দেখা হয়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে
দেখা হয়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে - ছবি সংগৃহীত
নীল আকাশের নিচে প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে, নীল রঙের পানিতে, সোনালি রঙের চুল, নীল রংয়ের চোখ, রোদের ঝলকে, পলক ফেলতে, দেখা মেলে তার আমার সাথে।
সে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, হাই, আর ইউ ফ্রম ইন্ডিয়া?
নো, ফ্রম বাংলাদেশ। ওহ! অ্যান্ড ইউ?
আই এম ফ্রম হনুলুলু, হাওয়াই। মাই নেইম ইজ পিটারশন, এরিকা পিটারশন।
আই এম মৃধা, রহমান মৃধা।
ব্যবসা-সংক্রান্ত ব্যাপারে এসেছ এখানে? না, FDA (food and drug administration) conference-এ।
তুমি? হানিমুনে এসেছি।
কার হানিমুন, তোমার?
না আমার বান্ধবীর।
বাহ! মজার ব্যপার তো?
মানে?
না সাধারণত হানিমুনে স্বামী-স্ত্রী আসে জানতাম, কিন্তু বান্ধবীও আসে তা জানতাম না। তা কী করা হয় হনুলুলুতে?
ফটো মডেল।
বেশ, তবে তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি দেখতে হাওয়াইয়ান।
না আমি জন্মসূত্রে সুইডিশ।
হঠাৎ ইংরেজি ছেড়ে সুইডিশে কথা বলতে শুরু করলাম।
এরিকা এতক্ষণ যাই ভাবুক না কেন এবার সে মুগ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশী, এসেছে FDA conference-এ, অথচ হড় হড় করে সুইডিশ বলছে! কিউরিয়াস আমার থেকে সে বেশি বলে মনে হচ্ছে। এদিকে গল্প জমেছে ভালোই। হঠাৎ ইচ্ছে করে চলে যাবার ভান করতেই বলে, হেই যেও না প্লিজ। আমি বললাম তাড়া আছে, তবে বিকেল ৬টার পর ফ্রি যদি সময় থাকে আসতে পার। আমি আছি হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে।
কেন যেন মনে হয়েছিল এরিকা আসবে হোটেলে দেখা করতে। সন্ধ্যা সাতটা বাজতেই রিসেপশন থেকে ফোন এসেছে রুমে। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই জানলাম আমার গেস্ট এসেছে হোটেলের লবিতে, অপেক্ষা করছে। বললাম, ওকে আমি আসছি।
বুকটা একটু জোর গতিতে ধড়পড় করতে শুরু করল। ঝটপট করে নিচে নেমে এলাম। এরিকার গায়ে নীল রঙের পোশাক, মানিয়েছে বেশ। বললাম এসেছ তাহলে, ও বললো হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করলাম ডিনার করেছ? বলল, না। তাহলে চলো যাই বাইরে। রিসেপশনে বললাম, একটি ভালো রেস্টুরেন্টে আমাদেরকে ড্রাইভার যেন নিয়ে যায়। এরিকা বলল, চলো না ইতালিয়ান রেস্টুরেন্ট যাই, বললাম ঠিক আছে।
রাতের ডিনার প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে, এক সুইডিশ রমণীর সঙ্গে, আজ থেকে ২৫ বছর আগের কথা। ওই দিন হয়েছিল নানা কথা। এরিকা সুইডেনের এনসোপিংয়ের মেয়ে। মডেলিং করতে এসেছে হনুলুলুতে। থাকবে আরো এক বছর, তারপর ফিরবে ইউরোপে।
রাতের ডিনার শেষে প্রশান্ত মহাসাগরের পাড় দিয়ে জোছনা রাতে হাঁটতে হাঁটতে এরিকা হোটেলে এসে তাকে রেখে ফিরে এলাম আমার হোটেলে।
ঘুমোতে যাব ঠিক তেমন সময় ফোন বেজে উঠল।
হ্যালো এরিকা বলছি। কাল সন্ধ্যায় তুমি কি ফ্রি?
বললাম কেন? মেক্সিকোর তিজুয়ানায় ডিনার করতে যাব আমার বান্ধবীদের নিয়ে, তুমি যাবে কি আমাদের সঙ্গে? (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিয়ের কয়েক দিন আগে মেয়েরা মিলে কন্যাকে নিয়ে আর ছেলেরা বরকে নিয়ে হইহুল্লোর মধ্য দিয়ে আনন্দ ফুর্তি করে থাকে। এমনটি সুইডেনেও হয়। হেলেনা তার বান্ধবীদের সঙ্গে এসেছে কন্যাকে নিয়ে আনন্দ ফুর্তি করতে)। যাই হোক রাজি হয়ে গেলাম।
তিজুয়ানা, সান ডিয়েগো থেকে ট্রেনে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। এরিকার তিন বান্ধবী, সাথে আমি। সবার সাথে পরিচিত হতে সময় পার হয়ে গেল আর ঢুকে গেলাম মেক্সিকোতে। ডিনারে বসেছি, এরিকা আমার পাশে বসেছে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ বেশ ফ্রি ও ফ্রেন্ডলি।
ভালোই লাগছে সঙ্গীদের সঙ্গ। আমি একা সান ডিয়েগোতে, কোর্স শেষে বিকেল এবং সন্ধ্যায় সাথী হারা নই, বেশ চলছে মন্দ নয়।
ডিনার শেষে ফেরার পথে হঠাৎ সুইডেন থেকে ফোন এসেছে। আমাদের কথাপোকথন শুনতে পেরেছে এরিকা, দেখে মনে হলো একটি ফুলন্ত বেলুন হঠাৎ চুপসে গেল! কিছুক্ষণ চুপচাপ হয়ে গেলাম, ট্রেনে করে ফিরতে পথে এরিকা জিজ্ঞেস করল, মারিয়া কে? বললাম, মারিয়া আমার ফিয়াসেঁ। সে ফোন করেছিল জানতে, কী করছি, কেমন আছি, কোথায় আছি এবং কার সঙ্গে আছি ইত্যাদি। আমি তোমার কথা বলেছি তাকে। ওহ, থ্যাংক ইউ বলে এরিকা চুপ মেরে গেল।
সকালে ফিরতে হবে লস অ্যাঞ্জেলসে, পরে ফ্লাই বাক টু স্টকহোম। বিদায়ে জড়িয়ে ধরল এরিকা, মনে হলো অনেক দিনের চেনা। এরিকার বুকের ভিতর ধড়পড় শব্দ মনে করিয়ে দিলো Michael Buble-এর to be loved গানের কিছু কথা; “ Close your eyes, give me your hand, darling, Do you feel my heart beating, Do you understand? Do you feel the same…”!
লেখক : সুইডেনপ্রবাসী, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার rahman.mridha@gmail.com