পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন : সবার নজর যে দিকে
অমিত শাহ ও মমতা ব্যানার্জি - ছবি : সংগৃহীত
শনিবার পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থ দফার ভোট। অনেক তারকা, ঝানু রাজনীতিক, খেলোয়াড়, দলবদলুদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে এই দফায়।
এক কথায় জমজমাট পর্ব। কারণ, এদিনই ভাগ্য নির্ধারণ হবে বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো তারকা থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা প্রার্থীদের। হবে পায়েল সরকার, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, যশ দাশগুপ্ত, লাভলি মৈত্র, কাঞ্চন মল্লিক, অঞ্জনা বসুর মতো তারকা প্রার্থীদের। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, আব্দুল মান্নান, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীর মতো ঝানু রাজনীতিকরা জিতবেন কি না তাও ঠিক হবে এই পর্বে। রাজনীতিতে নাম লেখানো সাবেক ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি, সাবেক ফুটবলার বিদেশ বসু সফল হবেন কি না, তাও ঠিক হবে শনিবার। আর দল বদল করে বিজেপি-তে যাওয়া সাবেক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে বৈশালী ডালমিয়ার কেন্দ্রে ভোটও শনিবার। ফলে সত্যিই নজরকাড়া পর্ব।
আরো দুইটি কারণে এই পর্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দুই পর্বে ভোট হয়েছিল মূলত বিজেপি যে সব জায়গায় শক্তিশালী সেখানে। তৃতীয় পর্বের ভোট হয় তৃণমূলের শক্ত জমিতে। এবার বিজেপি ও তৃণমূল দুই তরফেরই শক্তিশালী এলাকায় ভোট হবে। পাশাপাশি বাম ও কংগ্রেসের কয়েকজন প্রধান নেতার ভাগ্যপরীক্ষা হবে। সে জন্যই চতুর্থ পর্বের ভোট বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। তাছাড়া চার পর্বের ভোট হওয়া মানে আট পর্বের ভোটের মাঝামাঝি পৌঁছে যাওয়া।
চতুর্থ দফায় মোট ৪৪টি কেন্দ্রে ভোট হবে। প্রথম দুই দফায় হয়েছিল ৩০টি করে আসনে ভোট। তৃতীয় দফায় ৩১টি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এবারই সবচেয়ে বেশি আসনে ভোট হবে। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতে তৃণমূল ও বামেদের প্রভাব আছে। বিজেপি সেই প্রভাব ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছে। আর উত্তরবঙ্গের দুই জেলা কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে ভোট। সেখানে বিজেপি-র প্রভাব বেশি।
তবে এই পর্বে সব চেয়ে চিত্তাকর্ষক লড়াই হবে টালিগঞ্জে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয়ের। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে চালু কথাই হলো, অরূপ ও তার ভাই স্বরূপ টলিউড শাসন করেন। বাবুলকে দাঁড় করিয়ে সেই শাসন ভাঙতে চাইছে বিজেপি। বাবুলের হয়ে মিঠুন চক্রবর্তী রোড শো করেছেন। অরূপের হয়ে করেছেন জয়া বচ্চন। চতুর্থ পর্বের হেভিওয়েট লড়াইয়ের তালিকায় একেবারে উপরে থাকবে এই কেন্দ্রের নাম।
অবশ্য বেহালা পশ্চিমের লড়াইও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুখ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন নায়িকা শ্রাবন্তী। তার ক্যারিশমা না কি পার্থের মতো ঝানু রাজনীতিকের জনপ্রিয়তার জয় হয়, তা জানতে কৌতূহল চরমে। বেহালা পূর্বেও সাবেক মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। শোভন এখন বন্ধু বৈশাখীর জন্য রত্নাকে ছেড়েছেন। তৃণমূলও। আর রত্নার বিরুদ্ধে বিজেপি-র প্রার্থী টলি-নায়িকা পায়েল সরকার। তারকা বনাম রাজনীতিকের আরেকটি লড়াই হচ্ছে হুগলির চণ্ডীতলায়। সেখানে সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি-র যশ দাশগুপ্ত। গায়ক ও মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের কেন্দ্রেও ভোট হবে শনিবার।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং বিদায়ী বিধানসভার বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান তার চাঁপাদানি কেন্দ্র থেকেই লড়ছেন। সুজনও তার গতবারের জেতা যাদবপুর আসনে প্রার্থী। এবারও তারা নিজেদের কেন্দ্রে জিততে পারেন কি না, সেটা দেখার বিষয়।
গতবার সাবেক ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লা তৃণমূলের হয়ে জিতেছিলেন, মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন আগে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন। এবার এসেছেন সাবেক ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি ও সাবেক ফুটবলার বিদেশ বসু। দুজনেই তৃণমূলের প্রার্থী। বিদেশ ছিলেন মোহনবাগানের ফুটবলার। হাওড়া মোহনবাগানের সমর্থকে ভর্তি। বিদেশ হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে লড়ছেন।
তবে প্রার্থীর জন্য নয়, কেন্দ্র হিসাবে এই পর্বে মানুষের নজর যেতে বাধ্য ভাঙড়ের দিকে। নানা কারণে অতীতে বার বার অশান্তির জেরে খবর হওয়া এই কেন্দ্রে এবার তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন রেজাউল করিম। অতীতে তিনি সিপিএমের হয়ে লড়েছিলেন। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা আরাবুল ইসলামের মতো কর্মীকে বাদ দিয়ে মমতা এখানে প্রার্থী করেছেন রেজাউলকে। আর তার সঙ্গে লড়াইটা হচ্ছে মূলত আব্বাস সিদ্দিকির নবগঠিত দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফের। গত তিন পর্বের সঙ্গে এই দিক থেকেও ব্যতিক্রমী চতুর্থ পর্ব। আইএসএফ বিভিন্ন কেন্দ্রে তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। সেটা করলে তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তির হার কমে যাবে। ভাঙড়ের ভোট সেদিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যেই চতুর্থ পর্বের ভোটে নানা ধরনের লড়াই দেখা যাবে, যা অনেক অঙ্ক বদলে দিতে পারে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে