ভারতে করোনার তাণ্ডব
ভারতে করোনার তাণ্ডব - ছবি সংগৃহীত
ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আবার বেশ খারাপ জায়গায় চলে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এক লাখ ২৬ হাজার ৭৮৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এটা একটা রেকর্ড। বিশ্বের মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে ভারতই এখন এক নম্বর। ভারতে এখন ১২ লাখেরও বেশি মানুষের রোজ করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রায় সব রাজ্যেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত মহারাষ্ট্রে। সেখানে রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতি শুক্রবার রাত আটটা থেকে সোমবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত লকডাউনও থাকবে। লখনউ ও দিল্লিতেও রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
ভারতে করোনার প্রকোপ আবার এতটা বেড়ে যাওয়ায় নিউজিল্যান্ড ভারতীয়দের তাদের দেশে ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে।
ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের ৫৬ শতাংশই মহারাষ্ট্রে। তার মধ্যে মহারাষ্ট্রে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন বিতর্ক। এনসিপি সাংসদ ও শরদ পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে অভিযোগ করেছেন, ভ্যাকসিন নেই বলে পুণের একশটি ভ্যাকসিন কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এনডিটিভি-কে জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন যথেষ্ট সংখ্যায় আছে। রাজ্যগুলোর প্রয়োজন ও চাহিদা অনুসারে তাদের কাছে তা পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা এক কোটির কিছু বেশি ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন। তিন শতাংশ ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ৮৫ লাখের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। আর তিনদিনের মতো ভ্যাকসিন স্টকে আছে।
পুণের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে হাসপাতালে করোনা রোগীদের রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সেনাবাহিনী তাদের হাসপাতালের ২০টি বেড সাধারণ মানুষদের চিকিৎসার জন্য দিয়েছে।
ভারতে প্রচুর খেলোয়াড়ও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সাবেক ফুটবলার শ্যাম থাপা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। বেঙ্কালুরু এফসি-র তিনজন ফুটবলারের করোনা হয়েছে। আইপিএলের টিম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ক্রিকেটার দেবদত্ত পাড়িকালের আগেই করোনা হয়েছিল। তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ড্যানিয়েল স্যামস করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের নীতীশ রানা ও সাবেক উইকেটকিপার কিরণ মোরেও করোনায় আক্রান্ত। এছাড়া ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ১০ জন মাঠকর্মী ও বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত ছয়জন ইভেন্ট ম্যানেজারেরও করোনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। তারপর তিনি বলেছেন, যাদের টিকা নেয়ার কোনো অসুবিধা নেই, তারা যেন অতি অবশ্যই এবং তাড়াতাড়ি টিকা নেন।
সরকারের উদ্যোগ
ভারতে করোনার বাড়বাড়ন্ত রুখতে টিকাকরণে জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার সরকারি ও বেসরকারি অফিসেও টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। যেসব অফিসে অন্তত ১০০ জন ৪৫ বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তি রয়েছেন, সেখানে ভ্যাকসিন সেন্টার তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।৪৫ বছর বয়সী ও ৪৫ বছরের বেশি যাদের বয়স, তাদের টিকাকরণ বাড়াতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন অফিসে ভ্যাকসিন সেন্টার তৈরি করতে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
উল্লেখ্য, ৪৫ বছর ও ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, সেই সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের টিকা নেয়ার নির্দেশ ইতিমধ্যেই দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভ্যাকসিন নেয়ার পরও করোনা বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরু থেকেই এ দেশে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রবীণদের টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে। পাশাপাশি, ৪৫ বছর ও তার ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদেরকও টিকা দেয়া হচ্ছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে ও এই সময়