার্মেন্টস কারখানা ও বইমেলা খোলা রাখা; ২. ঈদের ছুটির মতো গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গ্রাম অভিমুখে মানুষের ছুটে চলা। এতে করোনা গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা; ৩. প্রথম দিকে গণপরিবহন না থাকায় হাসপাতাল, সরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের চরম ভোগান্তি; ৪. পরবর্তীতে বিভাগীয় ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও রাইড শেয়ারিংয়ে চলাচলকারী স্কুটারচালকদের জরিমানা করা হচ্ছে; ৫. প্রাইভেটকার চলাচলে কোনো বাধা না থাকলেও ভ্যানচালক ও রিকশাচালকের ওপর পুলিশের হামলে পড়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে; ৬. দিনমজুর, ফুটপাথের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হেঁটে হেঁটে যারা চা বা পণ্য বিক্রি করে, তাদের স্বার্থ বিবেচনায় আনা হয়নি। তারাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন; ৭. লকডাউন ঘোষণার সাথে সাথে শপিংমল ও মার্কেটের মালিক-শ্রমিক তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। রাজধানীতে পুলিশের সাথে ব্যবসায়ীদের ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের বক্তব্য হলো- ইন্টারেস্ট গ্রুপের স্বার্থ রক্ষায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও বইমেলা খোলা রাখা গেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখা যাবে না কেন? গত বছরও তারা ব্যবসা করতে পারেননি; ৮. আন্দোলনের মুখে সরকার ৯ এপ্রিল থেকে লকডাউন চলাকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা রাখার নির্দেশ জারি করে; ৯. পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রে লাল, হলুদ ও সবুজ জোন ভাগ করে লকডাউন দেয়া হয়। একেক জোনের একেক নিয়ম। রেড জোনে ফার্মেসি, নিত্যপণ্যসামগ্রীর দোকান ও কারখানা বন্ধ থাকে। লকডাউনভুক্ত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে। মালয়েশিয়া, আরবদেশ ও ইউরোপে এর প্রচলন রয়েছে। ইতালি, ফ্রান্সসহ বহু দেশে দিনের বেলা লকডাউন; রাতে ১০টা থেকে ভোর ৬টা কারফিউ বলবৎ থাকে। আমাদের দেশে গত বছর মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশের কাছে ফোন করলে তালিকা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এতে কিছুটা বিড়ম্বনা থাকলেও প্রয়াসটি ছিল মহৎ ও প্রশংসনীয়। এতে পুলিশের সাথে জনগণের যে দূরত্ব সেটা কমে আসত এবং পুলিশকে মানুষ বন্ধু ভাবত।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ কার্যকরভাবে রোধ করা না গেলে শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, রফতানি, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষায় বড় ধরনের আঘাত হানবে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ গেল বছরের বিপর্যস্ত অর্থনীতির ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। এ সময়ে শুল্ককর আদায়ের লক্ষ্য ছিল এক লাখ ৯৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। লকডাউন প্রলম্বিত হলে রাজস্ব আদায়, কর্মসংস্থান, অর্থ উপার্জনের ক্ষমতা ও ব্যয়ের সক্ষমতা নতুন করে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। পয়লা বৈশাখ, রমজান এবং ঈদকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে যে লেনদেন হতো তাতে যেন বিপর্যয় নেমে না আসে তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে দু’জন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হলো- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্বাভাবিকভাবেই এতে মানুষের আয় কমবে। এতে কমবে ব্যয় করার সক্ষমতা। ফলে চাহিদা কমে যাবে। এতে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করবে কতদিন লকডাউন দীর্ঘ হয় তার ওপর। আর লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা বলা কঠিন। এ অবস্থায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা ও বণ্টন ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাক্কায় নড়বড়ে হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। ব্যবসায়-বাণিজ্য ছিল গতিহীন। নতুন করে ১০ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স ছাড়া সবগুলো নিম্নমুখী।’ মির্জ্জা বলেন, ‘করোনায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে। এতে নতুন করে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ সামনে চলে এসেছে। প্রথমত, গত ১০ বছরে দেশে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক একটি ধারা ছিল, বর্তমানে সেই ধারাটি অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে। ফলে ২০২০ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অনেকটা কমেছে। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ আমাদের জন্য শঙ্কার কারণ।’ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো, ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশে করোনার অভিঘাত চলমান। এর ফলে কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সুরক্ষা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে স্বাস্থ্যে বড় ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এতে অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় সরকার সাতদিনের লকডাউন দিয়েছে। এটি সঠিক। কারণ এর বাইরে কিছু করার ছিল না। তবে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুতি জরুরি। বিশেষ করে লকডাউনের কারণে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ এবং দিনমজুরসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক যেসব শ্রমিক রয়েছে, তাদের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। আর মধ্যমেয়াদে কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আবারো উদ্দীপনামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করা উচিত। এতে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা থাকতে হবে’ (যুগান্তর, ৪ এপ্রিল ২০২১)।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতি ইউনিয়নে দরিদ্র, কর্মহীন ও দুস্থ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য ১২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। জনপ্রতি ৫০০ টাকা হারে প্রতি ইউনিয়নে আড়াই লাখ টাকা দেয়া হবে। করোনার বিধিনিষেধের মেয়াদ না বাড়ালে বরাদ্দও বাড়ানো হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া হতদরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চাল, ডাল, চিনিসহ সাত ধরনের শুকনো খাবার কিনে দেয়ার জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল। সরকারকে তার সব শক্তি নিয়ে এবং বেসরকারি উদ্যোক্তা, শিল্পপতি ও স্বেচ্ছাসেবী চ্যারিটি অ্যাজেন্সিগুলোর সাথে সমন্ব^য় করে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ এবং কিছুটা সামর্থ্য আছে ‘দিনে এনে দিনে খায়’ এমন এক কোটি ৮৮ লাখ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে ন্যায্যমূল্যে ডিম ও গোশত বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। যুবলীগের টেলিমেডিসিন সেবা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, সাবানসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ ও প্রয়াস প্রশংসনীয়। এগুলোকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে বেশ সুফল পাওয়া যাবে। গণসচেতনতা সৃষ্টি ও দুস্থদের সহায়তার জন্য অপরাপর রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো মানবিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে এলে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
এককথায়, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। যদি এরপরও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তা হলে কঠিন লকডাউন দিতে হবে; প্রয়োজনে কারফিউসহ। গণপরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটানোর নির্দেশ থাকলেও কেউ মানছে না। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল পরিদর্শক টিমের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। দূরপাল্লার বাস, রেল ও বিমান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত। এতে আন্তঃজেলা রোগ বিস্তারের পথ অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মুজাহেরুল হক সরকারকে চারটি পরামর্শ দিয়েছেন- ১. করোনা রোধে সরকারি কার্যক্রমে জনগণকে সম্পৃক্ত করা; ২. নিজেদের অবস্থা, অবস্থান ও সামর্থ্য বিবেচনায় সঠিক কৌশল নির্ধারণ করে পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হওয়া; ৩. হার্ড ইমিউনিটি নিশ্চিত করা ও ৪. চীনা বিশেষজ্ঞরা যে সুপারিশ করেছেন তা খতিয়ে দেখা।
মোদ্দাকথা, করোনার প্রকোপ ও সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। নিয়ম মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত জনগণের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা বেশ জোরালো। এটা ভাঙতে হবে। মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, টিকা নেয়া, উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ও আইসোলেশনে থাকা হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূলমন্ত্র।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com