সপ্তম নৌবহরের উপস্থিতি : ভারত নীতি পাল্টাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!
সপ্তম নৌবহর - ছবি সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়াকে দিল্লির চোখে দেখার যে মার্কিন নীতি সম্ভবত এর অবসান ঘটেছে। ক’দিন আগেও কোয়াড অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একসাথে শীর্ষ সম্মেলন করেছে ভারত। সেই ভারতের দাবি করা একান্ত অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমায় দিল্লিকে অবহিত করা ছাড়াই সপ্তম নৌবহরের যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছে পেন্টাগন। এতে ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে এ খবর ও বিশ্লেষণ ছাপা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন নৌবাহিনী দিল্লির বিনা সম্মতিতে লাক্ষাদ্বীপের কাছে যুদ্ধজাহাজের মহড়া পরিচালনা করায় ভারত ওয়াশিংটনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দিল্লি জানিয়েছে, বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়াই একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) সামরিক মহড়া না চালানোর বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থান ওয়াশিংটনকে মেনে চলতে হবে। কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে মার্কিন সরকারকে এ কথা জানানো হয়েছে।
কোয়াড গ্রুপের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড জে অস্টিনের নয়াদিল্লি সফরের কয়েক দিন পর মার্কিন সপ্তম নৌবহর ঘোষণা করে যে, তার একটি রণতরী ইউএসএস জন পল জোন্স (ডিডিজি ৫৩) নেভিগেশন ফ্রিডম অভিযান পরিচালনা করেছে। লাক্ষাদ্বীপপুঞ্জের পশ্চিমের এই সমুদ্রাঞ্চলকে ভারত নিজের ইইজেড’র অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। আর আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ভারতের পূর্ব সম্মতির জন্য অনুরোধ না করে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের ভারতের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রবেশ চরম আপত্তিকর হিসেবে বিবেচনা করছে নয়াদিল্লি।
ভারতের গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুসারে, এ ঘটনা দুই দেশের সশস্ত্রবাহিনী, বিশেষত তাদের নৌবাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুসারে, ‘ইউএসএস জন পল জোন্সকে পারস্য উপসাগর থেকে মালাক্কা সমুদ্রের দিকে যাওয়ার বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসঙ্ঘের কনভেনশন নিয়ে ভারতের বিবৃত অবস্থান হলো কনভেনশনটি অন্য দেশগুলোকে এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মহাদেশীয় শেল্ফ এ সংশ্লিষ্ট উপকূলীয় দেশের সম্মতি ছাড়াই অস্ত্র বা বিস্ফোরক ব্যবহার করে এমন সামরিক মহড়া বা এ ধরনের কিছু পরিচালনার অনুমতি দেয় না।’
গত ৭ এপ্রিল, আরব সাগর থেকে এক বিবৃতি দেয় মার্কিন সপ্তম নৌবহর। এতে বলা হয়েছে, ‘ইউএসএস জন পল জোনস (ডিডিজি) ভারতের লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ১৩০ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে, ভারতের দাবিকৃত একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভ্যন্তরে ভারতের পূর্বানুমতি চাওয়া ছাড়াই প্রবেশের মাধ্যমে নৌ-চলাচল অধিকার এবং স্বাধীনতার বিষয়টি উচ্চকিত করেছে।’ এতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বা মহাদেশীয় শেল্ফে সামরিক মহড়া বা কৌশল চালানোর জন্য পূর্বের সম্মতি প্রয়োজন বলে যা বলা হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ বস্তুত নৌ যান পরিচালনার স্বাধীনতার কথা উল্লেখ ভারতের অতিরিক্ত সামুদ্রিক দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত সমুদ্রের অধিকার, স্বাধীনতা এবং আইনি ব্যবহারকে সমর্থন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পেন্টাগনের বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন বাহিনী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিয়মিত ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সব কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ডিজাইন করা হয়েছে এবং প্রদর্শিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন যেখানেই অনুমতি দেয়; যুক্তরাষ্ট্র সেখানে যাবে, চলাচল করবে এবং জাহাজ পরিচালনা করবে। আমরা রুটিন ভিত্তিতে এবং নিয়মিত ফ্রিডম অফ নেভিগেশন অপারেশনস পরিচালনা করি, যেমনটি আমরা অতীতেও করেছি। ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখব। এফএনওপি কোনো একটি দেশ সম্পর্কিত বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার বিষয়ও নয়।’
ভারতীয় আইন-টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস, কন্টিনেন্টাল শেল্ফ, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন অ্যান্ড আদার্স মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট, ১৯৭৬ অনুসারে, ‘সব বিদেশী জাহাজ (সাবমেরিন এবং অন্য ডুবো যানবাহনসহ যুদ্ধজাহাজ ছাড়া) দেশটির জলসীমার মধ্য দিয়ে নির্দোষ পথের অধিকার উপভোগ করবে’ এবং এ ধরনের যাতায়াত নিরীহ বলে গণ্য হবে ‘যতক্ষণ না এটি ভারতের শান্তি, সুশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তায় ক্ষতিকর না হবে।’ এ আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সাবমেরিন এবং অন্যান্য পানির তলদেশের যানবাহনসহ বিদেশী যুদ্ধজাহাজগুলো অভ্যন্তরীণ পানিতে প্রবেশ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারকে পূর্ব নোটিশ দেয়ার পরে।’
লাক্ষাদ্বীপের কাছে ইউএস নেভির ফ্রিডম অফ নেভিগেশন অপারেশন একেবারেই নজিরবিহীন এমন নয়। তবে এ ধরনের যুদ্ধজাহাজের অভিযানের জনসমক্ষে ঘোষণায় আপত্তি উঠেছে। এটি এমন এক সময় এসেছে যখন ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়ছে। তাদের নৌবাহিনী জাপান, ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নৌবাহিনীর সাথে ৫ এপ্রিল এবং ৭ এপ্রিলের মধ্যে লা পেরোস অনুশীলনে একটি যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ফরাসি নৌবাহিনী এর নেতৃত্বে ছিল। গত মাসে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অস্টিন নয়াদিল্লিকে বাইডেন প্রশাসনের ‘উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে জোরদার করার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছিলেন।
ভারত ও আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে সাথে নিয়ে কোয়াড গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। ১৩ মার্চের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে কোয়াড নেতারা ‘উন্মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার’ এবং ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বাস্থ্যকর, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বন্ধনে আবদ্ধ এবং জবরদস্তি থেকে বিচ্ছিন্ন’ থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। ২০০৭ সালের পর কোয়াডের সদস্যরা প্রথমবারের মতো মালাবার বহুপক্ষীয় যুদ্ধমহড়ায় অংশ নেয়।
সপ্তম নৌবহরের বিবৃতির পর সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ একটি টুইটার পোস্টে বলেছেন : ‘এখানে কঠিন বাস্তবতাই দেখা যাচ্ছে। ১৯৯৫ সালে ভারত সমুদ্রবিষয়ক জাতিসঙ্ঘ আইন অনুমোদনের পরে যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ আইন লঙ্ঘন করে ভারতীয় ইইজেডে এফওএনর রণতরি মিশন চালানো যথেষ্ট খারাপ দৃষ্টান্ত। এরপর তারা এর আবার প্রচারও করছে? আমেরিকান নেভি দয়া করে আইএফএফ (শত্রু-মিত্র চিহ্নিতকরণ) চালু করুন!’ অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ এই পদক্ষেপের পিছনের অভিপ্রায় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে ইউএসএন জাহাজ চালানোর অর্থ চীনকে এই বার্তা দেয়া যে কৃত্রিম এসসিএস দ্বীপপুঞ্জের আশপাশের ইইজেড একটি ‘অতিরিক্ত সামুদ্রিক দাবি’। তবে ভারতের জন্য সপ্তম নৌবহরের যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর বার্তাটি কী?
দ্য ওয়্যারে মনোজ জোশীর ২০১৯ সালের এক নিবন্ধ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে ভারতের ইইজেডে গোয়েন্দা ও জরিপ মিশন চালিয়েছে। এ নিয়ে আগেও নয়াদিল্লি থেকে প্রতিবাদ জানানো হতো। যদিও এই বিপদের সময়ে, সরকার ও নৌবাহিনী ইইজেডে মার্কিন অভিযানের বিষয়ে নীরব থাকতে চেয়েছিল। ঠিক যেভাবে তারা চীনকে নিয়ে তাদের ‘বিজয়’ এর ভাব দেখায়। বর্তমান উন্নয়নের অস্বাভাবিক দিকটি হলো এই প্রথমবারের মতো মার্কিন নৌবাহিনী প্রকাশ্যে বলেছে যে, কোনো সামরিক জাহাজ ভারতের ইইজেডে প্রবেশ করেছে।
দি ওয়্যার পত্রিকা বিশ্বব্যাপী মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেছে, গত মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউএস নেভি অক্টোবর ২০১৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ভারতের ইইজেডে কোনো এফওএন অপারেশন পরিচালনা করেনি। তবে ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে একটি এফওএন অপারেশন পরিচালিত হয়েছিল। এতে মার্কিন সামরিক বাহিনী ভারতের ‘একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে’ প্রবেশে যে প্রয়োজনীয় সম্মতি লাগে তা না নিয়ে অস্ত্র, বিস্ফোরক ব্যবহারপূর্ণ সামরিক মহড়া চালানোর মাধ্যমে মূলত দিল্লির ‘অতিরিক্ত সামুদ্রিক দাবির’ প্রতি চ্যালেঞ্জ করেছিল।
২০১৮ বাদে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের পূর্ববর্তী সব প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্কিন সামরিক বাহিনী এক বছরের মধ্যে ভারতের ইইজেডে পূর্ব সম্মতি ছাড়াই একাধিক বার অনুপ্রবেশ করেছিল। এগুলো বার্ষিক নথিভুক্ত করার সময় ভারতের সাথে সম্পর্কিত এসব অপারেশনের কথা প্রচার করা হয়নি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যে দাবি করা হয়েছে ‘ভারতের পূর্ব সম্মতির প্রয়োজন ফ্রিডম অব নেভিগেশন অপারেশন্স (এফওএনওপি) আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’- এটি ভারতের সমুদ্রসীমা দাবির জন্য বিপজ্জনক। এমনকি আমেরিকান প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এও উল্লেখ করা হয় যে, ‘আমরা এটি আগেও করেছি। সামনেও করে যাবো। এফওএনওপি একটি দেশের জন্য নয় আর এটি রাজনৈতিক বিবৃতি দেয়ার বিষয়ও নয়।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যে ভারতের পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করা হচ্ছে সেটি লাক্ষাদ্বীপ ঘিরে থাকা ভারতের সোজা বেসলাইনগুলোর পক্ষে বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ভারত ২০০৯ সালে গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বেসলাইন প্রকাশ করে, যার মধ্যে লাক্ষাদ্বীপের চার পাশে সোজা বেসলাইনগুলো সমুদ্রের একটি নতুন অঞ্চলকে দেশের জলসীমার অংশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এতে লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের মধ্য দিয়ে যাওয়া কৌশলগত নয়-ডিগ্রি চ্যানেল এবং এডেন উপসাগরকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযুক্তকারী আন্তর্জাতিক শিপিং লেনের অংশ ভারতীয় জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সমুদ্র আইন অনুসারে, ভারতের মতো মহাদেশীয় দেশ নয়, শুধু ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলো দ্বীপমালাগুলো ঘেরাও করতে সরল বেসলাইন ব্যবহার করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ২০০৯ গেজেট বিজ্ঞপ্তির বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় না। তবে লাক্ষাদ্বীপের আশেপাশে সোজা বেসলাইন তৈরির ব্যাপারে বিশেষভাবে কখনো প্রতিবাদও করেনি। তবে, ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং দক্ষিণ চীন সাগরে নেভিগেশন টহল মুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা সরাসরি বেসলাইন দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
মজার বিষয় হচ্ছে, আমেরিকা ভারতকে সব সময় তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছে। দুই দেশই ‘কোয়াড’ জোটের অংশীদার। বেশির ভাগ দ্বিপক্ষীয় নথিতে, ভারত ও আমেরিকা নিয়মিতভাবে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘নৌচালনার সুরক্ষা এবং স্বাধীনতার জন্য সমর্থন, ওভার ফ্লাইট এবং সমুদ্রের অন্যান্য আইনি ব্যবহারের’ দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করার কথা বলে আসছিল। এটি সাধারণভাবে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা সম্প্রসারণবাদী তৎপরতার প্রতি ইঙ্গিতবহ ছিল। এখন ভারতের দাবি করা সমুদ্রসীমাও এর মধ্যে চলে এলো।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বাদ দিয়ে বাকি দেশগুলোর ব্যাপারে আমেরিকান সম্পর্ক ভারতের স্বার্থ ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রভাবিত বলে মনে করা হতো। ডোনাল্ট ট্রাম্পের প্রশাসন পর্যন্ত সেটি জোরালোভাবে দেখা যাচ্ছিল। ভারতের দাবি করা অঞ্চলে সপ্তম নৌবহরের রণতরি পাঠানো এবং সেটি ঘোষণা দিয়ে জানানোর ঘটনায় এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন পররাষ্ট্র কৌশল গ্রহণের ইঙ্গিত বলে মনে হচ্ছে। আফ-পাক ছাড়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সাথে সমঝোতা মানে আমেরিকাকে পক্ষে পাওয়ার যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটি সম্ভবত আর কাজ করবে না। বাংলাদেশ নেপাল শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপের ব্যাপারেও বিষয়টি সত্য বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
ভারতের নীতি প্রণেতারা সম্ভবত বিষয়টি অনুমান করে চীনের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দিকে আবার এগোতে শুরু করেছেন। চীন রাশিয়া সংশ্লিষ্ট ব্রিকস এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বিষয়ে এতদিন দিল্লিকে অনেকখানি নিষ্পৃহ মনে হতো। এখন ভারত ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ হচ্ছে। সীমান্তের উত্তেজনাকর অবস্থাকে এক পাশে সরিয়ে বিপুল অঙ্কের চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানাচ্ছে। চীনের সাথে বাণিজ্যের ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থান থেকেও সরে আসতে শুরু করেছে। এমনকি পাকিস্তানের সাথেও উত্তেজনা প্রশমনে উদ্যোগ আয়োজন চালাচ্ছে দিল্লি।
লাক্ষাদ্বীপে সপ্তম নৌ বহর আসার যে ঘটনা সেটি বড় একটি মেরুকরণ ও নীতির পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত বলেই মনে হচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই প্রতিবেশী দেশেও পড়তে পারে।
mrkmmb@gmail.com