ভোটরঙ্গ
ভোটরঙ্গ - ছবি : সংগৃহীত
আধুনিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মাঝে একটি। তাই নির্বাচন আজকের রাজনীতিকে এমনভাবে প্রভাবিত করে। একই কারণে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টার অন্ত নেই। স্বভাবতই কত সহজে এই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব তার অনুসন্ধানেরও শেষ নেই। অবশেষে এই অনুসন্ধানের শেষে এর নিয়ন্ত্রণের দুটি পন্থা সবাই অবলম্বনের চেষ্টা করে। অবশ্য ব্যতিক্রম থাকবেই। এ দুটি হলো ক্ষমতা এবং অর্থ। দুটি বিষয়েরই আবার ব্যাপক এবং বিস্তৃত অর্থ আছে। যেমন ক্ষমতা। ক্ষমতা মানেই কায়িক শক্তি নয়। ক্ষমতা হতে পারে কোনো শক্তি ব্যবহার না করেই অন্যকে আকৃষ্ট বা অনুরাগী বানানো সম্ভব। আধুনিক রাজনীতিতে এই প্রক্রিয়ার ব্যবহার করার চেষ্টাই সবচেয়ে বেশি। সেজন্য অনুসন্ধান, আলোচনা এবং সংগঠনের জন্ম নিচ্ছে।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে প্রাচীন গ্রিসেই প্রথম গণতন্ত্রের সূত্রপাত হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০৮ সালে যে নির্বাচনপদ্ধতির উল্লেখ পাওয়া যায়, তা সত্যিই আকর্ষণীয়। ভোটারদের ভাঙা মাটির ওপর যে প্রার্থীকে তারা আগামী ১০ বছরের জন্য নির্বাচিত করতে চায় তার নাম লিখে জমা দিত। যদি এই ভোটের সংখ্যা ছয় হাজারের কম হতো তাহলে তাকে নির্বাচিতদের মাঝে রাখা হতো। অর্থাৎ ‘না’ ভোট দিয়ে নির্বাচনের ইতিহাস। এর একটি ভালো অর্থও আছে। তা হলো, সবারই নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার আছে।
তবে এখন যদি এই পদ্ধতি চালু করা হয়, তবে কী হবে? বলা মুশকিল। তবে এটা সত্য, একটি নতুন চিত্র সামনে আসবে। ভেনিসেই সর্বপ্রথম ৪০ সদস্যের ‘গ্রেট কাউন্সিল’ নির্বাচন করে হ্যাঁ ভোটের মাধ্যমে। নির্বাচনপদ্ধতি বারবার পরিবর্তিত হয়েছে এর উদ্ভবের পর থেকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৭৬ সালে সংবিধান জারির পর থেকে, এ পদ্ধতির নানা সংশোধন করা হয়েছে। একই ধারায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেও পরিবর্তন ঘটেছে। মার্কিন সংবিধানে বলা হয়েছিল জন্মসূত্রেই সব মানুষ সমান। কিন্তু এর পরপরই দেখা গেল সবাই সমান নয় এবং এই ধারা এখনো চলছে। প্রথম দিকে আমেরিকার ২১ বছরের বেশি বয়সী জমির অধিকারীরাই ভোট দিতে পারত। সেখানে কালো-বাদামি চামড়ার মানুষের কোনো ভোটাধিকার ছিল না। কালো-বাদামিরা ভোটাধিকার পেল গৃহযুদ্ধের পর (১৮৬০-এর দিকে) যখন ক্রীতদাস প্রথা সীমিত করা হয়।
কিন্তু এই কালো-বাদামিদের ভোটাধিকার নানা বন্ধনে আবৃত ছিল। আসলে সত্যিকারের ভোটের অধিকার আসে ১৯৬০-এর ‘ভোটিং রাইট অ্যাক্ট’ পাসের পর। অর্থাৎ শত বছরের পর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারের বয়স নিয়ে আন্দোলন শুরু হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমিতে। তখন ১৮ বছর হলেই জোর করে সামরিক বাহিনীতে ভর্তি করানো শুরু হয়। তখন দাবি ওঠে, যদি যুদ্ধের জন্য ১৮ বছরকে ধরা যায়, তবে কেন সে ভোটার হবে না। তখন ভোটারের বয়সসীমা ১৮ থেকে শুরু হয়।
আসলে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলো তা অনুসরণ করেছে। নারীদের ভোটাধিকার এসেছে সবার পরে মার্কিন সংবিধানের ১৮তম সংশোধনের মাধ্যমে। বিশ্বের সর্বত্রই নারীর ভোটের অধিকার পরে এসেছে। তবে এই উপমহাদেশে যখন ভোটের প্রচলন হয়, তখন নারী-পুরুষের সমান ভোটের অধিকার একবারেই আসে।
ভোটের পদ্ধতি নানা রকমের। এর মাঝে পার্লামেন্ট পদ্ধতি ও প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি বেশি প্রচলিত। পার্লামেন্ট পদ্ধতি জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হওয়ার কারণ তারা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে। যদিও এই ধারণা এখন বাস্তবতার সাথে মিল কম। কারণ ভোটের পদ্ধতিসহ সব নির্বাচন কর্মকাণ্ডকেই প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রণের নানা উপায় বেরিয়ে গেছে। এই পদ্ধতিতে যিনি রাষ্ট্রপ্রধান হন, তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন। শুধু প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। আবার পার্লামেন্ট পদ্ধতির একটি দুর্বলতা হলো, জনগণ নির্বাচন করে প্রার্থীদের মধ্য থেকে। তারা ভোট দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করে না। ফলে তাদের সামনে কেবল ভোট দেয়ার অধিকারটুকু থাকে। তাদের ইচ্ছেমতো প্রার্থী নির্বাচন নয়। তবে একটি সুবিধা হলো বহুদল এমন নির্বাচনে প্রার্থী দেয়- তাদের কেউ কেউ হয়তো জনগণের ইচ্ছের প্রার্থীর মতো হতে পারে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ দেশে এখন পার্লামেন্টারি সরকার কায়েম হয়েছে।
আরেকটি পদ্ধতি হলো ‘ইনস্টান্ট রানঅফ ভোটিং’ (আইআরভি)। এটা দুই দলবিশিষ্ট সরকার পদ্ধতিতে চালু। দুই দলের বাইরে কেউ প্রার্থী দিলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহার বহুল। এখানে ভোটার ইচ্ছে করলে তিনটি মনোনয়ন দিতে পারেন। গণনায় প্রথম পছন্দটি হেরে গেলে, এই ভোটগুলো দ্বিতীয় পছন্দে স্থানান্তর করতে পারে। এই আইআরভি পদ্ধতি অনেক দেশে প্রচলিত। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্টেটেও চালু আছে।
তবে ‘ফিউশন ভোটিং’ বলে পরিচিত পদ্ধতিটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এ পদ্ধতিতে কোনো প্রার্থী ইচ্ছে করলে দুই-এর অধিক দলের হয়ে প্রার্থী হতে পারে। তবে তৃতীয় দলের উপস্থিতি এই পদ্ধতিতে উৎসাহিত করা হয়।
মধ্য যুগে নির্বাচনের উদ্ভব হয় রাজা বা চিফ ঠিক করতে। এটা গ্রিসের রোমে প্রচলিত ছিল। যেমন ‘হলি রোমান এমপারর’ নির্বাচিত হতেন। তেমনিভাবে পোপেরও নির্বাচন হতো। আবার বৈদিক যুগে ভারতে রাজাও এভাবে নির্বাচিত হতেন। তবে তারা নির্বাচিত হতেন শুধু ‘জমির মালিকানা আছে’ এমন ভোটারদের দিয়ে। শ্রেণীবিভক্ত এই সময়ে শুধু ক্ষত্রিয়রাই রাজা বা প্রধান হতে পারত। পাল রাজারা এভাবে নির্বাচিত হয়েছিল।
তখন ভোটের পদ্ধতিগুলোও ছিল মজার। যেমন সঙ্গম যুগে ভোটাররা মাটির পাত্রে নাম লিখে দড়িতে বেঁধে দিত। পরে সেগুলো গণনা করে প্রার্থী নির্বাচিত হতো। আবার বাংলায় পাল রাজারা ভূমিপ্রধানদের সম্মতিতে রাজা হতেন। আজকের তামিলনাড়ুতে চোল রাজা নির্বাচিত হন তালগাছের পাতার ভোটে। পদ্ধতিটি ছিল এই তালপাতায় প্রার্থীর নাম লেখা থাকত। সেগুলো একটি বিরাট পাত্রে রাখা হতো। একটি বালককে বলা হতো সেখান থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাতা উঠাতে। যেমন- পাঁচজন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলে- পাঁচটি পাতা উঠাত। এভাবে গণনা করে যার নাম বেশিবার উঠত সেই নির্বাচিত হতো। ধীরে ধীরে পদ্ধতির পরিবর্তন হতে থাকে এবং ১৭০০ শতাব্দীতে আজকের পদ্ধতি উন্মেষ ঘটে এবং ধীরে পরিবর্তনের পথ ধরে চলতে থাকে।
বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি নির্বাচন এ দেশটির ইতিহাস গড়ে, বিশ্বে এগুলো বিশাল প্রভাব ফেলে। এ নির্বাচনগুলো হলো ১৮০০, ১৮২৮, ১৮৭২, ১৯১২, ১৯২৮, ১৯৪৮ এবং ১৯৬৮ সালের নির্বাচনগুলো। এসব নির্বাচনের মাধ্যমে ভুলগুলো নির্ধারণ হয়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (১৮২৮) জন্ম নেয়, ইলেকটরাল কলেজ পদ্ধতি সৃষ্টি হয় (১৮৭২), নির্বাচনী স্লোগানের জন্ম দেয়, চার দলের নির্বাচন (১৯৪৮) হয়।
মানুষ কেন ভোট দেয়? এর জবাব কঠিন। জবাব অনেক হতে পারে। তবে অনুসন্ধানীরা দেখেছেন, আসলে কারো ভোট একটি নির্বাচনকে নির্ধারণ করে না। তবে তারা ভোট দিতে কেন যায়? যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা এর ব্যাপক আলোচনা করে মোটামুটি তিনটি কারণ নির্ধারণ করেছেন। ১. নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মনে করে তাদের ভালো লাগে, ২. এটা একটা সামাজিক নীতি ও ৩. ভোট দিতে ভালো লাগে। দেখা গেছে, শিক্ষিতরাই বেশি ভোট দেয়।
ভোটের ইতিহাস সত্যই চমৎকার। প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেয়ার অধিকারী ছিল শুধু সাদাদের। পরে শুধু করদাতারা ভোট দেয়ার অধিকার পায়। এর সাথে তাদের ধার্মিক হতে হতো। মাত্র ছ’টি স্টেটে (৫০টির মধ্যে) ম্যারিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, নিউ ইয়র্ক, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া এবং ভারমন্ট কালো আফ্রিকানদের অধিকার দেয়। তবে মার্কিন সংবিধান ভোট দেয়ার অধিকারের বিষয়টি স্টেটদের কাছে রেখে দেয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদেই এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। তখন কণ্ঠভোটের পরিবর্তে লিখিত ব্যালটে ভোটের পদ্ধতিটি চালু হয়। ১৮৩০ সালে ১০টি স্টেট সাবালকদের ভোটাধিকার দেয়। তবে আফ্রিকানদের ভোটাধিকার আসতে আরো সময় লাগে। ১৮২৬ সালে মাত্র ১৬ জন আফ্রিকান (নিউ ইয়র্কের) ভোটের অধিকার পায়।
ভোট নিয়ে সংঘর্ষ এবং হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড যেন একটি অঙ্গাঙ্গী ব্যাপার। সারা বিশ্বের চিত্র একই। এই কর্মকাণ্ড হয় ভয়ঙ্কর যখন রাষ্ট্র এর ভাগিদার হয়। ক্ষমতাসীন দল যদি মনে করে নিয়ন্ত্রণহীন সুষ্ঠু (ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার) নির্বাচনে তাদের পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তখন তারা প্রকাশ্যে ও পরোক্ষে নানা অজুহাতে সংঘর্ষ ও সঙ্ঘাত সৃষ্টি করে ভীতির রাজ্য কায়েম করে। এর সাথে তারা তৈরি করে নিবর্তনমূলক আইন এবং তার মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রায় সব নির্বাচনে সরব ও সচল দর্শক বলে অনেকেই অভিহিত করেন। অবশ্য এই অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধেও। এটা বাস্তবতা যে, সুপার পাওয়ারগুলো তাদের প্রভাববলয়কে নিশ্চিত রাখতে এই কর্মকাণ্ডটি করে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডভ লেভিন এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘এই দুই শক্তি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) ১৯৪৬ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে বিশ্বের ১১৭টি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে।’ অর্থাৎ প্রতি ৯টি নির্বাচনের একটিতে। এই হস্তক্ষেপ কখনো শক্তি দিয়ে, যেমন ভিয়েতনামে, ইটালিতে রোড আইল্যান্ডে। কাজটি তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ করে। সিআইতে প্রায় ২৫ বছর ধরে যিনি এই কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনার সাথে ছিলেন তিনি হলেন এফ মার্ক ওয়াইট। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ব্যাগভর্তি অর্থ দেই। এটা দিয়ে রাজনীতিবিদেরা প্রচার থেকে শুরু করে সংঘর্ষ-সঙ্কট সৃষ্টি করে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ এবং জয় করে।’ ‘সরকার পরিবর্তনে তারা পারঙ্গম’, তিনি বলেছেন। হন্ডুরাস, ভেনিজুয়েলা, ইউক্রেনসহ বহু নির্বাচনে তাদের প্রত্যক্ষ হাত আছে বলে মন্তব্য করেছেন। কয়েক বছর আগে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে রাশিয়া ও চীন নানা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে বলে প্রচার চালায়। এর জবাবে ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভের ডাইরেক্টর পিটার কর্নব্লাশ বলেছিলেন, ‘যদি চীন এমনটি সত্যিই করে থাকে, এতে নতুনত্ব কোথায়? যুক্তরাষ্ট্র নিজের ওষুধেরই স্বাদ পাচ্ছে।’
এখন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে নির্বাচনে নানাভাবে। তার মাঝে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার প্রধান। এর পক্ষে এবং বিপক্ষে নানা সমালোচনা রয়েছে। পক্ষে দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি দল। আর বিরোধী দল এর বিপক্ষে। বিশ্বের ২০টি দেশে এর পরীক্ষা হয়েছে এবং চালু আছে ১৩টিতে- আংশিকভাবে। অন্যরা দেশের বিভিন্ন অংশে এই ই-ভোটিং পরীক্ষা চালিয়েছে। কেবল ভারত এটাকে ব্যবহার করেছে এবং বিতর্কের মাঝেও এটা চালু রাখতে চায়। দেশটির অনেক নেতা সরকারের বিরুদ্ধে ইভিএম ইঞ্জিনিয়ারিং এর অভিযোগ করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষামূলক নির্বাচনগুলোতে ‘পেপার ট্রেইল’ (অর্থাৎ প্রত্যেক চাপের সাথে একটি কাগজের কপি আসে) ব্যবস্থা করা। তবে এটা ব্যয়সাপেক্ষ এবং খানিকটা শক্তও।
ইভিএম চালুর বিপক্ষে পাঁচটি জোরালো যুক্তি। ১. ইভিএম অতি সহজেই হ্যাক করা যায়, ২. ভোটারের পুরো তথ্য ইভিএমের মাধ্যমে জানা যায়, ৩. ইভিএম দিয়ে নির্বাচনের ফল সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ৪. যেকোনো অফিসার এর ফল নিয়ন্ত্রণ (টেম্পার) করতে পারে, ৫. এর সফটওয়ার পরিবর্তনও সহজ।
এই পদ্ধতি যে দেশগুলো পরিত্যাগ করেছে সেগুলোর মধ্যে আছে জার্মানি। এখানে ্আদালত এটাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে। হল্যান্ড এটা নিষিদ্ধ করেছে। কারণ এতে স্বচ্ছতা নেই। ৫১০ কোটি ডলার ব্যয় করে (অনুসন্ধানে) আয়ারল্যান্ড এটা বন্ধ করেছে। ইটালি দেখেছে ই-ভোটিংয়ের ফল সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে এটা বাদ দেয়া হয়। কারণ এর সাথে কাগজের কোনো হিসাব থাকে না। ভেনিজুয়েলা, ম্যাসিডোনিয়া ও ইউক্রেন এটা নিষিদ্ধ করে যখন তারা ভোট চুরি উদঘাটন করে। ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড কখনো এটা ব্যবহার করেনি। অনেক বছর পরীক্ষা চালানোর পর ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো ‘স্বচ্ছতার অভাব এবং সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ বলে ইভিএমের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি ইভিএমের বিষয়টি দেখা যায়, তবে আমেরিকা এবং ইউরোপ ইভিএম বন্ধ ঘোষণার মূল কারণ জানা যায়। কোনো কোনো সমালোচক এক চমৎকার মন্তব্য করেছেন, ‘ইভিএম এক স্বৈরাচারী হাতিয়ার। অন্যায়কে খুব সহজেই এই যন্ত্র ন্যায়ে পরিণত করতে পারে।’
ইভিএম চালুতে প্রধানত লাভবান হবে এর ভেন্ডাররা। বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচে কয়েক হাজার যন্ত্র কিনতে হবে এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও প্রয়োজন হবে অনেক বড় খরচ। সেজন্য এদের সাথে সংশ্লিষ্টরা এ ব্যবস্থা চাইছে। ভোটার কোন বোতামে চাপ দিলেন এবং ভোট কোথায় গেল, জানার উপায় নেই।